📜 ইসলাম পরিপূর্ণ, কিন্তু দুনিয়ায় এখনো ২/৩ অমুসলিম কেন? — কুরআন ও হাদীসের আলোকে বিশ্লেষণ

Islam is perfect – but why are there so many non-Muslims?


✅ ভূমিকা:

রাসূলুল্লাহ ﷺ বিদায় হজের সময় ঘোষণা করেন:

“আজ আমি তোমাদের দ্বীনকে পরিপূর্ণ করে দিলাম” – এই আয়াতের মাধ্যমে ইসলাম পূর্ণতা অর্জন করল।
অথচ প্রশ্ন জাগে—তাহলে দুনিয়াতে এখনো প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ মানুষ কেন অমুসলিম?
এই লেখায় আমরা কুরআন ও সহীহ হাদীসের আলোকে এর বিশ্লেষণ তুলে ধরছি।


🕌 ইসলাম পরিপূর্ণ হয়েছে — কুরআনের ঘোষণা

📖 আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন:

﴿ ٱلۡيَوۡمَ أَكۡمَلۡتُ لَكُمۡ دِينَكُمۡ وَأَتۡمَمۡتُ عَلَيۡكُمۡ نِعۡمَتِي وَرَضِيتُ لَكُمُ ٱلۡإِسۡلَٰمَ دِينٗا ﴾
“আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পরিপূর্ণ করে দিলাম, তোমাদের প্রতি আমার নেয়ামত সম্পূর্ণ করে দিলাম এবং তোমাদের জন্য ইসলামকে দ্বীন হিসেবে পছন্দ করলাম।”
📚 সূরা আল-মায়িদাহ: ৩

🟩 এই আয়াত নাজিল হয় বিদায় হজে, আর তা ছিল রাসূল ﷺ-এর নবুওয়াত জীবনের শেষ দিকের ঘটনা।


📌 ইসলাম পরিপূর্ণ মানে কী?

ইসলাম পরিপূর্ণ হয়েছে মানে:

  • আকীদা, ইবাদত, শাসনব্যবস্থা, সমাজনীতি, নৈতিকতা—সবকিছুতে পূর্ণ গাইডলাইন এসেছে।

  • অর্থাৎ, মানবজাতির হিদায়াতের জন্য আর কোন কিছুর দরকার নেই।

কিন্তু এর মানে এই নয় যে পৃথিবীর সবাই তখন মুসলিম হয়ে যাবে।


🧭 রাসূল ﷺ-এর দায়িত্ব কী ছিল?

আল্লাহ তাআলা বলেন:

﴿ فَإِنَّمَا عَلَيۡكَ ٱلۡبَلَٰغُ وَعَلَيۡنَا ٱلۡحِسَابُ ﴾
“আপনার কাজ কেবল বার্তা পৌঁছে দেওয়া, আর হিসাব নেওয়া আমাদের কাজ।”
📚 সূরা রা‘দ: ৪০

🔹 রাসূল ﷺ-এর দায়িত্ব ছিল দাওয়াত ও বার্তা পৌঁছে দেওয়া,
🔸 কাউকে মুসলমান বানিয়ে ফেলা নয়।


🗣️ রাসূল ﷺ-এর ভাষ্য বিদায় হজে:

রাসূলুল্লাহ ﷺ সাহাবাদের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন:

« أَلَا هَلْ بَلَّغْتُ؟ » قالوا: نعم، قال: « اللَّهُمَّ فَاشْهَدْ »
“শোনো! আমি কি (বার্তা) পৌঁছে দিয়েছি?”
সাহাবায়ে কেরাম বললেন: “জি হ্যাঁ।”
তিনি বললেন: “হে আল্লাহ! আপনি সাক্ষী থাকুন।”
📚 সহীহ মুসলিম: 1218

✅ রাসূল ﷺ বলেননি “সকলেই মুসলিম হয়ে গেছে”, বরং তিনি নিজ দায়িত্ব শেষ করেছেন, সেটা ঘোষণা করেছেন।


তাহলে কেন এখনো অধিকাংশ মানুষ অমুসলিম?

১. মানুষ ইচ্ছাধীন পরীক্ষায় রয়েছে:

আল্লাহ ইচ্ছা করলেই সবাইকে মুসলিম বানাতে পারতেন। কিন্তু তিনি মানুষকে পরীক্ষা করার জন্য স্বাধীনতা দিয়েছেন:

﴿ وَلَوۡ شَآءَ رَبُّكَ لَءَامَنَ مَن فِي ٱلۡأَرۡضِ كُلُّهُمۡ جَمِيعًا ﴾
“তোমার রব ইচ্ছা করলে পৃথিবীর সব মানুষ একসাথে ঈমান আনত।”
📚 সূরা ইউনুস: ৯৯


২. অধিকাংশ মানুষ ঈমান আনবে না — কুরআনের ভবিষ্যদ্বাণী:

﴿ وَمَآ أَكۡثَرُ ٱلنَّاسِ وَلَوۡ حَرَصۡتَ بِمُؤۡمِنِينَ ﴾
“তুমি যতই আগ্রহ দেখাও না কেন, অধিকাংশ মানুষ ঈমান আনবে না।”
📚 সূরা ইউসুফ: ১০৩

✅ তাই রাসূল ﷺ-এর সময়েও ও পরবর্তীতেও সংখ্যাগরিষ্ঠ অমুসলিম থাকবেই—এটা পূর্বনির্ধারিত।


৩. ইসলামের দাওয়াত প্রসার ঘটবে, কিন্তু সবাই গ্রহণ করবে না

হাদীসে এসেছে:

«لَا تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى يُبْعَثَ الدَّجَّالُ… وَيَبْعَثُ اللَّهُ عِيسَى بْنَ مَرْيَمَ ﷺ… وَلَا يَبْقَى عَلَى ظَهْرِ الْأَرْضِ أَحَدٌ إِلَّا أَسْلَمَ»
“কিয়ামত সংঘটিত হবে না যতক্ষণ না দাজ্জাল আসে, ঈসা (আঃ) অবতরণ করেন, এবং তখন দুনিয়ায় এমন কেউ থাকবে না যে মুসলিম হবে না।”
📚 মুসনাদ আহমদ, হাদীস: 21714 (সহীহ)

🟩 অর্থাৎ, ঈসা (আঃ) আগমনের পর বিশ্বব্যাপী ইসলাম ছড়িয়ে পড়বে। তবে সেটি হবে কিয়ামতের খুব কাছাকাছি সময়।


🔚 উপসংহার:

বিষয় ব্যাখ্যা
✅ ইসলাম পরিপূর্ণ শরিয়ত ও হিদায়াত পূর্ণরূপে নাজিল হয়েছে
🚫 সবাই মুসলিম হবে না পরীক্ষা ও স্বাধীন ইচ্ছার জন্য
📌 রাসূল ﷺ-এর দায়িত্ব বার্তা পৌঁছানো, কারো অন্তর খুলে দেওয়া নয়
🧭 হিদায়াতের মালিক কেবলমাত্র আল্লাহ

📢 শেষ কথা:

ইসলামের পরিপূর্ণতা দ্বীনের দিক দিয়ে — তাতে কোনো ঘাটতি নেই।
কিন্তু দুনিয়ার মানুষদের ঈমান আনা নির্ভর করে তাদের ইচ্ছা, পরিশ্রম, ও আল্লাহর হিদায়াত পাওয়ার উপর।

আমাদের দায়িত্ব হলো — এই পূর্ণ ইসলামকে অন্যদের কাছে পৌঁছে দেওয়া।


🔁 আপনার মতামত বা প্রশ্ন জানাতে পারেন নিচে কমেন্টে। ইসলামের আলো সবার ঘরে পৌঁছাক — আল্লাহ আমাদের তাওফিক দিন।

📚 সূত্রসমূহ:

  • কুরআনুল কারিম (সূরা আল-মায়িদা, রা’দ, ইউসুফ, ইউনুস, কাহফ)

  • সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম

  • মুসনাদ আহমদ


 

✍️ লিখেছেন:মাহবুব ওসমানী


মাহবুব ওসমানী — একজন ইসলামী চিন্তাবিদ, লেখক এবং IslamiDawahCenter.com এর প্রতিষ্ঠাতা। তিনি কুরআন ও সহীহ হাদীসভিত্তিক বিশ্লেষণধর্মী প্রবন্ধ প্রকাশে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

 

To learn more, comment below or message us on wa.me/+966549485900 or  wa.me/+8801716988953 or call us at +44-73801-27019. Email at hi@islamidawahcenter.com

 

আইডিসির সাথে যোগ দিয়ে উভয় জাহানের জন্য ভালো কিছু করুন।