Qualities Of A Smart Imam /একজন স্মার্ট ইমামের গুণাবলী

 

একটি আদর্শ মসজিদ প্রতিষ্ঠার অন্যতম শর্ত হলো একজন আদর্শ ইমাম। সেই ইমাম শুধুমাত্র বেতনভুক্ত ইমাম হবেন না, তিনি সমাজ পরিবর্তনে দা’ঈর ভূমিকা পালন করবেন। একজন আদর্শ ইমাম পেতে হলে প্রথমত মসজিদ কমিটিকে আদর্শ মসজিদ কমিটি হতে হবে। আগের পর্বে আমরা একটি আদর্শ মসজিদ কমিটি নিয়ে আলোচনা করেছি।

এই লেখাতে যা থাকবে, তা মূলত একটি প্যাকেজ। সবগুলো গুণাবলী একজনের মধ্যে না-ও পাওয়া যেতে পারে। কিন্তু, ২-১ টা গুণাবলী দেখে যদি কোনো ইমাম বা ভবিষ্যৎ ইমামের মনে দাগ কাটে, তাহলে সেটা স্বার্থক হবে।

যোগ্য আলেম হবেনঃ 

মসজিদের ইমাম যিনি হবেন, তিনি ইলমি যোগ্যতাসম্পন্ন হবেন। তাঁকে নিয়োগ দেবার সময় আশেপাশের মাদরাসার শিক্ষক, আশেপাশের যোগ্য আলেমদেরকে ইন্টার্ভিউ বোর্ডে রাখা যেতে পারে। এর ফলে তারা ধরতে পারবেন ইমাম হিসাবে যিনি আবেদন করেছেন, তিনি যোগ্য কিনা। গ্রামের মসজিদে নানান মতের মানুষ নামাজ পড়বে। ভিন্ন মতের প্রতি তিনি কতোটা সহনশীল সেটাও দেখতে হবে।

বিষয়ভিত্তিক সাপ্তাহিক ওয়াজঃ

প্রতি শুক্রবার ইমাম সাহেব ওয়াজ করেন। বেশিরভাগ মসজিদে দেখা যায় বিচ্ছিন্নভাবে সময় কাটানো ওয়াজ চলে। কিচ্ছা-কাহিনীতে ভরপুর থাকে ওয়াজ। মুসল্লীরা ওয়াজ শুনতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে না, মসজিদের মধ্যে ঝিমায়!

সপ্তাহে একদিন পুরো এলাকার মুসল্লীদের উদ্দেশ্যে অনেক গুরুত্বপূর্ণ কথা বলার সুযোগ থাকে। সমসাময়িক বিষয়গুলো নিয়েও গুছিয়ে বলা যায়। সেজন্য পূর্বপ্রস্তুতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কোন সপ্তাহের ওয়াজে কী নিয়ে কথা বলবেন, সেটা নিয়ে আগেই প্রস্তুতি নিলে, ‘ডেমো ওয়াজ’ করে নিলে সময়মতো সেটা গুছিয়ে বলতে পারবেন। মুসল্লীদের জ্ঞান, অভিজ্ঞতার আলোকে বক্তব্য উপস্থাপন করতে হবে। ভার্সিটির মসজিদের ইমাম যিনি, তিনি একরকম বক্তব্য দিবেন, গ্রামের মসজিদের ইমাম যিনি, তিনি অন্যরকম বক্তব্য রাখবেন।

কাউন্সিলিং করাঃ 

মসজিদের ইমামের কাছে প্রায়ই গ্রামের মানুষজন যায় কাউন্সিলিং করতে। যেকোনো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে যেমন ইমামের কাছে যায়, তেমনি যায় মনের দুঃখ শেয়ার করতে। ইমাম সাহেব মুসল্লীদের সাথে সম্পর্ক জোরদার করার জন্য তাদেরকে সঠিক পরামর্শ দিতে পারেন। যে বিষয়ে তাঁর জানাশোনা থাকবে না, সে বিষয়ে পরামর্শ না দিয়ে বরং ঐ বিষয়ের বিশেষজ্ঞকে সাজেস্ট করতে পারেন।

‘আসমান’ উপন্যাসে পড়েছিলাম একজন যুবক ডিপ্রেশনে পরে একজন ইমাম সাহেবের কাছে যায় মন শান্ত করার জন্য।

আত্মমর্যাদার ব্যাপারে সচেতন থাকাঃ

অনেক ইমাম আছেন, যারা মানুষের কাছে শুধু নামাজের ইমাম হিসেবেই খ্যাত। এর বাইরে তাদের ব্যক্তিত্ব খুবই ঠুনকো থাকে। বিশেষত মানুষভেদে যখন তারা সম্মান দেখান (অর্থাৎ ধনী লোকদের), তখন বাকিরা তাকে খারাপ চোখে দেখে। তারউপর, কেউ কেউ মানুষের কাছে টাকা চান (ধার নেয়া বা একান্ত প্রয়োজনে চাওয়া অন্য বিষয়)। এটাকে তারা অনেকটা অভ্যাস বানিয়ে ফেলেন। এগুলো তাদের আত্মমর্যাদার জন্য হানিকর।

তরুণদেরকে কাছে টানাঃ

তরুণরা হলো ভবিষ্যতের পাইপলাইন। তাদেরকে নিয়ে একজন ভিশনারী ইমাম সাহেব পরিকল্পনা করতে পারেন। মসজিদে যারা নামাজ পড়তে আসে, তাদের সাথে নামাজ শেষে বসে কথা বলতে পারেন। যারা নামাজে আসে না, তাদেরকে কিভাবে নামাজে আনা যায় সেজন্য ফিকির করতে পারেন।

তারজন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্থান হলো খেলার মাঠ। মাঝেমধ্যে ইমাম সাহেব খেলার মাঠে যেতে পারেন, গিয়ে শুধু দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে এলাকার তরুণদেরকে দেখতে পারেন। পরবর্তীতে তাদের সাথে কথা বলতে পারেন (কিন্তু, অবশ্যই খেলা থামিয়ে না)।
আমার মনে আছে, ছোটোবেলায় ফুটবল খেলার সময় আমাদের মসজিদের ইমাম সাহেব বলেছিলেন, “দাও, আমি একটি শট মারি।” ইমাম সাহেবের সেই শট আমার এখনো চোখে ভাসে। তিনি আমার কিশোর মনে ঠিকই স্থান করে নেন।

মাঝেমধ্যে এরকম ডিপ্লোমেটিক মুভ এলাকার তরুণদের মনে রেখাপাত করতে পারে। ইমাম সাহেব চাইলে পরিস্থিতি বুঝে এরকম কিছু করতে পারেন।

তিনি পকেটে সবসময় চকোলেট রাখতে পারেন। এলাকার ছোটো বাচ্চারা মসজিদে আসলে তাদেরকে দিবেন। কোনো শিশু রাস্তা দিয়ে বাবার সাথে হেঁটে যাবার সময় ডেকে দিবেন। এমন আদরমাখা দাওয়াত বাচ্চাদের মনে তাঁর প্রতি ভালো ধারণার জন্ম দিবে।

বেনামাজী বা অমুসলিমদের বাড়িতে বেড়াতে যাওয়াঃ 

এলাকার অনেক মুসল্লী আছে যারা শুধুমাত্র শুক্রবারে নামাজ পড়তে মসজিদে যায়। আবার এলাকায় অমুসলিমরাও থাকতে পারে যারা মসজিদের ইমামকে অন্তত চিনে।

ইমাম সাহেব চাইলে বেনামাজী বা অমুসলিমের বাড়িতে বেড়াতে যেতে পারেন। তিনি দেখা হলে বলতে পারেন যে, “জামাল সাহেব/ আকাশ ভট্টাচার্য, আজ সন্ধ্যায় আপনাদের বাসায় বেড়াতে যেতে চাচ্ছি। বাড়িতে আছেন?”

চায়ের দাওয়াতে যাবার সময় সাথে করে এক প্যাকেট বিস্কিট নিয়ে যেতে পারেন। তখন হোস্ট বুঝবে যে, ইমাম সাহেব চা খেতে আসেননি; ৫-১০ টাকার চা খেতে কেউ ৪০-৫০ টাকার বিস্কিট নিয়ে আসে না।

এরকম বেড়াতে যাওয়া, খোঁজখবর নেয়া ঐ লোকের উপর বেশ ভালো প্রভাব পড়বে। তাকে গিয়ে আলাদাভাবে ইসলামের দাওয়াত দিতে হবে না। শুধু আন্তরিকতা দেখালেই একসময় হয়তো বেনামাজী নামাজী হয়ে যাবে। অমুসলিমের ইসলাম সম্পর্কে জানার আগ্রহ তৈরি হতে পারে।

রোগীকে দেখতে যাওয়াঃ

একটি এলাকায় প্রত্যেক সপ্তাহে কেউ না কেউ অসুস্থ থাকে। সেক্ষেত্রে দেখা যায় ইমাম সাহেবকে খতম পড়ার জন্য, দু’আর করার জন্য ডেকে নেয়া হয়; যাবার সময় ‘সম্মানী’ দেয়া হয়। কিন্তু, একজন আদর্শ ইমাম সাহেব স্বেচ্ছায় গ্রামের রোগীকে দেখতে যাবেন। বাড়িতে হোক বা হাসপাতালে। ডুবতে থাকা মানুষ যেমন খড়কুটো ধরে আশ্রয় নিতে চায়, একজন রোগীর অবস্থাও তেমন। সবাই যেখানে তাকে নিয়ে হা-হুতাশ করছে, ইমাম সাহেব সেখানে তাকে আশার বাণী শুনাতে পারেন।
ইমাম সাহেবের ব্যক্তিত্ব থাকবে এমন যে, কেউ দেখে যেনো এটা মনে না করে- তিনি টাকা পাবার জন্য রোগীকে দেখতে এসেছেন। এসব ক্ষেত্রে টাকা অফার করলে তিনি সরাসরি ‘না’ করতে পারেন।

একজন মসজিদের ইমাম কী করতে পারেন, সেটা নিয়ে একজন কমিউনিস্ট নেতার পাওয়ারফুল একটি উক্তি আছে। তিনি বলেনঃ “যদি আমার কাছে লোকেরা দৈনিক পাঁচবার হাজির হয়, তাহলে গোটা দুনিয়াকে আমি কমিউনিস্ট বানিয়ে দিতে পারবো।” [দৈনিক ওকাজ, জেদ্দা ১৯৯০]

একজন স্মার্ট ইমামের গুণাবলী
আরিফুল ইসলাম
২১ জুন ২০২১

 

 

 

আইডিসির সাথে যোগ দিয়ে উভয় জাহানের জন্য ভালো কিছু করুন!

 

আইডিসি এবং আইডিসি ফাউন্ডেশনের ব্যপারে  জানতে  লিংক০১ ও লিংক০২ ভিজিট করুন।

আইডিসি  মাদরাসার ব্যপারে বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন। 

আপনি আইডিসি  মাদরাসার একজন স্থায়ী সদস্য /পার্টনার হতে চাইলে এই লিংক দেখুন.

আইডিসি এতীমখানা ও গোরাবা ফান্ডে দান করে  দুনিয়া এবং আখিরাতে সফলতা অর্জন করুন।

কুরআন হাদিসের আলোকে বিভিন্ন কঠিন রোগের চিকিৎসা করাতেআইডিসি ‘র সাথে যোগাযোগ করুন।

ইসলামিক বিষয়ে জানতে এবং জানাতে এই গ্রুপে জয়েন করুন।

 

Islami Dawah Center Cover photo

 

ইসলামী দাওয়াহ সেন্টারকে সচল রাখতে সাহায্য করুন!

 

ইসলামী দাওয়াহ সেন্টার ১টি অলাভজনক দাওয়াহ প্রতিষ্ঠান, এই প্রতিষ্ঠানের ইসলামিক ব্লগটি বর্তমানে ২০,০০০+ মানুষ প্রতিমাসে পড়ে, দিন দিন আরো অনেক বেশি বেড়ে যাবে, ইংশাআল্লাহ।

বর্তমানে মাদরাসা এবং ব্লগ প্রজেক্টের বিভিন্ন খাতে (ওয়েবসাইট হোস্টিং, CDN,কনটেন্ট রাইটিং, প্রুফ রিডিং, ব্লগ পোস্টিং, ডিজাইন এবং মার্কেটিং) মাসে গড়ে ৫০,০০০+ টাকা খরচ হয়, যা আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জিং। সেকারনে, এই বিশাল ধর্মীয় কাজকে সামনে এগিয়ে নিতে সর্বপ্রথম আল্লাহর কাছে আপনাদের দোয়া এবং আপনাদের সহযোগিতা প্রয়োজন, এমন কিছু ভাই ও বোন ( ৩১৩ জন ) দরকার, যারা আইডিসিকে নির্দিষ্ট অংকের সাহায্য করবেন, তাহলে এই পথ চলা অনেক সহজ হয়ে যাবে, ইংশাআল্লাহ।

যারা এককালিন, মাসিক অথবা বাৎসরিক সাহায্য করবেন, তারা আইডিসির মুল টিমের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবেন, ইংশাআল্লাহ।

আইডিসির ঠিকানাঃ খঃ ৬৫/৫, শাহজাদপুর, গুলশান, ঢাকা -১২১২, মোবাইলঃ +88 01609 820 094, +88 01716 988 953 ( নগদ/বিকাশ পার্সোনাল )

ইমেলঃ info@islamidawahcenter.com, info@idcmadrasah.com, ওয়েব: www.islamidawahcenter.com, www.idcmadrasah.com সার্বিক তত্ত্বাবধানেঃ হাঃ মুফতি মাহবুব ওসমানী ( এম. এ. ইন ইংলিশ )