Last 10 days of Ramadan-রমজানের শেষ ১০ দিনের বিশেষ আমল

 
১৪৩৮ হিজরির রমজান মাস শেষের পথে। অতিবাহিত হচ্ছে রমজানের চূড়ান্ত প্রাপ্তির সময়। রমজানের শেষ সময়ে আল্লাহ তাআলা বান্দার বিগত জীবনের গোনাহ মাফ করে দেন।
 
জাহান্নামের আগুণ থেকে মুক্তি দান করেন। রমজানের অন্যতম আকর্ষণ লাইলাতুল কদরও নিহিত আছে শেষের বিজোড় দিনগুলোতে। রোজা পালনকারীদের জন্য রমজানের শেষ দিনগুলোর ১০টি গুরুত্বপূর্ণ আমল তুলে ধরা হলো-
 
বছরের সেরা ১০ রাতের ইবাদত রমজানের শেষ ১০ দিনের বিজোড় রাতগুলোতে রাত জেগে ইবাদত করা। রমজানের শেষ দিনগুলোতে আল্লাহ তাআলা বান্দার প্রতিটি কাজকেই উদারভাবে দেখেন। বান্দাকে ক্ষমা করার জন্য প্রত্যেক রাতেই আহ্বান করতে থাকেন।
 
রমজানের শেষ দিনগুলোতে সময় অপচয় না করে ইবাদাতে মনোযোগী হওয়া। অলসতা ও একঘেয়েমী মানুষকে ইবাদত-বন্দেগিতে বিরত না হওয়া।   বিশেষ দোয়ার মাধ্যমে প্রার্থনা প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের শেখানো বিশেষ দোয়ার মাধ্যমে শেষ দিনগুলো অতিবাহিত করা।
 
যাত তিনি হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে শিখিয়েছেন। আর তা হলো- ‘আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুওয়ুন, তুহিব্বুল আফওয়া, ফা`ফু আন্না।’ অর্থাৎ ‘হে আল্লাহ আপনি ক্ষমাশীল। ক্ষমা করাকে ভালো বাসেন, সুতরাং আমাকে ক্ষমা করে দিন।’
 
‘লাইলাতুল কদর’ অনুসন্ধান রমজানের শেষ দিকের বিজোড় রাতে ‘লাইলাতুল কদর’ তালাশ করতে থাকা। যার নির্দেশ দিয়েছেন প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলঅইহি ওয়া সাল্লাম। কারণ লাইলাতুল কদর হলো হাজার মাসের চেয়ে উত্তম। এ রাতের ইবাদত হাজার মাসের ইবাদত করার সমান।
 
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি লাইলাতুল কদরের রাতে বিশ্বাস ও পুরস্কারের আশায় ইবাদতরত অবস্থায় থাকবে; আল্লাহ তাআলা তার অতীতের সব গোনাহ মাফ করে দেবেন। (বুখারি) বিশেষ দোয়াগুলো স্মরণে রাখা রমজানের শেষ দিনগুলোর বিজোড় রাতে আল্লাহর কাছে ন্যায়ের পথে চলতে এবং অন্যায় পথ থেকে বিরত থাকতে নিজের জন্য, পরিবারের জন্য, আত্মীয়-স্বজনের জন্য তথা নির্যাতিত মুসলিম উম্মাহর জন্য বিশেষভাবে দোয়া করা।
 
দিনের বেলায় কিছুক্ষণ ঘুমানো রমজানের শেষ দিনগুলোতে রাতের ইবাদতের জন্য দিনের বেলায় কিছুক্ষণ ঘুমিয়ে নেয়া আবশ্যক। কেননা রমজানের শেষ দিনগুলো মুসলিম উম্মাহর জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। লাইলাতুল কদর প্রাপ্তির উদ্দেশ্যে রাত জেগে ইবাদত-বন্দেগির বিকল্প নেই। তাই রাতের ইবাদাতের জন্য দিনের বেলায় বিশ্রাম গ্রহণ করা।
 
সামাজিক নেটওয়ার্ক থেকে বিরত থাকা রমজানের শেষ দিনগুলোতে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম তথা ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রামসহ সব ধরনের ইলেক্ট্রনিক্স মিডিয়াকে বর্জন করা জরুরি। অযথা ইলেক্ট্রনিক্স মিডিয়া ও ইন্টারনেটে অযথা সময় নষ্ট না করে রমজানের কাঙ্ক্ষিত সাফল্যে মনোযোগী হওয়া।
 
বেশি বেশি কুরআন তেলাওয়াত করা কুরআনুল কারিম পড়ার সময় বুঝে বুঝে তিলাওয়াত করা উত্তম। কুরআনের মর্মার্থ অনুধাবনে রয়েছে সবচেয়ে বেশি সাওয়াব। কুরআনের অর্থ না বুঝলেও শুধুমাত্র তেলাওয়াতে রয়েছে অনেক সাওয়াব। তাই বেশি বেশি কুরআন তেলাওয়াত করা জরুরি।
 
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কুরআন তেলাওয়াত সুসংবাদ ও নেয়ামত ঘোষণার আয়াত পাঠ করার সময় আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করতেন। আবার আজাব-গজব ও পরকালের শাস্তির আয়াত পাঠ করার সময় তা থেকে আশ্রয় লাভে প্রার্থনা করতেন।
 
ধৈর্য্যের সঙ্গে ইবাদত প্রতি বছর লাইলাতুল কদর এক রাতেই আসে। আর তা রয়েছে রমজানের শেষ ১০ দিনের বিজোড় রাতে। তাই রমজানের শেষ দিনগুলোকে জীবনের জন্য চূড়ান্ত সময় ভেবে ধৈর্য সহকারে ইবাদত-বন্দেগিতে মনোযোগী হওয়া। আর এ কথা মনে করে ইবাদত করা যে, এ রমজানের শেষ দিনগুলোই হতে পারে দুনিয়ার জীবনের শেষ দিন।
 
মুক্ত হস্তে দান করা রমজানের শেষ দিনগুলোতে গরিব-দুঃখী, সহায়-সম্বলহীন মানুষের মাঝে মুক্ত হস্তে দান করায় রয়েছে অসংখ্য সাওয়াব। নামাজ-রোজা, জিকির-আজকার, কুরআন তেলাওয়াত এবং অন্যান্য ইবাদতের পাশাপাশি গরিব-দুঃখীর মাঝে আল্লাহর ওয়াস্তে দান-খয়রাত করতে কুরআন এবং হাদিসে বিশেষ গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।
 
ইবাদতে উৎসাহ দেয়া রমজানের শেষ দিনগুলোতে পরিবার, সমাজ, বন্ধু-বান্ধব ও প্রতিবেশিদেরকে ইবাদত-বন্দেগির প্রতি বিশেষ উৎসহা প্রদান করা। যাতে তারা পরস্পর ইবাদত-বন্দেগিতে প্রতিযোগিতা করে। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে লাইলাতুল কদর প্রাপ্তিতে ইবাদাত-বন্দেগি করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

 

আইডিসির সাথে যোগ দিয়ে উভয় জাহানের জন্য ভালো কিছু করুন!

 

আইডিসি এবং আইডিসি ফাউন্ডেশনের ব্যপারে  জানতে  লিংক০১ ও লিংক০২ ভিজিট করুন।

আইডিসি  মাদরাসার ব্যপারে বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন। 

আপনি আইডিসি  মাদরাসার একজন স্থায়ী সদস্য /পার্টনার হতে চাইলে এই লিংক দেখুন.

আইডিসি এতীমখানা ও গোরাবা ফান্ডে দান করে  দুনিয়া এবং আখিরাতে সফলতা অর্জন করুন।

কুরআন হাদিসের আলোকে বিভিন্ন কঠিন রোগের চিকিৎসা করাতেআইডিসি ‘র সাথে যোগাযোগ করুন।

ইসলামিক বিষয়ে জানতে এবং জানাতে এই গ্রুপে জয়েন করুন। 

 

হযরত মোহাম্মদ সঃ রমজান মাসের শেষ দশ দিন যে ভাবে কাঠাতেন। পবিত্র মাহে রমজান।

  এ মাস হলো মুসলিমদের সৌভাগ্যের মাস। এতে রয়েছে তাদের মুক্তি, রয়েছে রহমত প্রাপ্তি, সর্বোপরি জাহান্নাম থেকে বাচার গ্যারান্টি। রমজান মাস পুরোটাই ফজিলতে ভরপুর, তবে ইহার শেষ দশকের ফজিলতটা অনেক বেশি। কারণ তাতে রয়েছে হাজার মাসের চেয়েও উত্তম ফজিলতপূর্ণ একটি রজনী এবং আছে বেশ কিছু বৈশিষ্ট্য ও বিশেষ আমল।
 
নিম্নে এ বিষয়ে কিছু আলোকপাত করা হলো: ১. রমজানের শেষ দশকে রয়েছে লাইলাতুল কদর নামের একটি রাত যা হাজার মাস থেকেও শ্রেষ্ঠ। যে এ রাতে ঈমান ও ইহতিসাবের সাথে ইবাদত-বন্দেগী করবে তার অতীতের পাপগুলো ক্ষমা করে দেয়া হবে। আল্লাহ তা’আলা বলেন : إِنَّا أَنزَلْنَاهُ فِي لَيْلَةِ الْقَدْرِ. وَمَا أَدْرَاكَ مَا لَيْلَةُ الْقَدْرِ. لَيْلَةُ الْقَدْرِ خَيْرٌ مِّنْ أَلْفِ شَهْرٍ ‘নিশ্চয় আমি এটি (কুরআন) নাযিল করেছি ‘লাইলাতুল কদরে।’
 
তোমাকে কিসে জানাবে ‘লাইলাতুল কদর’ কী? ‘লাইলাতুল কদর’ হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম। [সূরা কদর : ১-৩] লাইলাতুল কদরের গুরুত্ব: আল্লাহ তা’আলা এ রাতকে সকল রাত্রের চেয়ে শ্রেষ্ঠত্বের মর্যাদা দিয়েছেন। তিনি তার কালামে এ রাতকে প্রশংসার সাথে উল্লেখ করেছেন। তিনি তাঁর কালাম সম্পর্কে বলতে গিয়ে ইরশাদ করেছেন : إِنَّا أَنزَلْنَاهُ فِي لَيْلَةٍ مُّبَارَكَةٍ إِنَّا كُنَّا مُنذِرِينَ. فِيهَا يُفْرَقُ كُلُّ أَمْرٍ حَكِيمٍ ‘নিশ্চয় আমি এটি নাযিল করেছি বরকতময় রাতে; নিশ্চয় আমি সতর্ককারী।
 
সে রাতে প্রত্যেক প্রজ্ঞাপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত অনুমোদিত হয়, [সূরা আদ-দুখান : ২-৩] বরকতময় রজনী হল, ‘লাইলাতুল কদর’ আল্লাহ তা’আলা একে বরকতময় বলে অভিহিত করেছেন। কারণ, এ রাতে রয়েছে যেমন বরকত তেমনি কল্যাণ ও তাৎপর্য।
 
বরকতের প্রধান কারণ হল : (ক) এ রাতে আল-কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে। (খ) এ রাতে প্রত্যেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের সিদ্ধান্ত লওহে মাহফুজ থেকে ফেরেশতাদের হাতে অর্পণ করা হয় বাস্তবায়নের জন্য। (গ) এ রাতের অপর একটি বৈশিষ্ট্য হল আল্লাহ তা’আলা এ রাত সম্পর্কে একটি পূর্ণ সূরা (সূরা কদর) অবতীর্ণ করেছেন। যা কিয়ামত পর্যন্ত পঠিত হতে থাকবে। (ঘ) এ রাত হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ।
 
অর্থাৎ তিরাশি (৮৩) বছরের চেয়েও এর মূল্য বেশি। (ঙ) এ রজনীতে ফেরেশতাগণ রহমত, বরকত ও কল্যাণ নিয়ে পৃথিবীতে অবতরণ করে থাকে। (চ) গুনাহ ও পাপ থেকে ক্ষমা লাভ। এই রাতের ফজিলত সম্পর্কে হাদিসে বর্ণিত হয়েছে: নবী করীম সা. বলেছেন, যে লাইলাতুল কদরে ঈমান ও ইহতিসাবের সাথে সালাত আদায় ও ইবাদত-বন্দেগি করবে তার অতীতের পাপসমূহ ক্ষমা করে দেয়া হবে।
 
[বুখারী ও মুসলিম] লাইলাতুল কদরে করণীয়: লাইলাতুল কদরে আমাদের করণীয় হল বেশি করে দোয়া করা, জিকির আযকার করা, নামাজ পড়া, ইবাদত-বন্দেগী করা। হযরত আয়েশা রা. নবী করীম সা. কে জিজ্ঞেস করলেন, লাইলাতুল কদরে আমি কি দোয়া করতে পারি ? তিনি প্রত্যুত্তরে বললেন, তুমি বলবে : اللهم انك عفو تحب عفر فاعف عنى হে আল্লাহ! আপনি ক্ষমাশীল, ক্ষমাকে ভালোবাসেন, অতএব আমাকে ক্ষমা করুন।
 
[তিরমিযী] ২. হযরত আয়েশা রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রমজানের শেষ দশক আসলে রাসূলুল্লাহ সা. পরনের লুঙ্গি শক্ত করে নিতেন। রাত্রি জাগরণ করতেন এবং পরিবারের সকলকে জাগিয়ে দিতেন। [বুখারী ও মুসলিম] রাসূলুল্লাহ সা. পরনের লুঙ্গি শক্ত করে নিতেন -এর অর্থ হলো, তিনি এ দিনগুলোতে স্ত্রীদের থেকে আলাদা হয়ে যেতেন। ৩. নবী করীম সা. এ রাতগুলোতে বেশি সময় ও শ্রম দিতেন, যা অন্য কোন রাতে দেখা যেত না।
 
যেমন হযরত আয়েশা রা. হতে বর্ণিত, তিনি এ রাতে কোরআন তিলাওয়াত, জিকির, সালাত ও দোয়ার মাধ্যমে জাগ্রত থাকতেন এরপর সেহেরি গ্রহণ করতেন। [মুসলিম] ৪. এ দশ দিনের একটি বৈশিষ্ট্য হলো, রাসূল সা. এ দশ দিনে মসজিদে এতেকাফ করতেন। প্রয়োজন ছাড়া তিনি মসজিদ থেকে বের হতেন না।
 
এতেকাফ পালন- এতেকাফের সংজ্ঞা বিশেষ নিয়তে বিশেষ অবস্থায় আল্লাহ তা’আলার আনুগত্যের উদ্দেশ্যে মসজিদে অথবা নির্জন স্থানে (মেয়েদের জন্য) অবস্থান করাকে এতেকাফ বলে। এতেকাফ কেন করা হয়? রমজানের শেষ দশ দিন মসজিদে এতেকাফ করা অনেক বড় ইবাদত। হযরত আয়েশা রা. বলেন, নবী করীম সা. রমজানের শেষ দশ দিন এতেকাফ করতেন।
 
[বুখারী ও মুসলিম] তাই আল্লাহ তা’আলা যেন আমাদেরকে তাওফিক দান করেন রাসূল সা. -এর এই মূল্যবান সুন্নাত থেকে উপকার লাভ করার। মসজিদ হল আল্লাহর ঘর, আর মালিকের ঘরে তাঁরই কাছে সওয়ালকারী হিসেবে বসে যাওয়া এটা অত্যন্ত সৌভাগ্যের ব্যাপার।
 
এতেকাফের ফজিলত এতেকাফ একটি মহান ইবাদত, মদিনায় অবস্থানকালীন সময়ে রাসূলুল্লাহ সা. প্রতি বছরই এতেকাফ পালন করেছেন। দাওয়াত, তাযকিয়া, জিহাদ ও শিক্ষার কাজে ব্যস্ত থাকা সত্ত্বে-ও প্রতি রমজানে তিনি এতেকাফ করতেন। এতেকাফ আত্মশুদ্ধি ও ঈমানি তরবিয়তের একটি শিক্ষালয় যা রাসূলুল্লাহ সা.-এর হিদায়াতী আলোর মূর্ত প্রতীক।
 
এতেকাফরত অবস্থায় বান্দা নিজেকে আল্লাহর ইবাদতের জন্য দুনিয়ার অন্যান্য সকল বিষয় থেকে আলাদা করে নেয়। ঐকান্তিকভাবে মশগুল হয়ে পড়ে আল্লাহর নেকট্য অর্জনের নিরন্তর সাধানায়। এতেকাফ ঈমান বৃদ্ধির একটি মুখ্য সুযোগ। সকলের উচিত এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে নিজের ঈমানি চেতনাকে শাণিত করে তোলা ও উন্নততর পর্যায়ে পৌঁছে দেয়ার চেষ্টা করা।
 
পবিত্র কুরআনে করীমে বিভিন্নভাবে এতেকাফ সম্পর্কে বলা হয়েছে, হযরত ইবরাহীম ও ইসমাঈল আ. -এর কথা উল্লেখ করে ইরশাদ হয়েছে- وَعَهِدْنَا إِلَى إِبْرَاهِيمَ وَإِسْمَاعِيلَ أَن طَهِّرَا بَيْتِيَ لِلطَّائِفِينَ وَالْعَاكِفِينَ وَالرُّكَّعِ السُّجُودِ ‘এবং আমি ইবরাহীম ও ইসমাঈলকে আদেশ করলাম, তোমরা আমার গৃহকে তাওয়াফকারী, এতেকাফকারী ও রুকু-সেজদাকারীদের জন্য পবিত্র করো।
 
[সূরা বাকারা : ১২৫] এতেকাফ অবস্থায় স্ত্রীদের সাথে কি আচরণ করতে হবে তা বলতে গিয়ে আল্লাহ তা’আলা বলেন- ‘আর তোমরা মসজিদে এতেকাফকালে স্ত্রীদের সাথে মেলামেশা করো না।’ [সূরা বাকারা : ১৮৭] রাসূল সা. -এর অসংখ্য হাদিসে এতেকাফ সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছে, তার মধ্যে । ফজিলত সম্পর্কিত কিছু হাদিস নিচে উল্লেখ করা হল: ১- আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সা. রমজানের শেষের দশকে এতেকাফ করেছেন, ইন্তেকাল পর্যন্ত।
 
এরপর তাঁর স্ত্রীগণ এতেকাফ করেছেন। [বুখারী ও মুসলিম] ২- আয়েশা রা. হতে বর্ণিত, রাসূল সা. প্রত্যেক রমজানে এতেকাফ করতেন। [বুখারী, হা. ২০৪১] অন্য এক হাদিসে আছে : ৩- নবী করীম সা. ইরশাদ করেন: ‘আমি (প্রথমে) এ রাতের (লাইলাতুল কদর) সন্ধানে প্রথম দশকে এতেকাফ পালন করি।
 
অতঃপর এতেকাফ পালন করি মাঝের দশকে। পরবর্তীতে ওহির মাধ্যমে আমাকে জানানো হয় যে, এ রাত শেষ দশকে রয়েছে। সুতরাং তোমাদের মাঝে যে (এ দশকে) এতেকাফ পালনে আগ্রহী, সে যেন তা পালন করে। লোকেরা তার সাথে এতেকাফ পালন করল।
 
রাসূল সা. বলেন, আমাকে তা (লাইলাতুল কদর) এক বেজোড় রাতে দেখানো হয়েছে এবং দেখানো হয়েছে যে, আমি সে ভোরে কাদা ও মাটিতে সেজদা দিচ্ছি। অতঃপর রাসূল সা. একুশের রাতের ভোর যাপন করলেন, ফজর পর্যন্ত তিনি কিয়ামুল্লাইল করেছিলেন। তিনি ফজর আদায়ের জন্য দণ্ডায়মান হয়েছিলেন।
 
তখন আকাশ চেপে বৃষ্টি নেমে এল, এবং মসজিদে চুঁইয়ে চুঁইয়ে পানি পড়ল। আমি কাদা ও পানি দেখতে পেলাম। ফজর সালাত শেষে যখন তিনি বের হলেন, তখন তার কপাল ও নাকের পাশে ছিল পানি ও কাদা। সেটি ছিল একুশের রাত।’ [মুসনাদে আহমদ, আবু দাউদ : হা. ১১৭৪, মুসলিম] ৪- হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত হাদিসে উভয়টির (দশ দিন, বিশ দিন) উল্লেখ পাওয়া যায়।
 
তিনি বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ সা. প্রতি রমজানে দশ দিন এতেকাফ করতেন, তবে যে বছর তিনি পরলোকগত হন সে বছর তিনি বিশ দিন এতেকাফে কাটান। [সহীহ বুখারী] ৫- হযরত আয়েশা রা. বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ সা. -এর সাথে তাঁর জনৈকা স্ত্রী-ও এতেকাফ করলেন।
 
তখন তিনি ছিলেন এস্তেহাজা অবস্থায়। রক্ত দেখছেন। রক্তের কারণে কখনো তাঁর নীচে গামলা রাখা হতো। [বুখারী] ৬- রাসূল সা. বলেন, আমি কদরের রাত্রির সন্ধানে প্রথম দশ দিন এতেকাফ করলাম। এরপর এতেকাফ করলাম মধ্যবর্তী দশদিন। অতঃপর ওহি প্রেরণ করে আমাকে জানানো হল যে তা শেষ দশদিন।
 
সুতরাং যে এতেকাফ পছন্দ করবে, সে যেন এতেকাফ করে। ফলে, মানুষ তাঁর সাথে এতেকাফ যাপন করল। [মুসলিম] এতেকাফের উপকারিতা ১. এতেকাফকারী এক নামাজের পর আর এক নামাজের জন্য অপেক্ষা করে থাকে, আর এ অপেক্ষার অনেক ফজিলত রয়েছে।
 
আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসূল সা. বলেছেন, ‘নিশ্চয় ফেরেশতারা তোমাদের একজনের জন্য দোয়া করতে থাকেন যতক্ষণ সে কথা না বলে, নামাজের স্থানে অবস্থান করে। তারা বলতে থাকে- ‘ হে আল্লাহ! তাকে ক্ষমা করে দিন।
 
আল্লাহ তার প্রতি দয়া করুন, যতক্ষণ তোমাদের কেউ নামাজের স্থানে থাকবে, ঐ নামাজ তাকে আটকিয়ে রাখবে, তার পরিবারের নিকট যেতে নামাজ ছাড়া আর কিছু বিরত রাখবে না, ফেরেশতারা তার জন্য এভাবে দোয়া করতে থাকবে। [বুখারী ও মুসলিম] ২. এতেকাফকারী কদরের রাতের তালাশে থাকে, যে রাত অনির্দিষ্টভাবে রমজানের যে কোন রাত হতে পারে।
 
এই রহস্যের কারণে আল্লাহ তা’আলা সেটিকে বান্দাদের থেকে গোপন রেখেছেন, যেন তারা মাস জুড়ে তাকে তালাশ করতে থাকে। ৩. এতেকাফের ফলে আল্লাহ তা’আলার সাথে সম্পর্ক দৃঢ় হয়, এবং আল্লাহ তা’আলার জন্য মস্তক অবনত করার প্রকৃত চিত্র ফুটে উঠে।
 
কেননা আল্লাহ তা বলেন- وَمَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَالْإِنسَ إِلَّا لِيَعْبُدُونِ ‘আমি মানুষ এবং জিন জাতিকে একমাত্র আমারই এবাদতের জন্য সৃষ্টি করেছি। [সূরা আজ-জারিয়াত : ৫৬] আর এ এবাদতের বিবিধ প্রতিফলন ঘটে এতেকাফ অবস্থায়। কেননা এতেকাফ অবস্থায একজন মানুষ নিজেকে পুরোপুরি আল্লাহর ইবাদতের সীমানায় বেঁেধ নেয় এবং আল্লাহর সন্তুষ্টির কামনায় ব্যাকুল হয়ে পড়ে।
 
আল্লাহ তা’আলাও তাঁর বান্দাদেরকে নিরাশ করেন না, বরং তিনি বান্দাদেরকে নিরাশ হতে নিষেধ করে দিয়ে বলেছেন- قُلْ يَا عِبَادِيَ الَّذِينَ أَسْرَفُوا عَلَى أَنفُسِهِمْ لَا تَقْنَطُوا مِن رَّحْمَةِ اللَّهِ إِنَّ اللَّهَ يَغْفِرُ الذُّنُوبَ جَمِيعًا إِنَّهُ هُوَ الْغَفُورُ الرَّحِيمُ ‘(হে নবী আপনি) বলুন, আমার বান্দাগণ! যারা নিজেদের উপর জুলুম করেছ তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয় আল্লাহ সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেন।
 
তিনি ক্ষমাশীল পরম দয়ালু। [সুরা ঝুমার : ৫৩] অন্যত্র ইরশাদ করেন- وَإِذَا سَأَلَكَ عِبَادِي عَنِّي فَإِنِّي قَرِيبٌ أُجِيبُ دَعْوَةَ الدَّاعِ إِذَا دَعَانِ فَلْيَسْتَجِيبُواْ لِي وَلْيُؤْمِنُواْ بِي لَعَلَّهُمْ يَرْشُدُونَ ‘আর আমার বান্দারা যখন তোমার কাছে জিজ্ঞেস করে আমার ব্যাপারে, বস্তুত আমি রয়েছি সন্নিকটে। প্রার্থনাকারীর প্রার্থনা কবুল করি যখন সে প্রার্থনা করে।
 
কাজেই তারা যেন আমার হুকুম মান্য করে এবং আমার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে। সম্ভবত তারা পথ প্রাপ্ত হবে। [আল-বাকারা : ১৮৬] ৪. যখন কেউ মসজিদে অবস্থান করা পছন্দ করতে লাগে, যা সম্ভব প্রবৃত্তিকে অভ্যস্ত করানোর মাধ্যমে।
 
কেননা প্রবৃত্তিকে যে বিষয়ে অভ্যস্ত করানো হবে সে বিষয়েই সে অভ্যস্ত হয়ে পড়বে। মসজিদে অবস্থান করা পছন্দ হতে শুরু করলে মসজিদকে সে ভালোবাসবে, সেখানে নামাজ আদায়কে ভালোবাসবে। আর এ প্রক্রিয়ায় আল্লাহর সাথে তার সম্পর্ক মজবুত হবে। হৃদয়ে সৃষ্টি হবে নামাজের ভালোবাসা, এবং নামাজ আদায়ের মাধ্যমেই অনুভব করতে শুরু করবে হৃদয়ের প্রশান্তি।
 
যে প্রশান্তির কথা রাসূলুল্লাহ সা. এভাবে বলেছিলেন : হে বেলাল! নামায প্রতিষ্ঠা কর এবং এর মাধ্যমে আমাদেরকে শান্ত করো। [সহীহ আবু দাউ : ৪৯৮৫] ৫. মসজিদে এতেকাফের মাধ্যমে একমাত্র আল্লাহ তা’আলার উদ্দেশ্যে নিজেকে আবদ্ধ করে নেওয়ার কারণে মুসলমানদের অন্তরের কঠোরতা দূরীভূত হয়, কেননা কঠোরতা সৃষ্টি হয় দুনিয়ার প্রতি ভালোবাসা ও পার্থিবতায় নিজেকে আরোপিত করে রাখার কারণে।
 
মসজিদে নিজেকে আবদ্ধ করে রাখার কারনে দুনিয়ার প্রতি ভালোবাসায় ছেদ পড়ে এবং আত্মিক উন্নতির অভিজ্ঞতা অনুভূত হয়। মসজিদে এতেকাফ করার কারণে ফেরেশতারা দোয়া করতে থাকে, ফলে এতেকাফকারী ব্যক্তির আত্মা নিম্নাবস্থার নাগপাশ কাটিয়ে ফেরেশতাদের স্তরের দিকে ধাবিত হয়।
 
ফেরেশতাদের পর্যায় থেকেও বরং উর্ধ্বে ওঠার প্রয়াস পায়। কেননা ফেরেশতাদের প্রবৃত্তি নেই বিধায় প্রবৃত্তির ফাঁদে তারা পড়ে না। আর মানুষের প্রবৃত্তি থাকা সত্বেও সব কিছু থেকে মুক্ত হয়ে আল্লাহর জন্য একাগ্রচিত্ত হয়ে যায়। ৬. এতেকাফের মাধ্যমে অন্তরে প্রশান্তি আসে।
 
৭. বেশি বেশি কুরআন তেলাওয়াতের সুযোগ সৃষ্টি হয়। ৮. ঐকান্তিকভাবে তওবা করার সুযোগ লাভ হয়। ৯. তাহাজ্জুদে অভ্যস্ত হওয়া যায়। ১০. সময়কে সুন্দরভাবে কাজে লাগানো যায়। ১১. দিল নরম হয়। ১২. গুনাহ থেকে বাঁচার উপায় হয়।

 

আইডিসির সাথে যোগ দিয়ে উভয় জাহানের জন্য ভালো কিছু করুন!

 

আইডিসি এবং আইডিসি ফাউন্ডেশনের ব্যপারে  জানতে  লিংক০১ ও লিংক০২ ভিজিট করুন।

আইডিসি  মাদরাসার ব্যপারে বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন। 

আপনি আইডিসি  মাদরাসার একজন স্থায়ী সদস্য /পার্টনার হতে চাইলে এই লিংক দেখুন.

আইডিসি এতীমখানা ও গোরাবা ফান্ডে দান করে  দুনিয়া এবং আখিরাতে সফলতা অর্জন করুন।

কুরআন হাদিসের আলোকে বিভিন্ন কঠিন রোগের চিকিৎসা করাতেআইডিসি ‘র সাথে যোগাযোগ করুন।

ইসলামিক বিষয়ে জানতে এবং জানাতে এই গ্রুপে জয়েন করুন।

এতেকাফের আহকাম এবং শরীয়তের দৃষ্টিতে এতেকাফঃ এতেকাফ করা সুন্নাত। এতেকাফের সবচেয়ে উপযোগী সময় রমজানের শেষ দশক, এতেকাফ কুরআন, হাদিস ও এজমা দ্বারা প্রমাণিত। ইমাম আহমদ রহ. বলেন, কোন মুসলমান এতেকাফকে সুন্নাত বলে স্বীকার করেনি এমনটি আমার জানা নেই।
 
  এতেকাফের উদ্দেশ্যঃ ১. আল্লাহর সাথে সম্পর্ক দৃঢ় করা আল্লাহর দিকে আকৃষ্ট হওয়া ও আল্লাহ কেন্দ্রিক ব্যতিব্যস্ততা যখন অন্তর সংশোধিত ও ঈমানি দৃঢ়তা অর্জনের পথ, কেয়ামতের দিন তার মুক্তিও বরং এ পথেই, তাহলে এতেকাফ হল এমন একটি ইবাদত যার মাধ্যমে বান্দা সমস্ত সৃষ্টজীব থেকে আলাদা হয়ে যথাসম্ভব প্রভুর সান্নিধ্যে চলে আসে।
 
বান্দার কাজ হল তাঁকে স্মরণ করা, তাঁকে ভালোবাসা ও তাঁর ইবাদত করা। সর্বদা তার সন্তুষ্টি ও নৈকট্য লাভের চেষ্টা করা, এরই মাধ্যমে আল্লাহর সাথে বান্দার সম্পর্ক দৃঢ় ও মজবুত হয়।
 
২. পাশবিক প্রবণতা এবং অহেতুক কাজ থেকে দূরে থাকা রোজার মাধ্যমে আল্লাহ তা’আলা তাঁর বান্দাদেরকে বাঁচিয়ে রাখেন অতিরিক্ত পানাহার ও যৌনাচারসহ পশু প্রবৃত্তির বিবিধ প্রয়োগ থেকে, অনুরূপভাবে তিনি এতেকাফের বিধানের মাধ্যমে তাদেরকে বাঁচিয়ে রাখেন অহেতুক কথা-বার্তা, মন্দ সংস্পর্শ ও অধিক ঘুম হতে।
 
৩. আল্লাহর নৈকট্য লাভের অপূর্ব সুযোগ এতেকাফের মাধ্যমে একজন ব্যক্তি সম্পূর্ণ অর্থে আল্লাহর জন্য নিবেদিত হয়ে যায়। নামাজ, কুরআন তিলাওয়াত, জিকির ও দোয়া ইত্যাদির নির্ঘাত চর্চার মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভের অফুরন্ত সুযোগের আবহে সে নিজেকে পেয়ে যায়।
 
৩. শবে কদর তালাশ করা এতেকাফের মাধ্যমে শবে কদর খোঁজ করা রাসূলুল্লাহ সা. -এর মূল উদ্দেশ্য ছিল, হযরত আবু সায়ীদ খুদরি রা. থেকে বর্ণিত হাদিসে একথারই প্রমাণ বহন করে। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. ইরশাদ করেন : ‘আমি কদরের রাত্রির সন্ধানে প্রথম দশকে এতেকাফ করলাম।
 
এরপর এতেকাফ করলাম মধ্যবর্তী দশকে। অতঃপর ওহি প্রেরণ করে আমাকে জানানো হল যে তা শেষ দশকে। সুতরাং যে এতেকাফ পছন্দ করবে, সে যেন এতেকাফ করে। ফলে, মানুষ তাঁর সাথে এতেকাফ যাপন করল।’ [মুসলিম, হা. ১১৬৭] ৪. মসজিদে অবস্থানের অভ্যাস গড়ে তোলা এতেকাফের মাধ্যমে বান্দার অন্তর মসজিদের সাথে জুড়ে যায়, মসজিদের সাথে সম্পৃক্ত হওয়ার অভ্যাস গড়ে উঠে।
 
হাদিস অনুযায়ী যে সাত ব্যক্তিকে আল্লাহ তা’আলা আরশের ছায়ার নীচে স্থান দান করবেন তাদের মধ্যে একজন হলেন ওই ব্যক্তি মসজিদের সাথে যার হৃদয় ছিল বাঁধা। হাদিসে এসেছে : এবং যার অন্তর মসজিদে বাঁধা ।
 
[বুখারী : ৩/২৯২] ৫. ইচ্ছাশক্তি প্রবল করা এবং প্রবৃত্তিকে খারাপ অভ্যাস ও কামনা-বাসনা থেকে বিরত রাখার অভ্যাস গড়ে তোলা কেননা, এতেকাফ দ্বারা খারাপ অভ্যাস থেকে বিরত থাকার প্রবণতা গড়ে উঠে।
 
এতেকাফ তার জন্য সুবর্ণ সুযোগ সৃষ্টি করে দেয় নিজেকে ধৈর্যের গুণে গুণান্বিত করতে ও নিজের ইচ্ছাশক্তিকে শানিত করতে। এতেকাফ থেকে একজন মানুষ সম্পূর্ণ নতুন মানুষ হয়ে বের হয়ে আসার সুযোগ পায় যা পরকালে উপকারে আসবেনা এমন গর্হিত কাজ থেকে বিরত থাকার ফুরসত মেলে।
 
এতেকাফের বিধানাবলি ১. এতেকাফের সময়-সীমা সবচেয়ে কম সময়ের এতেকাফ হল, শুদ্ধমত অনুযায়ী একদিন একরাত। কেননা সাহাবায়ে কেরাম রা. নামাজ অথবা উপদেশ শ্রবন করার অপেক্ষায় বা জ্ঞান অর্জন ইত্যাদির জন্য মসজিদে বসতেন, তবে তারা এসবের জন্য এতেকাফের নিয়ত করেছেন বলে শোনা যায়নি।
 
সর্বোচ্চ কতদিনের জন্য এতেকাফ করা যায় এ ব্যাপারে ওলামাদের মতামত হল এ ব্যাপারে নির্ধারিত কোন সীমা-রেখা নেই।
 
২. এতেকাফে প্রবেশ ও বাহির হওয়ার সময় এতেকাফকারী যদি রমজানের শেষ দশকে এতেকাফের নিয়ত করে তা হলে একুশতম রাত্রির সূর্য অস্ত যাওয়ার পূর্বে মসজিদে প্রবেশ করবে, কেননা তার উদ্দেশ্য কদরের রাত তালাশ করা, যা আশা করা হয়ে থাকে বেজোড় রাত্রগুলোতে, যার মধ্যে একুশের রাত-ও রয়েছে।
 
[মুসলিম, ফাতওয়া শামি: ২/৪৫২] তবে এতেকাফ থেকে বের হওয়ার ক্ষেত্রে উত্তম হল চাঁদ রাত্রি মসজিদে অবস্থান করে পরদিন সকালে সরাসরি ঈদগাহে চলে যাওয়া। তবে চাঁদ রাতে সূর্যাস্তের পর মসজিদ থেকে বের হয়ে গেলেও কোন সমস্যা নেই, বৈধ রয়েছে।
 
৩. এতেকাফের শর্ত এতেকাফের অনেকগুলো শর্ত রয়েছে। শর্তগুলো নিন্মরূপ : এতেকাফের জন্য কেউ কেউ রোজার শর্ত করেছেন, কিন্তু বিশুদ্ধ মত হল রোজা শর্ত নয়। কেননা রাসূলুল্লাহ সা. থেকে প্রমাণিত আছে যে তিনি কোন এক বছর শাওয়ালের প্রথম দশকে এতেকাফ করেছিলেন, আর এ দশকে ঈদের দিনও আছে।
 
আর ঈদের দিনে তো রোজা রাখা নিষিদ্ধ। তবে মান্নত ও রমজান মাসে এতেকাফ করার জন্য রোজা শর্ত। [প্রমাণ : আপকে মাসায়েল আওর উনকা হল : ৪/৬২৫, ফাতাওয়া আলমগীরী : ১/২১১] এতেকাফের জন্য মুসলমান হওয়া শর্ত। কেননা কাফেরের ইবাদত গ্রহণযোগ্য হয় না।
 
এতেকাফকারীকে বোধশক্তিসম্পন্ন হতে হবে। কেননা নির্বোধ ব্যক্তির কাজের কোনো উদ্দেশ্য থাকে না, আর উদ্দেশ্য ব্যতীত কাজ শুদ্ধ হতে পারে না। ভালো-মন্দ পার্থক্য করার জ্ঞান থাকতে হবে। কেননা কম বয়সী, যে ভাল-মন্দের পার্থক্য করতে পারে না, তার নিয়তও শুদ্ধ হয় না।
 
এতেকাফের নিয়ত করতে হবে। কেননা মসজিদে অবস্থান হয়তো এতেকাফের নিয়তে হবে অথবা অন্য কোন নিয়তে। আর এদু’টোর মধ্যে পার্থক্য করার জন্য নিয়তের প্রয়োজন। ইহার সমর্থনে হাদিসটি হলো- ‘প্রত্যেক কাজের নির্ভরতা নিয়তের উপর, যে যা নিয়ত করবে সে কেবল তাই পাবে। [ বুখারী : ১] এতেকাফ অবস্থায় মহিলাদের হায়েজ-নিফাস থেকে পবিত্র হওয়া জরুরি।
 
কেননা এ অবস্থায় মসজিদে অবস্থান করা হারাম, অবশ্য এস্তেহাজা অবস্থায় এতেকাফ করা বৈধ। দলিল : আয়েশা রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সা.-এর সাথে তাঁর স্ত্রীগণের মধ্য হতে কেউ একজন এতেকাফ করেছিলেন এস্তেহাজা অবস্থায়। তিনি লাল ও হলুদ রঙ্গের স্রাব দেখতে পাচ্ছিলেন, আমরা কখনো তার নীচে পাত্র রেখে দিয়েছি নামাজের সময়। [বুখারী, হা. ২০৩৭] গোসল ফরজ হয় এমন ধরনের অপবিত্রতা থেকে পবিত্র হতে হবে।
 
অপবিত্র লোক মসজিদে অবস্থান করা হারাম। যদিও কোন কোন আলেম ওজুর শর্তে মসজিদে অবস্থান বৈধ বলেছেন। আর যদি অপবিত্রতা যৌন স্পর্শ অথবা স্বামী-স্ত্রীর মিলনের ফলে হয়, তবে সকলের মতে এতেকাফ ভঙ্গ হয়ে যাবে। আর যদি স্বপ্নদোষের কারণে হয়, তাহলে কারোর মতে এতেকাফ ভঙ্গ হবে না।
 
আর যদি হস্তমৈথুনের কারণে হয় তা হলে সঠিক মতানুসারে এতেকাফ ভঙ্গ হয়ে যাবে। এতেকাফ মসজিদে হতে হবে। এ ব্যাপারে সকল আলেম একমত যে এতেকাফ মসজিদে হতে হবে, তবে জামে মসজিদ হলে উত্তম কেননা, এমতাবস্থায় জুমার নামাজের জন্য এতেকাফকারীকে মসজিদ থেকে বের হতে হবে না।
 
[ফতহুল কাদির : ২/১১০, ফাতওয়া আলীমগীরী : ১/২১২] মেয়েরা ঘরের এক কোনে জায়গা নির্ধারিত করে তথায় এতেকাফ করবে। তাহলে সে মসজিদে এতেকাফের সওয়াব পাবে। [বুখারী ও মুসিলম, আলমগিরী : ১/২১১, হাসিয়াতুত তাহতাবী আলাদ্দুররুল মুখতার : ১/৪৭৩, আপকে মাসাঈল আওর উনকা হল : ৪/৬২৪]
 
মসজিদ থেকে বের হওয়ার বিধান এতেকাফকারী যদি বিনা প্রয়োজনে মসজিদ থেকে বের হয় তাহলে তার এতেকাফ ভঙ্গ হয়ে যাবে। [আদ্দুররুল মুখতার : ২/৪৪৭ ফাতহুল কাদির : ২/১১২] আর এতেকাফের স্থান থেকে যদি মানবীয় প্রয়োজন মিটানোর জন্য বের হয় তাহলে এতেকাফ ভঙ্গ হবে না।
 
[আপকে মাসায়েল আওর উনকা হল : ৪/৬২৪, আদ্দুররুল মুখতার : ২/৪৪৫, হাসিয়াতুত তাহতাবী : ১/৪৭৪] মসজিদে থেকে পবিত্রতা অর্জন সম্ভব না হলে মসজিদ থেকে বের হওয়ার অনুমতি আছে। [ফাতহুল কাদির : ২/১১০] বাহন না থাকার কারণে এতেকাফকারীকে যদি পানাহারের প্রয়োজনে বাইরে যেতে হয় অথবা মসজিদে খাবার গ্রহণ করতে লজ্জা বোধ হয় তবে এরূপ প্রয়োজনে বাইরে যাওয়ার অনুমতি আছে।
 
[ফাতহুল কাদির : ২/১১০] যে মসজিদে এতেকাফে বসেছে সেখানে জুমার নামাজের ব্যবস্থা না থাকলে জুমার নামাজের উদ্দেশ্যে মসজিদ থেকে বের হওয়া বৈধ, এক্ষেত্রে এতটুকু সময় নিয়ে আগে ভাগেই রওয়ানা হওয়া তার জন্য মুস্তাহাব যাতে সেখানে গিয়ে সে তাহিয়্যাতুল মসজিদ, জুমার পূর্বের চার রাকাত সুন্নাত পড়তে পারে।
 
আর নামাজ শেষে সাথে সাথে পূর্বের মসজিদে ফিরে আসবে। [ফাতহুল কাদীর : ২/১১০, হাসিয়া তাহতাবী : ১/৪৭৫, আলমগিরী : ১/২১২, আপকা সওয়াল আওর উনকা জওয়াব : ৪/৬২৪] ওজরের কারনে এতেকাফকারী মসজিদ থেকে বের হতে পারে। ছাফিয়্যা রা. থেকে বর্ণিত হাদিস এর প্রমাণ :‘ছাফিয়া রা. রমজানের শেষ দশকে এতেকাফস্থলে রাসূলুল্লাহ সা.-এর সাথে সাক্ষাৎ করতে এলেন।
 
রাসূলুল্লাহ সা. -এর সাথে কতক্ষণ কথা বললেন অতঃপর যাওয়ার জন্য উঠে দাঁড়ালেন রাসূলুল্লাহ সা.-ও তাকে বিদায় দিতে উঠে দাড়ালেন। [বুখারী : ২০৩৫] কোন নেকির কাজ করার জন্য এতেকাফকারীর মসজিদ থেকে বের হওয়া বৈধ নয়। যেমন রোগী দেখতে যাওয়া, জানাজায় উপস্থিত হওয়া ইত্যাদি।
 
এ মর্মে আয়শা রা. বলেন, ‘এতেকাফকারীর জন্য সুন্নত হল সে রোগী দেখতে যাবে না, জানাজায় উপস্থিত হবে না, স্ত্রীকে স্পর্শ করবে না ও তার সাথে কামাচার থেকে বিরত থাকবে এবং অতি প্রয়োজন ব্যতীত মসজিদ থেকে বের হবে না।
 
[আবু দাউদ : হা. ২৪৭৩] এতেকাফ-বিরুদ্ধ কোন কাজের জন্য এতেকাফকারীর মসজিদ থেকে বের হওয়া বৈধ নয়, যেমন ক্রয়-বিক্রয়, স্বামী-স্ত্রীর মিলন ইত্যাদি। হ্যাঁ যদি এতেকাফকারী গরীব মানুষ হয়, ঘরে খাবারের কিছুই না থাকে, তাহলে এতেকাফ অবস্থায় ক্রয়-বিক্রয় করতে পারবে। তবে শর্ত হলো মসজিদে কেনা-বেচার জিনিসপত্র আনতে পারবে না। [আর্দ্দুরুল মুখতার : ২/৪৪৮-৪৪৯, আপকে মাসায়েল আওর উনকা হল : ৪/৬২৫]
 
  এতেকাফকারীর জন্য যা কিছু বিধিবদ্ধ ইবাদত আদায়, যেমন নামাজ, কুরআন তিলাওয়াত, জিকির ও দোয়া ইত্যাদি। কেননা এতেকাফের উদ্দেশ্য হল আল্লাহ তা’আলার সমীপে অন্তরের একাগ্রতা নিবেদন করা এবং তাঁর প্রতি আকৃষ্ট হওয়া যা উপরোক্ত ইবাদত আদায় ছাড়া সম্ভব নয়।
 
অনুরূপভাবে যেসব ইবাদতের প্রভাব অন্যদের পর্যন্ত পৌঁছায়, যেমন সালামের উত্তর দেওয়া, সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজ থেকে বারণ, প্রশ্নের উত্তর দেয়া, পথ দেখানো, ইলম শিক্ষা দেয়া, কুরআন পড়ানো ইত্যাদিও করতে পারবে। কিন্তু শর্ত হল এগুলো যেন এত বেশি না হয় যে এতেকাফের মূল উদ্দেশ্যই ছুটে যায়।
 
[ফতহুল কাদীর : ২/১১২, আলমগীরী : ১/২১২, আপকে মাসায়েল আওর উনকা হল : ৪/৬২৪] এতেকাফকারীর জন্য মুস্তাহাব হল তার এতেকাফের স্থানে কোন কিছু দ্বারা পর্দা করে নেয়া।
 
প্রমাণ: ‘রাসূল সা. তুর্কি গম্বুজের ভিতরে এতেকাফ করেছেন যার দরজায় ছিল চাটাই। [মুসলিম : হা. ১১৬৭] এতেকাফকারী তার প্রয়োজনীয় জিনিস-পত্র সঙ্গে নেবে যাতে নিজের প্রয়োজনে তাকে বার বার মসজিদের বাইরে যেতে না হয়, আবু সাঈদ খুদরি রা. হতে বর্ণিত হাদিসে এসেছে, তিনি বলেন : ‘আমরা রাসূলুল্লাহ সা. -এর সাথে রমজানের মাঝের দশকে এতেকাফ করলাম, যখন বিশ তারিখ সকাল হল আমরা আমাদের বিছানা-পত্র নিয়ে নিলাম, তখন রাসূলুল্লাহ সা. এসে বললেন, যে এতেকাফ করেছে সে তার এতেকাফের স্থানে ফিরে যাবে।
 
[বুখারী : হা. ২০৪০] এতেকাফের জন্য যা অনুমোদিতঃ এতেকাফকারীর জন্য মসজিদে পানাহার ও ঘুমানোর অনুমতি আছে। এ ব্যাপারে সকল ইমামদের ঐক্যমত রয়েছে। তবে এ ব্যাপারে সতর্ক হওয়া উচিত, কেননা আল্লাহর প্রতি একনিষ্ঠভাবে মনোনিবেশের জন্য কম খাওয়া কম ঘুমানো সহায়ক বলে বিবেচিত। গোসল করা, চুল আঁচড়ানো, তেল ও সুগন্ধি ব্যবহার, ভাল পোশাক পরা, এ সবের অনুমতি আছে।
 
প্রমাণ আয়েশা রা. -এর হাদিস: ‘তিনি মাসিক অবস্থায় নবী সা.-এর মাথার কেশ বিন্যাস করে দিতেন, যখন রসূল সা. মসজিদে এতেকাফরত অবস্থায় থাকতেন, আয়েশা রা. তার কক্ষে থাকা অবস্থায় রাসূলুল্লাহ সা. -এর মাথার নাগাল পেতেন। [বুখারী : ২০৪৬] এতেকাফকারীর পরিবার তার সাথে সাক্ষাৎ করতে পারবে, কথা বলতে পারবে, কেননা নবী করীম সা.-এর স্ত্রীগণ এতেকাফকালীন তার সাথে সাক্ষাৎ করতেন। তবে সাক্ষাৎ দীর্ঘ না হওয়া বাঞ্ছনীয়।
 
এতেকাফকারী যা থেকে বিরত থাকবে – ওজর ছাড়া এতেকাফকারী এমন কোন কাজ করবে না যা এতেকাফকে ভঙ্গ করে দেয়, আল্লাহ তা’আলা বলেন,”তোমরা তোমাদের কাজসমূহকে নষ্ট করো না। ” – ঐ সকল কাজ যা এতেকাফের উদ্দেশ্যকে ব্যাহত করে, যেমন বেশি কথা বলা, বেশি মেলামেশা করা, অধিক ঘুমানো, ইবাদতের সময়কে কাজে না লাগানো ইত্যাদি।
 
– এতেকাফকারী মসজিদে বসে ক্রয়-বিক্রয় করবে না। প্রমাণ: হযরত আমর বিন শুআইব রা. তাঁর পিতার উদ্বৃতিতে বর্ণনা করেন যে রাসূল সা. মসজিদে ক্রয়-বিক্রয় করতে নিষেধ করেছেন। [তিরমিযী, আবু দাউদ, মুসনাদে আহমদ: হা.৬৯৯১] – তেমনিভাবে যা ক্রয়-বিক্রয়ের কাজ বলে বিবেচিত, যেমন বিভিন্ন ধরনের চুক্তিপত্র, ভাড়া, মুদারাবা, মুশারাকা, বন্ধক রাখা ইত্যাদি।
 
কিন্তু যদি মসজিদের বাহিরে এমন ক্রয়-বিক্রয় হয় যা ছাড়া এতেকাফকারীর সংসার চলে না তবে তা বৈধ বলে বিবেচিত হবে। – মসজিদে বায়ু ত্যাগ থেকে বিরত থাকবে। কেননা হযরত আনাস রা. হতে বর্ণিত, যখন বেদুইন লোকটি মসজিদে প্রস্রাব করেছিল তখন রাসূল সা. বলেছিলেন : মসজিদ প্রস্রাব, ময়লা-আবর্জনার উপযোগী নয়, বরং মসজিদ পবিত্র স্তান আল্লাহর ঘর অবশ্যই আল্লাহর জিকির এবং নামাজ ও কুরআন তিলাওয়াতের জন্য।
 
[মুসলিম : ২৮৫] প্রিয় পাঠক! আসুন আমরা রমজান মাসকে যথাযথ কাজে লাগাই এবং এর শেষ দশককে এতেকাফের মাধ্যমে অতিবাহিত করি। এতেই আমাদের দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণ রয়েছে। আল্লাহ তা’আলা আমাদের তাওফিক দান করুন। আল্লাহুম্মা আমিন।  

রমাদ্বানের যে ইবাদত আজ বিস্মৃত – কাফিরদের বিরুদ্ধে দুআ করা এবং অভিশাপ দেয়া

  ইমাম আয-যুহরি বলেছেন, রমাদ্বানের দ্বিতীয় ভাগে তাঁরা কাফিরদের অভিশাপ দিতেন। তাঁরা বলতেন, *হে আল্লাহ্‌, কাফিরদের ধ্বংস ধরুন, যারা অন্যদের আপনার পথ থেকে বিচ্যুত করে। যারা আপনার রাসূলগণের ওপর অবিশ্বাস করে এবং আপনার প্রতিশ্রুতিতে বিশ্বাস করে না। *
 
. আল-আ’রাজ বলেছেন, *আমি এমন কাউকে দেখিনি যিনি রমাদ্বানে কাফিরদের অভিশাপ দিতেন না। * . ইমাম মালিকের মুআত্তাতে বর্ণিত হয়েছে, *হে আল্লাহ্‌, আপনার পবিত্র নাম এবং সিফাতের নামে আপনার দুআ করছি, আপনি কাফিরদের ধ্বংস করে দিন। * . সাইয়্যিদিনা উমার ইবনুল খাত্তাব রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেছেন, *রমাদ্বানের দ্বিতীয় ভাগ শুরু হলে সুন্নাহ হল বিতরের শেষ রাকাতে কাফিরদের অভিশাপ দেয়া* ইবনু হাজরের মতে বর্ণনাটি হাসান। ২/৫২ التلخيص الحبير

 

লাইলাতুল ক্বদর বা শবে ক্বদরের অর্থাৎ রমজানের শেষ ১০ রাতের কিছু গুরুত্বপূর্ণ আমলঃ-

  ✅ আয়েশা (রা) নবী (সাঃ) কে কদরের রাতে কি দুয়া পড়বে জিজ্ঞেস করলে নবী (সাঃ) বলেনঃ আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আ’ফুউন তুহিব্বুল আ’ফওয়া ফাআ’ফু আ’ন্নী। ‏اللهم إنك عفو تحب العفو فاعفُ عني‏. (তিরমিযী, ইবনু মাজাহ) উক্ত দোয়াটি বেশী বেশী পড়বেন।
 
1⃣✅ ১০০ বার ‘আস্তাগফিরুল্লাহ’ পড়ে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া। (মুসলিম, তিরমিজী) নবী করিম (সাঃ) দিনে ৭০ কিংবা ১০০ বার ইসতেগফার পড়তেন।
 
2⃣✅ ৩ বার ‘সূরা ইখলাস’ পড়লে ১খতম কুরআন পড়ার সমান সওয়াব পাওয়া যায়। 3️⃣✅ ১০০ বার “সুবহানাল্লাহি ওয়াবিহামদিহি” (পড়িলে গুনাহসমূহ ক্ষমা করা হয়, তা সাগরের ফেনারাশির সমপর্যায় হলেও) (তিরমিজী-৩৪৬৬) سُبحَانَ اللّهِ وَ بِحَمْدِهِ ، سُبحَانَ اللّهِ الْعَظِيمِ. 4️⃣✅
 
১০ বার পড়িলে “লাইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকালাহ লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু ওয়াহুয়া আ’লা কুল্লি শাইইন ক্বদির!” لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَحَدْهُ لَا شَرِيكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ ُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِير. (১০ বার পড়িলে সে ব্যক্তি ইসমাইলের বংশধরের চারজন দাস মুক্ত করার সমান সওয়াব লাভ করবে।”
 
(বুখারী, মুসলিম) আবার যদি কেউ ১০০ বার “লাইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকালাহ লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু ওয়াহুয়া আ’লা কুল্লি শাইইন ক্বদির!” ১০০ বার পড়ে তাহলে “সে একশ গোলাম আযাদ করার সাওয়াব অর্জন করবে এবং তার জন্য ১০০টি নেকী লেখা হবে, আর তার ১০০টি গুনাহ মিটিয়ে দেওয়া হবে।
 
আর সে দিন সন্ধ্যা পর্যন্ত এটা তার জন্য রক্ষাকবচে পরিণত হবে এবং তার চাইতে বেশী ফযীলতওয়ালা আমল আর কারো হবে না, তবে যে ব্যক্তি এ আমল তার চাইতেও বেশী করবে সে ছাড়া। (বুখারী: ৫৯৬১)
 
5️⃣✅ যে ব্যক্তি দিনে সকালে ১ বার দৃঢ় বিশ্বাসের সঙ্গে এ সায়্যিদুল ইসতিগফার “আল্লাহুম্মা আন্তা রব্বি লাইলাহা ইল্লা আন্ত,খালাক্বতানি ওয়া আনা আ’ব্দুক ওয়া আনা আ’লা আ’হদিকা ওয়া ওয়া’দিকা মাসতাতা’ত, আও’যু বিকা মিন শাররিমা সনায়া’ত, আবুওলাকা বিনি’মতিকা আলাই, ওয়া আবুওলাকা বিযাম্বি ফাগ্ ফিরলি ফা ইন্নাহু লা
 
ইয়াগফিরুজ্জুনুবা ইল্লা আন্তা” ১ বার পড়বে আর সন্ধ্যা হবার আগেই সে মারা যাবে, সে জান্নাতী হবে। আর যে ব্যক্তি রাতে প্রথম ভাগে দৃঢ় বিশ্বাসের সঙ্গে এ দু‘আ ১ বার পড়ে নেবে আর সে ভোর হবার আগেই মারা যাবে সে জান্নাতী হবে। (সহীহ বুখারী ৬৩০৬) আরবী দেখে পড়লে শুদ্ধ হবে:- اللَّهُمَّ أَنْتَ رَبِّي لاَ إِلٰهَ إِلاَّ أَنْتَ خَلَقْتَنِي وَأَنَا عَبْدُكَ وَأَنَا عَلٰى عَهْدِكَ وَوَعْدِكَ مَا اسْتَطَعْتُ أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا صَنَعْتُ أَبُوءُ لَكَ بِنِعْمَتِكَ عَلَيَّ وَأَبُوءُ لَكَ بِذَنْبِي فَاغْفِرْ لِي فَإِنَّه“ لاَ يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلاَّ أَنْت.
 
6️⃣✅ “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ”-নবী(সঃ) বলেছেন, যে লোক ইহা ১০ বার পড়বে সে ঐ লোকের সমান হয়ে যাবে, যে লোক ইসমাঈল (আঃ)-এর বংশ থেকে একটা গোলাম মুক্ত করে দিয়েছে। (সহীহ বুখারী-৬৪০৪) “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” বেশী পড়তে পারেন, এটা সর্বোত্তম জিকির, ৭আসমান ও জমিন এক পাল্লায় রাখলে আর অন্যদিকে এই কালিমা এক পাল্লায় রাখলে এর ওজন ভারী হবে।
 
7️⃣✅ যে ব্যক্তি সকাল-সন্ধ্যায় “সুবহানাল্লাহি ওয়াবিহামদিহি” ১০০ বার পাঠ করবে, কিয়ামতের দিনে এর চাইতে উত্তম আমল কেউ আনতে পারবে না। কিন্তু যদি কেউ তার সমান বা তার থেকে বেশি সংখ্যায় ঐ তাসবীহ পাঠ করে থাকে (তাহলে ভিন্ন কথা)। (তিরমিজি: ৩৪৬৯)
 
8️⃣✅ নবী করিম (সাঃ) বলেছেন, “দু’টি কালেমা (বাক্য) রয়েছে, যে দু’টি দয়াময় আল্লাহর কাছে অতি প্রিয়, জবানে (উচ্চারণে) খুবই সহজ, আমলের পাল্লায় অত্যন্ত ভারী। তা হচ্ছে, ‘সুবহানাল্লাহি ওয়াবিহামদিহী, সুবহানাল্লা হিল আ’যীম।’ অর্থাৎ আমরা আল্লাহ তা‘আলার প্রশংসা সহকারে তাঁর পবিত্রতা ঘোষণা করছি, মহান আল্লাহ অতীব পবিত্র।” (সহীহুল বুখারী: ৬৪০৬, মুসলিম: ২৬৯৪)
 
9️⃣✅ নবী (সাঃ) বলেন আমি কি তোমাকে এমন একটি বস্তুর সন্ধান দেব না যে বাক্যটি জান্নাতের রত্ন ভান্ডার? সেটি থেকে একটি রত্নভাণ্ডার হল “লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ” বেশী বেশী পড়তে পারেন।
 
🔟✅ ১০০ বার “সুবহানাল্লাহ” পড়া নবী (সাঃ) বললেন, সে একশ’ তাসবীহ (সুবহানাল্লাহ) পাঠ করলে তার জন্যে এক হাজার পুণ্য লিখিত হবে এবং তার (আমলনামা) হতে ১,০০০ (এক হাজার) পাপ মুছে দেয়া হবে। (মুসলিম: ৬৭৪৫)
 
1⃣1️⃣✅ ‘‘লা- ইলা-হা ইল্লা- আন্তা সুবহা-নাকা ইন্নী কুনতু মিনায্ যোয়া-লিমীন’’ অর্থাৎ-‘‘তুমি ছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোন মা‘বূদ নেই। তুমি পবিত্র, আমি হচ্ছি যালিম বা অত্যাচারী অপরাধী’’ (সূরা ইউনুস: ৮৭) যে কোন মুসলিমই যে কোন ব্যাপারে এ দু‘আ পাঠ করবে, তার দু‘আ নিশ্চয়ই গৃহীত হবে। (তিরমিযী: ৩৫০; আহমাদ: ১৪৬২)
 
1⃣2️⃣✅ ‘‘সুবহানাল্লাহি ওয়ালহামদু লিল্লাহি ওয়ালা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার’’ প্রতিবারে বিনিময়ে তোমার জন্য জান্নাতে একটি করে গাছ রোপিত হবে। (সমস্ত পবিত্রতা আল্লাহর, সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর এবং আল্লাহ ব্যতীত আর কোন ইলাহ নাই, আল্লাহ মহান) (ইবনে মাজাহ: ৩৮০৭)
 
1⃣3️⃣🔰 যে ব্যক্তি রাত্রে সূরা বাকারার শেষ ২ আয়াত (২৮৫ ও ২৮৬ নং আয়াত) পাঠ করবে তা সে ব্যক্তির জন্য যথেষ্ট হয়ে যাবে। (আবু দাউদ: ১২৬৩)
 
1⃣4️⃣🔰 সুরা মুলক (৬৭ নং সুরা) প্রতি রাতে পাঠ করলে আশা করা যায় যে,তা তিলাওয়াতকারীর জন্য কিয়ামতের দিন শাফা‘আত/সুপারিশ করবে, শেষে তাকে ক্ষমা করা হবে এবং ও কবরের আজাব থেকে রক্ষা করবে। (তিরমিযী, আবূ দাউদ, ইবনে মাজা)
 
1⃣5️⃣ 🦀 সৃষ্টির খারাবী থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য সকালে ও সন্ধ্যায় ১ বার করে পাঠ করাঃ এক লোক নাবী (সঃ) এর নিকট এসে বলল, হে আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! গতরাতে একটি বিছু আমাকে দংশন করার কারণে আমি বড় কষ্ট পেয়েছি। তিনি বললেন, যদি তুমি সন্ধ্যায় এ দু’আটি পড়তে “আউযু বিকালিমাতিল্লা-হিত তা-ম্মা-তি মিন শাররি মা- খ্বলাক্ব” أَعُوذُ بِكَلِمَاتِ اللَّهِ التَّامَّاتِ مِنْ شَرِّ مَا خَلَقَ. অৰ্থাৎ- ‘আমি পূর্ণাঙ্গ কালিমাহ দ্বারা আল্লাহর নিকট তার সৃষ্টির খারাবী থেকে পানাহ চাই’। তাহলে সে তোমাকে ক্ষতি করতে পারত না। (মুসলিম: ৬৭৭৩)
 
1⃣6️⃣✳ বেশী বেশী দরুদ পড়া। ( চিন্তা, পেরেশানি দূর হবে ও গুনাহ মাফ হবে। (তিরমিযী) 💚 জিকির কিভাবে করবেন? উত্তরঃ ➡ আর স্মরণ করতে থাক স্বীয় পালনকর্তাকে আপন মনে ক্রন্দনরত ও ভীত-সন্ত্রস্ত অবস্থায় অনুচ্চস্বরে (বড় আওয়াজে নয়) সকালে ও সন্ধ্যায়।
 
আর বে-খবর থেকে না। (আল আরাফ-২০৫) ⚠ তাহলে বুঝা গেল সম্মিলিতভাবে উচু আওয়াজে তাড়াহুড়ো করে ভুল উচ্চারণে লাফিয়ে ঝাপিয়ে/মাথা ঝাকুনি দিয়ে/নিশ্বাসের ঝাকুনি দিয়ে জিকির করা যাবে না।
 
এভাবে কোন সাহাবা (রা:) জিকির করেন নাই এবং নবী (সাঃ) ও এভাবে জিকিরের নির্দেশ দেন নাই এবং আল্লাহ্ তায়ালা আমাদের কোয়ালিটি দেখবেন, কোয়ান্টিটি বা বাড়াবাড়ি নিজস্ব বানানো কোন জিকির দেখবেন না, যা জিকির করবেন শুদ্ধ করে করবেন ও শুদ্ধভাবে পড়বেন। 🤲আল্লাহ্ সকলকে উক্ত আমলগুলো বেশি বেশি করার তাওফীক দান করুক আমীন ইয়া রাব্বাল আলামিন।  

 

আরও পড়ুন…

 

Salam-সঠিক ভাবে সালাম দেওয়া ও নেওয়ার নিয়ম ও পদ্ধতি

 

সালাম ইসলামের সৌন্দর্যময় একটি দিক। সালাম আদান প্রদানের ফলে শত্রু থেকে সখ্যে পরিণত হয়। দুই ব্যাক্তির মাঝে ভালবাসা ফয়দা হয়। চেনা পরিচিতদের মাঝে ভালবাসা বৃদ্ধি পায়। অচেনা মানুষকে আপন করে নেওয়া যায়। এই মনোহর রূপমাধুরী শুধুমাত্র ইসলামেই রয়েছে। যা অন্য কোন ধর্মে নেই।

জনৈক ব্যক্তি আল্লাহর রাসূল (ﷺ)-কে জিজ্ঞেস করলেন— ইসলামে কোন্‌ জিনিসটি উত্তম? তিনি বললেন, তুমি খাদ্য খাওয়াবে ও চেনা অচেনা সকলকে সালাম দিবে। সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ১২

“সালাম” মানেই শান্তি কামনা করা। আমি খুব অবাক হয় মাদ্রাসার ছাত্রদের দেখে! তাদের মাঝে রয়েছে সালামের প্রচার-প্রসার। ছোট-বড় সবাইকে সালাম দেয়। ছোট-বড় কোন ভেদাভেদ নেই। অধুনা আমাদের সমাজে এর বড়ই অভাব।

আমি বড় বলে ছোটরা আমাকে সালাম দিবে। আমি বড়, আমি কেন ছোটদের সালাম দেব? আর একটু নাম করা ব্যাক্তিত্ব হলে তো কথায় নেই। না দিলে পিছনে গিয়ে শেকায়ত করে— অমুকের ছেলে বড় বিয়াদব। আমি পাশ দিয়ে আসতেছি দেখা সত্বেও সালাম দেয়নি।

রাসূল সা. এরকম ভেদাভেদ করতেন না। রাসূল (ﷺ) ছোট-বড় সবাইকে সালাম দিতেন। আমরাও এই অভ্যাসকে নিজেদের মাঝে ফিট্ করে নেওয়ার প্রয়াস চালাব-ইন শা আল্লাহ!

সালাম মানেই শান্তি। কোন মুসলমান ভাইকে দেখামাত্র বললাম, “আসসালামু আলাইকুম।” অর্থ হলো, “আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হোক।” সালামের উত্তরে বলল, “ওয়ালাইকুমুস সালাম”। অর্থ হলো, “আপনার উপরেও শান্তি বর্ষিত হোক।” এভাবে পরিচিত অপরিচিত সবার জন্য শান্তি কামনা করা একমাত্র ইসলামেই রয়েছে।

যে আগে সালাম দেয়, সে অহংকার মুক্ত হয়। কারণ, অহংকার ব্যাক্তিরা আগে সালাম দিতে লজ্জাবোধ করে। বরং তাঁরা অন্যের সালামের প্রতি মুখাপেক্ষী। আমি একজন নামকরা ব্যাক্তি। আমি কীভাবে দিনমজুরকে সালাম দিব? অহংকারীরা সর্বসাধারণ জনগণকে তুচ্ছ মনে করে। কিন্তু, ইসলাম এই ভেদাভেদকে দূরীভূত করতেই সালামকে প্রাধান্য দিয়েছে। হাদীসে আছে—

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন—মানুষের মধ্যে আল্লাহর নিকট সর্বাধিক উত্তম ঐ ব্যক্তি, যে আগে সালাম দেয়। সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৫১৯৭

আল্লাহ তাআলা এরশাদ ফরমান—

আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর যখন তোমাদের সালাম দেওয়া হবে, তখন তোমরা তার চেয়ে উত্তম সালাম দেবে অথবা জবাবে তাই দেবে।’ সুরা-৪ নিসা, আয়াত: ৮৬

তবে অধুনা আমাদের সমাজে কিছু কুসংস্কার এখনো রয়ে গেছে। যখন কোন মুসলমান ভাইয়ের সাথে দেখা হয়, সালাম দিয়ে মুসাফাহা করত। কিন্তু, এখন বলে হাত নাড়িয়ে হাই (hi)। অথচ তাঁর মাঝে কোন বরকত নেই। না আছে নেকি, না আছে বরকত!

আরেকটি কুসংস্কার হলো— মাথা নিছু করে পা ধরে সালাম করা। যেটি সম্পূর্ণ শরীয়তবহির্ভূত কাজ। একমাত্র আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ’লা ছাড়া কারো কাছে মাথা নত করা সম্পূর্ণ হারাম। পা ধরে সালাম বিধর্মীদের সংস্কার, যেটি আঁকড়ে ধরছে মুসলমানরা।

ইসলামের মনোহারিত্ব নিয়ে লিখতে গেলে অনেক লিখা। তন্মধ্যে সালাম হলো ইসলামের সৌন্দর্যময় একটি দিক। সালাম নিয়ে সংক্ষিপ্ত আকারে উপস্থাপন করলাম।

 

সালামের সঠিক ও সুন্নতি পদ্ধতি কি?

 

 
 
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল দাঈ: ইসলাম এক উন্নত সভ্যতা ও সংস্কৃতির প্রতিভূ। এর প্রতিটি কর্মই অত্যন্ত চমৎকার, পবিত্র ও কল্যাণকর। ইসলামি সম্ভাষণ রীতি হলো, এর উৎকৃষ্ট উদাহরণ। একজন বিবেকবান ব্যক্তি যদি চিন্তা করে তাহলে তার কাছে প্রতিভাত হবে যে, ইসলামি সম্ভাষণ রীতি অন্য সকল ধর্মীয় ও প্রচলিত রীতিনীতি থেকে সুন্দর, অর্থবহ ও গাম্ভীর্যপূর্ণ।
 
এটি কেবল সম্ভাষণ নয় বরং রীতিমত একটি ইবাদত। অর্থাৎ এর মাধ্যমে আমরা নেকি অর্জন করতে পারি কিন্তু হাই-হ্যালো, আদাব, নমস্কার ইত্যাদি বিধর্মীদের সম্ভাষণ রীতিতে ইসলামি রীতির মদো তাৎপর্য, গাম্ভীর্য ও আবেদন কখনও খুঁজে পাওয়া যায় না। নিম্নে সালামের সঠিক পদ্ধতি এবং তার মমার্থ তুলে ধরা হলো:

 

সালামের সঠিক ও সুন্নতি পদ্ধতি:

 
সালামের শরিয়ত সম্মত তিনটি স্তর রয়েছে:
 
◍ ১) পূর্ণাঙ্গ ও সর্বোচ্চ স্তর হলো, এভাবে বলা: ‘আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু’। [অর্থ: আপনার প্রতি শান্তি, আল্লাহর রহমত ও বরকত অবতীর্ণ হোক]
◍ ২) এর চেয়ে নিম্নস্তরের হলো, এভাবে বলা, “আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ” [অর্থ: আপনার প্রতি শান্তি এবং আল্লাহর রহমত অবতীর্ণ হোক]।
◍ ৩) সবচেয়ে নিম্নস্তরের হলো: “আসসালামু আলাইকুম” [অর্থ: আপনার প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক] বলা।
 
হাদিসে এসেছে যে,
عن عِمران بن الحصين رضي الله عنهما قَالَ: جاءَ رجُلٌ إِلَى النَّبيِّ ﷺ فَقَالَ: “السَّلامُ عَلَيكُم”، فَرَدَّ عَلَيْهِ، ثُمَّ جَلَسَ، فَقَالَ النبيُّ ﷺ: عَشْرٌ، ثُمَّ جَاءَ آخَرُ فَقَالَ: “السَّلامُ عَلَيكُم وَرَحْمَةُ اللهِ”، فَرَدَّ عليهِ، فَجَلَسَ، فَقَالَ: عِشْرون، ثُمَّ جَاءَ آخَرُ فَقَالَ: “السَّلامُ عَلَيكُم وَرَحْمَةُ الله وَبَرَكَاتُه”، فَرَدَّ عليهِ، فَجَلَسَ، فَقَالَ: ثَلاثُونَ. رواه أَبُو داود والترمذي وقال: حديثٌ حسنٌ.
 
ইমরান ইবনুল হুসাইন রা. হতে বর্ণিত, একজন ব্যক্তি মসজিদে প্রবেশ করে বলল, ‘আসসালামু আলাইকুম’। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আালইহি ওয়া সাল্লাম মসজিদে বসে ছিলেন। সাহাবিগণও তার সাথেই ছিলেন। তিনি সালামের উত্তর দিলেন। অতঃপর লোকটি বসলে তিনি বললেন, দশ। (অর্থাৎ তুমি ১০টি নেকি পেয়েছ।) এরপর আরেক ব্যক্তি এসে বলল, “আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ।”
 
তিনি সালামের উত্তর দিলেন। অতঃপর লোকটি বসলে তিনি বললেন, বিশ। (অর্থাৎ তুমি ২০টি নেকি পেয়েছ।) অতঃপর আরও এক ব্যক্তি এসে বলল, “আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।” তিনি সালামের উত্তর দিলেন। অতঃপর লোকটি বসলে তিনি বললেন, ত্রিশ। (অর্থাৎ তুমি ৩০টি নেকি পেয়েছ) [আবু দাউদ, তিরমিযী- হাদিসটি হাসান।]
 
➧ ইমাম নওবি রহ. বলেন, ” اعلم أن الأفضل أن يقول المُسَلِّم : السَّلامُ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَةُ اللَّهِ وَبَرَكَاتُهُ ، فيأتي بضمير الجمع وإن كان المسلَّم عليه واحداً ، ويقولُ المجيب : وَعَلَيْكُمُ السَّلامُ وَرَحْمَةُ اللَّهِ وَبَركاتُه .
 
“জেনে রাখো, সালাম দাতার জন্য সবচেয়ে উত্তম হলো, “আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু” বলা। বহু বচনের সর্বনাম ব্যবহার করবে যদিও যাকে উদ্দেশ্য করে সালাম দেয়া হচ্ছে সে একজন ব্যক্তি হয়। আর উত্তর দাতা বলবে, “ওয়ালাইকুমুস সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহ।”
 
(আল আযকার, পৃষ্ঠা: ৩৫৬-৩৫৮) ❂ উল্লেখ্য যে, মাঝেমধ্যে ‘সালামুন আলাইকুম’, “সালামুন আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ”, সালামুন আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ” ইত্যাদি বাক্য দ্বারাও সালাম প্রদান করা জায়েজ আছে।
 
এ বাক্য দ্বারা ফেরেশতাগণ জান্নাতবাসীদেরকে সম্ভাষণ জানাবেন বলে কুরআনের একাধিক আয়াতে বর্ণিত হয়েছে। দেখুন: সূরা যুমার/৭৩, সূরা নাহল/৩২। অনুরূপভাবে সূরা কাসাস এর ৫৫ নং এবং সূরা আনআমের ৫৪ নং আয়াতের মাধ্যমেও এ সব বাক্য দ্বারা সালাম দেয়ার বৈধতা প্রমাণিত হয়। তাছাড়াও এসব বাক্য দ্বারা আমাদের পারস্পারিক সালাম লেনদেন প্রসঙ্গে আলাদা সহিহ হাদিস বর্ণিত হয়েছে।
হাদিসটি হলো:
 
أنَّ رجُلًا مرَّ على رسولِ اللهِ صلَّى اللهُ عليه وسلَّم وهو في مجلسٍ فقال: سلامٌ عليكم فقال: ( عشرُ حسناتٍ ) ثمَّ مرَّ رجُلٌ آخَرُ فقال: سلامٌ عليكم ورحمةُ اللهِ فقال: ( عشرونَ حسنةً) فمرَّ رجُلٌ آخَرُ فقال: سلامٌ عليكم ورحمةُ اللهِ وبركاتُه فقال: ( ثلاثونَ حسنةً ) فقام رجُلٌ مِن المجلسِ ولم يُسلِّمْ فقال النَّبيُّ صلَّى اللهُ عليه وسلَّم: (ما أوشَك ما نسي صاحبُكم ! إذا جاء أحدُكم إلى المجلسِ فلْيُسلِّمْ فإنْ بدا له أنْ يجلِسَ فلْيجلِسْ فإنْ قام فلْيُسلِّمْ فليستِ الأُولى بأحقَّ مِن الآخِرةِ
 
আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, এক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট দিয়ে যাচ্ছিল। তিনি তখন এক মজলিসে ছিলেন।
 
সে বলল, আসসালামু আলাইকুম (অর্থ: আপনার প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (সালামের জবাব দিয়ে বললেন): “দশ নেকি।” অতঃপর অপর এক ব্যক্তি যাওয়ার সময় বলল: সালামুন আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ (অর্থ: আপনার/ প্রতি শান্তি ও আল্লাহর রহমত বর্ষিত হোক)।
 
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “বিশ নেকি।” আরেক ব্যক্তি সেখান দিয়ে যাওয়ার সময় বলল: সালামুন আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ (অর্থ: আপনার উপর শান্তি, আল্লাহর রহমত ও বরকত বর্ষিত হোক)।
 
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (সালামের জবাব দিয়ে বললেন) বললেন: “তিরিশ নেকি।” অতঃপর এক ব্যক্তি মজলিস থেকে উঠে চলে গেলো কিন্তু সালাম দিলো না।
 
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনে, “হয়তো তোমাদের সাথী ভুলে গেছে। তোমাদের কেউ বৈঠকে এসে পৌছলে যেন সালাম দেয়। তারপর বৈঠকে বসার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করলে বসবে। আবার সে যখন চলে যাবে তখনও যেন সালাম দেয়। কেননা পরের সালাম পূর্বের সালামের চেয়ে কম মর্যাদাপূর্ণ নয়।” (তিরমিযী, নাসাঈ, ইবনে হিব্বান, আহমাদ, আবু দাউদ-সহিহ)
 
❒ ‘স্লামালিকুম’ এর কি কোনও অর্থ আছে? এভাবে কি সালাম দেয়া যাবে?
 
উত্তর:’স্লামালিকুম’ মূলত: ‘আসসালামু আলাইকুম’ এর বিকৃত রূপ। আমাদের সমাজের ইসলাম সম্পর্কে জ্ঞানহীন কতিপয় মানুষ বা তথাকথিত উচ্চ ডিগ্রীধারী শিক্ষিত মূর্খরা এভাবে বলে থাকে।
 
এর কোনও অর্থ নাই। তাই জেনেবুঝে ‘স্লামালিকুম’ এ বিকৃত শব্দ দ্বারা সালাম দেয়া বৈধ নয়। বরং আমাদের কতর্ব্য, সঠিক পদ্ধতি ও বিশুদ্ধ উচ্চারণে সালাম দেয়া। আল্লাহ তাওফিক দান করুন এবং। আমিন। লেখক: আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল, দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব  

সম্মানিত ভাই ও বোনেরা, সালাম দেওয়া সুন্নত এবং উত্তর দেওয়া ওয়াজিব। আমাদের অনেকেরই সালাম দিতে গিয়ে বা সালামের উত্তর দিতে গিয়ে অজান্তেই ভুল হয়ে যায়। যেমনঃ আমরা প্রতিদিন অনেককেই এভাবে সালাম দিতে শুনি যে, স্লামালাইকুম, আস সালামালাইকুম, সেলামালাইকুম, ইত্যাদি। আবার উত্তর দেয়ার সময়ও শোনা যায় ভুল শব্দের ব্যবহার।

যেমন, অলাইকুম সালাম, অলাইকুম আস-সালাম ইত্যাদি। সালাম একটি দুআ। ইসলামের শেআর ও প্রতিক পর্যায়ের একটি আমল। এর সহীহ উচ্চারণের প্রতি গুরুত্ব দেয়া জরুরি। কমপক্ষে এতটুকু বিশুদ্ধ উচ্চারণ অবশ্যই জরুরি, যার দ্বারা অর্থ ঠিক থাকে।

সালাম এর সঠিক উচ্চারণ হলো, السَّلَامُ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَةُ اللهِ وَبَرَكَاتُهُ আস-সালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি, ওয়া বার-কাতুহ্। وَعَلَيْكُمُ السَّلَامُ وَرَحْمَةُ اللهِ وَبَرَكَاتُهُ ‘ওয়া আলাইকুমুস-সালাম, ওয়া রহমাতুল্লাহি, ওয়া বার-কাতুহ্।

আরবী দেখে এর সহীহ উচ্চারণ শিখে নেয়া উচিত অন্যথায় কন্ঠ বাদ পড়ে যায়- ‘ওয়া আলাইকুমুস সালাম’-এর স্থলে ‘অলাইকুম আস সালাম’ হয়ে যায়, যা স্পষ্ট ভুল। ইসলামে সালামের গুরুত্ব অপরিসীম। সালাম শান্তির প্রতীক। সালামে রয়েছে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য। সালাম এভাবে দিতে হয়, ‘আস্সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।’ সালাম মুসলমানদের পরস্পরে ভালোবাসা, হৃদ্যতা সৃষ্টি করে।

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমরা ইমানদার না হওয়া পর্যন্ত জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না, আর ইমানদার হতে পারবে না পরস্পরে ভালোবাসা না হলে। তোমাদের কি এমন একটি বিষয়ের কথা বলব, যা করলে তোমাদের পরস্পরে ভালোবাসা সৃষ্টি হবে? তোমরা পরস্পরের মধ্যে সালামের ব্যাপক প্রসার ঘটাও।’ (মুসলিম : ৫৪)

এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে প্রশ্ন করলেন, ইসলামের কোন কাজ সবচেয়ে ভালো? রাসুল (সা.) বললেন, ‘খাবার খাওয়ানো এবং পরিচিত-অপরিচিত সবাইকে সালাম দেওয়া।’ (বোখারি : ১২)

সালামের প্রতিটি বাক্যে দশ নেকি। সালামে মোট তিনটি বাক্য আছে। সুতরাং যে পূর্ণ সালাম দেবে তার ত্রিশটি নেকি অর্জন হবে। একবার এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে এসে বলল, ‘আস্সালামু আলাইকুম’, রাসুল তার উত্তর দিলেন, তারপর সে বসল। রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, ‘দশ নেকি।’ অতঃপর অন্য এক ব্যক্তি এলো। সে বলল, ‘আস্সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ।’

রাসুল (সা.) উত্তর দিলেন। পরে ওই ব্যক্তি বসে পড়ল। রাসুল (সা.) বললেন, ‘বিশ নেকি।’ অতঃপর অন্য একজন এলো। সে বলল, ‘আস্সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহু।’ রাসুল (সা.) উত্তর দিলেন। সেও বসে পড়ল। রাসুল (সা.) বললেন, ‘ত্রিশ নেকি।’

(তিরমিজি : ২৬৮৯) সালামের বিধান ও তার পদ্ধতি : প্রথমে সালাম দেওয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাত, উত্তর দেওয়া ওয়াজিব। যদি সালামের দ্বারা কোনো দলকে উদ্দেশ্য করা হয়, তাহলে তার উত্তর দেওয়া ওয়াজিবে কেফায়া।

অর্থাৎ একজন উত্তর দিলে সবার পক্ষ থেকে আদায় হয়ে যাবে, তবে সবারই উত্তর দেওয়া উত্তম। উত্তর দেওয়ার সময় সালামের চেয়ে বাড়িয়ে উত্তর দেওয়া সুন্নাত। যেমন কেউ ‘আস্সালামু আলাইকুম’ বললে উত্তরে ‘ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহ’ বলবে।

কেউ ‘আস্সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ’ বললে উত্তরে ‘ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহু’ বলবে। চিঠি বা মেসেজ ইত্যাদির শুরুতে সালাম দেওয়া সুন্নাত। এর মৌখিক বা লিখিত উত্তর দেওয়া ওয়াজিব। (তিরমিজি ২/১০১)

সালামের আদবসমূহ : মানুষের মধ্যে সালামের ব্যাপক প্রসার ঘটানো প্রয়োজন, যাতে তা মুসলমানদের প্রতীকে পরিণত হয়। বিশেষ কোনো দলকে সালাম দেওয়া বা শুধু বড়দের দেওয়া কিংবা ছোটদের না দেওয়া উচিত নয়।

অনুরূপভাবে অপরিচিতকে বাদ দিয়ে শুধু পরিচিতকে সালাম দেওয়াও কাম্য নয়। (বুখারি : ১২) উত্তম হলো- ছোট বড়কে প্রথমে সালাম দেবে। পথচারী উপবিষ্টকে সালাম দেবে। আরোহণকারী পথচারীকে সালাম দেবে। কম লোক বেশি লোককে সালাম দেবে।

(বুখারি : ৬২৩১) উচ্চ স্বরে সালাম দেওয়া ও উত্তর দেওয়া সুন্নাত। কেননা সালাম উচ্চারণ করতে হয়। হাত বা মাথার ইশারা ইত্যাদি সালাম বলে বিবেচিত হবে না।

হ্যাঁ, দূরে হলে বা উত্তর শুনতে কোনো কিছু বাধা হলে মুখে উচ্চারণের সঙ্গে সঙ্গে হাত বা মাথার ইশারায় উত্তর দেওয়ার কথা জানিয়ে দেবে। কাছে হলে সালামে হাত ওঠানো অপ্রয়োজনীয় ও সুন্নাতের খেলাফ। (তিরমিজি ২/৯৯)

সুন্নাত হলো দুজন আলাদা হওয়ার পর পুনরায় সাক্ষাৎ হলে আবার সালাম দেওয়া। সাহাবায়ে কেরাম যখন হাঁটতেন, তখন তাঁদের সামনে কোনো গাছ অথবা স্তূপ পড়ত, তাঁরা ডানে-বাঁয়ে আলাদা হয়ে যেতেন। অতঃপর আবার সাক্ষাৎ হলে একে অন্যকে সালাম দিতেন।

সালাম শুধু মুমিনদের অভিবাদন, কাফেরদের সালাম দেওয়া বৈধ নয়। হ্যাঁ, যদি এমন জায়গায় উপস্থিত হয় যেখানে কাফের-মুসলমান একত্রে থাকে, সেখানে সালাম দেওয়ার সময় মুসলমানের নিয়ত করবে। (সুনানে আবি দাউদ : ৫২০৫)

যদি কোনো অমুসলিম সালাম দেয় তাহলে তার জবাবে ‘আস্সালামু আলা মানিত্তাবাআল হুদা’ বলবে। (মুসনাদে আহমাদ : ২৪৩০৪) কিংবা ‘ওয়ালাইকা’ বা ওয়ালাইকুম’ বলবে। অমুসলিমদের বিশেষ প্রয়োজনে সালাম ছাড়া অন্য কোনোভাবে অভিবাদন জানানো বৈধ। যেমন শুভ সকাল বা শুভ রাত্রি ইত্যাদি।

তবে এমন বাক্য ব্যবহার করা যাবে না, যা অন্য ধর্মের জন্য নির্ধারিত। অন্যের মাধ্যমে কারো কাছে সালাম পৌঁছানোও সুন্নাত। যার কাছে সালাম পৌঁছানো হবে উত্তর দেওয়া তার দায়িত্ব। (তিরমিজি ২/৯৯) মাহরাম (যাদের দেখা বৈধ) নারীদের বা স্ত্রীদেরও সালাম দেওয়া সুন্নাত।

আর ফেতনা থেকে নিরাপদ হলে পরনারীদেরও সালাম দেওয়া জায়েজ। অনুরূপ নারীরাও পরপুরুষদের ফেতনার আশঙ্কা না হলে সালাম দিতে পারবে। (রদ্দুল মুহতার ৬/৩৬৯) কাউকে ঝুঁকে সালাম দেওয়া জায়েজ নেই। (তিরমিজি : ২৭২৮)

যেসব অবস্থায় সালাম দেওয়া মাকরুহ : যে ব্যক্তি সালামের উত্তর দিতে অক্ষম তাকে সালাম দেওয়া মাকরুহ। যথা : নামাজ, আজান-ইকামত, জিকির, তিলাওয়াত, ধর্মীয় জ্ঞানচর্চা, খানাপিনা ও ইস্তিঞ্জারত ব্যক্তিকে সালাম দেওয়া, গুনাহের কাজে লিপ্ত ব্যক্তিকে সালাম দেওয়া, স্ত্রী সহবাস ইত্যাদি অবস্থায় সালাম দেওয়া মাকরুহ। (রদ্দুল মুহতার ১/৪১৪) লেখক : ফতোয়া গবেষক, ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার

কিছু কিছু ক্ষেত্র সালাম দেয়া যাবে না

১. আযানরত, ইকামতরত কিংবা খুদবা পড়া অবস্থায় কোন ব্যক্তিকে সালাম দেওয়া উচিত নয়।

২. যে ব্যক্তি তার স্ত্রীর সাথে খেল-তামাশায় মগ্ন তাকে সালাম দেওয়া উচিত নয়।

৩. বার্থ রুম এ থাকা অবস্থায় সালাম দেওয়া উচিত নয়।

৪. অমুসলিমকে সালাম দেওয়া উচিত নয়। তাই আমরা আমাদের সমাজে, পরিবারে, অফিসে সালামের প্রচলন করব। সেই সাথে আমরা ইসলামকে মেনে চলব। আল্লাহ আমাদের সহায় হোন।

অমুসলিমকে সালাম দেওয়ার বিধান কী? এবং তাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করা কি জায়েজ?

অমুসলিমকে ‘সালাম’ দেওয়া বৈধ নয়। কোনো প্রয়োজনে দিতে হলে ‘আসসালামু আল মানিত্তাবাআল হুদা’ বলবে। আর অমুসলিমরা সালাম দিলে তদুত্তরে শুধু ‘ওয়া আলাইকুম’ বলবে। বন্ধুত্বের ক্ষেত্রে মুসলিমদের ওপর অমুসলিমদের প্রাধান্য দেওয়া নিন্দনীয়।

তবে তাদের সঙ্গে যাবতীয় লেনদেন, সদাচরণ ও সাধারণ সম্পর্ক রাখা বৈধ। (সুরা মায়েদা, আয়াত : ৫১, সুরা আল ইমরান, আয়াত : ১১৮, আল বাহরুর রায়েক : ৮/৩৭৪, ফাতাওয়ায়ে মাহমুদিয়া : ১৯/৫৪৫, ফাতাওয়ায়ে ফকিহুল মিল্লাত : ১২/১০৩)

 

সালাম আদান-প্রদানে যে ১২ ভুল করা উচিত নয়

 

  ১. অশুদ্ধ উচ্চারণে সালাম দেওয়া: এটি মারাত্মক ভুল কাজ। আসসালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ হচ্ছে পূর্ণ সালাম। শুধু আসসালামু আলাইকুম বললেও চলবে। তবে উচ্চারণে ভুল করা যাবে না।

২. ছোটদের প্রতি বড়দের সালাম না দেওয়া: এটিও ভুল প্রচলন। বড় বা বয়স্ক মানুষ ছোটদের সালাম দিতে কোনো বাধা নেই। যেমন- শিক্ষক ছাত্রদের এবং বাবা-মা সন্তানদের সালাম দেবেন। আগে সালামকারী বেশি সওয়াব ও মর্যাদার অধিকারী হয়ে থাকেন।

৩. অপরিচিত কাউকে সালাম না দেওয়া: পরিচিত-অপরিচিত সবাইকে সালাম দেওয়ার নির্দেশ এসেছে। তাই পরিচিত ও মুখ চিনে সালাম দেওয়া গর্হিত ও নিন্দিত কাজ।

৪. সালাম দেওয়ার সময় মাথা ও বুক ঝুঁকে নিচু করা: সালাম দেওয়ার সময় মাথা ও বুক ঝুঁকে নিচু হয়ে সালাম দেওয়া নিষেধ। অনেকে পদস্থ বা বড় কোনো ব্যক্তিকে সালাম দেওয়ার সময় এমন করে থাকে। হাদিসে এ বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা এসেছে। এ থেকে বিরত থাকা বাঞ্ছনীয়।

৫. সালামের উত্তর দিয়ে আবার সালাম: আপনাকে কেউ সালাম দিল, আপনি উত্তর দেওয়ার পর ওই সালামকারীকে আবার সালাম দিলেন। অনেকে এ কাজটি অজ্ঞতাবশত করে থাকেন। উত্তম হলো, কারো সালামের অপেক্ষা না করে নিজেই আগে সালাম দেওয়া। কিন্তু কেউ আগে সালাম দিয়ে ফেললে তার সালামের উত্তর দেওয়াই নিয়ম। তাকে আবার সালাম দিতে হবে না।

৬. সালামের উত্তর না দিয়ে আবার সালাম: সালাম পাওয়ার পর উত্তর দেওয়াই বিধান। কিন্তু অনেকে সালাম দেওয়ার পর উত্তর না দিয়ে সালামদাতাকে আবার সালাম দেয়। এমনটি ঠিক নয়। দুজনের একজন সালাম দেবেন, অপরজন সালামের উত্তর দেবেন এটাই বিধান।

৭. সালাম দেওয়ার পর সালাম দিয়েছি বলা: কাউকে সালাম দেওয়ার পর সালাম না শুনলে বা উত্তর না-দিলে আমরা বলি, ‘আপনাকে সালাম দিয়েছি’। এভাবে বলা ঠিক নয়। তাকে আবার পূর্ণ সালাম দেওয়াই নিয়ম।

৮. কতক্ষণ বসার পর সালাম দেওয়া: সাক্ষাতের শুরুতেই সালাম দেওয়া সুন্নত। কতক্ষণ বসার পর সালাম করা অনুচিত।

৯. সালাম পাঠানোর পদ্ধতি: কারো কাছে সালাম পাঠানোর দরকার হলে আমরা বলি, অমুককে গিয়ে আমার সালাম দেবেন/বলবেন। এভাবে বলা ঠিক নয়। নিয়ম হল এভাবে বলা, অমুককে আমার পক্ষ থেকে আসসালামু আলাইকুম… বলবেন। তেমনি, সালাম পৌঁছানোর পরও ‘অমুকে আপনাকে সালাম দিয়েছেন’ এ রকম না বলে বলা উচিত, অমুক আপনাকে আসসালামু আলাইকুম… বলেছেন। 

এক্ষেত্রে সালামের উত্তরদাতাও কেবল প্রেরককে উত্তর দেবেন না। বরং প্রেরক ও বাহক উভয়কে দোয়ায় শরিক করবেন। তিনি এভাবে উত্তর দেবেন, ওয়া আলাইকা ওয়া আলাইহিস সালাম।

১০. ফোনে বা সাক্ষাতে সালামের আগে হ্যালো বা অন্যকিছু বলা: ফোন বা মোবাইল ফোনে সালাম দেওয়ার আগে হ্যালো বা অন্য কোনো কথা বলা ঠিক নয়। আগে সালাম দিয়ে তারপর অন্য কথা বলবেন। হ্যালো বলার দরকার হলে সালাম দেওয়ার পর বলবেন। ফোন ছাড়া সাক্ষাতের বেলায়ও কথাবার্তার আগেই সালাম দেওয়াই সুন্নত। কেননা রাসুলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, কথাবার্তা বলার আগে সালাম দিতে হয়। (তিরমিযি, হাদিস নং- ২৬৯৯)

১১. অনুষ্ঠান শেষে বা বিয়ের আকদ হওয়ার পর সালাম: অনেক জায়গায় দেখা গেছে, কোনো অনুষ্ঠান- বিশেষত দোয়া বা এ ধরনের কোনো মজলিস শেষ হওয়ার পর সালাম দেন অনেকে। এছাড়া বিয়ের আকদ হওয়ার পর বর উপস্থিত সবাইকে সালাম দেন।

বর সালাম না দিতে চাইলে বা ভুলে গেলে অন্যরা তাকে স্মরণ করিয়ে দেয় যে, সালাম দাও। না দিলে খারাপ এবং বেয়াদবি মনে করা হয়। এসব কুসংস্কার ও ভুল প্রচলন। সালাম হবে সাক্ষাতের সময়। সুতরাং কোনো অনুষ্ঠানে যাওয়ার পর কারো সঙ্গে দেখা হলে তাকে সালাম করবেন। কিন্তু অনুষ্ঠান শেষে সালামের প্রথা বর্জন করা উচিত।

১২. বক্তব্যে প্রথমেই সালাম দেওয়া: সাক্ষাতের শুরুতেই সালাম দিয়ে কথাবার্তা শুরু হবে- এটিই ইসলামের নিয়ম। কিন্তু আজকাল বিভিন্ন অনুষ্ঠানে দেখা যায়, বক্তা বিভিন্ন কথা বলার পর সালাম দেন।

যেমন তিনি বলেন, মঞ্চে উপবিষ্ট মান্যবর সভাপতি, অতিথিরা… সবাইকে আমার সালাম আসসালামু আলাইকুম। এভাবে সালাম বলা ইসলামী রীতির পরিপন্থি। শ্রোতা ও দর্শকদের মুখোমুখি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই  সালাম দেওয়া নিয়ম।-প্রিয়.কম লিখেছেন: মুফতি মুহিউদ্দীন কাসেমী, সম্পাদনা: সোহেলুর রহমান  

 

অনেকেই সালাম দেওয়ার সময় দেখি কপালে হাত ঠেকান। এটা করা কি ঠিক?

  উত্তর : সালাম দেওয়ার সময় হাত উঠানো বা কপালে ঠেকানো নিতান্তই অর্থহীন ব্যাপার। মুখে ‘আসসালামু আলাইকুম’ স্পষ্ট করে বলাই সালাম।

হাত উঠানো বা কপালে ঠেকানো দেশিয় রীতি, সুন্নত বা শরীয়তের বিধান নয়। এসব রীতি যথাসম্ভব বর্জনীয়। উত্তর দিয়েছেন : আল্লামা মুফতি উবায়দুর রহমান খান নদভী, সূত্র : জামেউল ফাতাওয়া, ইসলামী ফিক্হ ও ফাতওয়া বিশ্বকোষ। প্রশ্ন পাঠাতে নিচের ইমেইল ব্যবহার করুন। info@IslamiDawahCenter.com

 

আইডিসির সাথে যোগ দিয়ে উভয় জাহানের জন্য ভালো কিছু করুন!

 

আইডিসি এবং আইডিসি ফাউন্ডেশনের ব্যপারে  জানতে  লিংক০১ ও লিংক০২ ভিজিট করুন।

আইডিসি  মাদরাসার ব্যপারে বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন। 

আপনি আইডিসি  মাদরাসার একজন স্থায়ী সদস্য /পার্টনার হতে চাইলে এই লিংক দেখুন.

আইডিসি এতীমখানা ও গোরাবা ফান্ডে দান করে  দুনিয়া এবং আখিরাতে সফলতা অর্জন করুন।

কুরআন হাদিসের আলোকে বিভিন্ন কঠিন রোগের চিকিৎসা করাতেআইডিসি ‘র সাথে যোগাযোগ করুন।

ইসলামিক বিষয়ে জানতে এবং জানাতে এই গ্রুপে জয়েন করুন।