The Shape of Earth in The Quran – কুরআনে পৃথিবীকে গোল নাকি সমতল বলা হয়েছে ?

 

The Shape of Earth in The Quran

 

 

বহুকাল আগে মানুষ ভাবতো পৃথিবী হচ্ছে সমতল।কিন্তু খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতাব্দীতে গ্রিক দার্শনিক এরাটোস্থেনিস  প্রথম প্রমাণ করেন যে পৃথিবী গোলাকার। সেই ধারণা ক্রমেই পোক্ত হতে থাকে। যার শেষতম প্রমাণ  হচ্ছে মানুষের মহাকাশে যাত্রা। মহাকাশ থেকে স্পষ্ট দেখা গেছে আমাদের এই নীল রং এর  গ্রহটা সমতল নয় বরং গোলাকার।

পবিত্র কুরআনে সূরা নূহ এর ১৯ নাম্বার আয়াতে আল্লাহ তা’আলা বলেন,

 

وَاللّٰہُ جَعَلَ لَکُمُ الۡاَرۡضَ بِسَاطًا ۙ

আল্লাহ তা’আলা তোমাদের জন্যে ভূমিকে করেছেন বিছানা।

 

পবিত্র কুরআনে সূরা ত্বোয়াহ এর ৫৩ নাম্বার আয়াতে আল্লাহ তা’আলা বলেন,

 

الَّذِیۡ جَعَلَ لَکُمُ الۡاَرۡضَ مَہۡدًا وَّسَلَکَ لَکُمۡ فِیۡہَا سُبُلًا وَّاَنۡزَلَ مِنَ السَّمَآءِ مَآءً ؕ فَاَخۡرَجۡنَا بِہٖۤ اَزۡوَاجًا مِّنۡ نَّبَاتٍ شَتّٰی 

তিনি তোমাদের জন্যে পৃথিবীকে শয্যা করেছেন এবং তাতে চলার পথ করেছেন, আকাশ থেকে বৃষ্টি বর্ষণ করেছেন এবং তা দ্বারা আমি বিভিন্ন প্রকার উদ্ভিদ উৎপন্ন করেছি।

 

পবিত্র কুরআনে সূরা আয-যারিয়াত এর ৪৮ নাম্বার আয়াতে আল্লাহ তা’আলা বলেন,

 

وَالۡاَرۡضَ فَرَشۡنٰہَا فَنِعۡمَ الۡمٰہِدُوۡنَ 

আমি ভূমিকে বিছিয়েছি। আমি কত সুন্দরভাবেই না বিছাতে সক্ষম।

 

পবিত্র কুরআনে সূরা আন নাযিয়াত এর ৩০ নাম্বার আয়াতে আল্লাহ তা’আলা বলেন,

 

وَالۡاَرۡضَ بَعۡدَ ذٰلِکَ دَحٰىہَا ؕ

পৃথিবীকে এর পরে বিস্তৃত করেছেন।

 

একদল মানুষ কুরআনের এই আয়াত গুলো দেখিয়ে প্রমাণ করতে চান, কুরআনে মহান আল্লাহ তা’য়ালা পৃথিবীকে সমতল বলেছেন। তাদের দেখানো যুক্তি হচ্ছে যেহেতু পৃথিবীকে কার্পেট ও বিছানার সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে, তাই পৃথিবীকে কুরআন সমতল বলেছে।

প্রথমতঃ সমতল শব্দের আরবি প্রতিশব্দ হচ্ছে  ‘সাবি’,’আল মুস্তাবি’ এইসব। সত্যিই যদি কুরআন পৃথিবীকে সমতল বলতো, তাহলে নিশ্চয়ই কুরআনে এই শব্দগুলো ব্যবহার করা হতো। কিন্তু কুরআনে এইসব শব্দ ব্যবহার করা হয়নি। এখানে কুরআন ‘ফারাশ’, ‘বাস্বাত’, ‘দাহাহা’ এই জাতীয় শব্দ ব্যবহার করেছে যার কোনটারই অর্থ ‘সমতল’ নয়। এগুলোর অর্থ ‘কার্পেট’ বা ‘বিছানার মতো করে বিছানো’,  ‘বিস্তৃত’। এগুলো দিয়ে কোনোভাবেই পৃথিবী যে সমতল তা বুঝায় না।

দ্বিতীয়তঃ কারো চেহারার প্রশংসা করতে গিয়ে যদি তাকে ‘চাঁদমুখ’ বলা হয়, তার মানে এই না যে তার মুখ চাঁদের মত গোলাকার। বরং এখানে তার মুখের সৌন্দর্যের কথা বোঝানো হয়েছে।  কাজেই কার্পেট বা বিছানা বললেই যে সেটা দিয়ে  সমতল বলা হচ্ছে- এ রকম যুক্তি কুযুক্তি ছাড়া আর কিছুই নয়।

তৃতীয়তঃ বিছানা বলতে আমরা বুঝি, যা নরম ও আরামদায়ক, যাতে বিশ্রাম নেওয়া যায়। কুরআনে পৃথিবীকে বিছানার সাথে তুলনা করে পৃথিবীর আকার বা আকৃতিকে বুঝানো হয়নি। যদি এটাকে রূপক হিসেবে ধরা হয়, তাহলে এটা এমন কিছু যাতে স্বচ্ছন্দে বেঁচে থাকা যায়, চলা-ফেরা করা যায়। আমাদের সেটা আজকের বিজ্ঞানও বলছে।

বিজ্ঞান বলছে, পৃথিবীর ভূ-ত্বক সাতটি স্তরে বিভক্ত। এর  মধ্যে সবচেয়ে উপরের স্তরের নাম হচ্ছে ‘Crust’। এই স্তরের পুরুত্ব ভূ-পৃষ্ঠ থেকে ৩০ কিলোমিটার গভীর পর্যন্ত। আমরা যে স্তরে বাস করি, চলাচল করি এটি সেই স্তর।

এরপরের স্তরের নাম ‘Mentle’। এর পুরুত্ব ২৯০০ কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত এবং এর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৯০০ ডিগ্রী সেলসিয়াস। এই তাপমাত্রায় মানুষের বেঁচে থাকা কখনোই সম্ভব নয়।

এরপরের স্তরের নাম ‘Outer Core’। উইকিপিডিয়া মতে, এই স্তরের পুরুত্ব  ২৮৯০ কিলোমিটার এবং এর  তাপমাত্রা ৩৭০০ ডিগ্রী সেলসিয়াস। পৃথিবীর অভ্যন্তরীণ এইসব স্তর কতটা ভয়ঙ্কর!!

এরপরের স্তরের নাম Inner Core’ এই স্তর আরো ভয়াবহ। এভাবে যতো নিচে নামা হবে,স্তরগুলো  ততো ভয়ানক হবে। আমরা যেসব ‘আগ্নেয়গিরির লাভা’ দেখি এটা এসব স্তরের ছোট্ট একটা বিস্ফোরণ মাত্র। কিন্তু আমরা যে স্তরে বাস করি এই স্তরের তাপমাত্রা অন্যান্য স্তরের তাপমাত্রার তুলনায় মাত্র ১%, যা আমাদের জন্য বসবাসের উপযোগী।আল্লাহ যদি এই দিকটার দিকে  ইঙ্গিত করে বলেন, ‘আমি তোমাদের জন্য ভূমিকে করেছি বিছানা’ তাতে কি বুঝায় যে আল্লাহ এটা দ্বারা পৃথিবীর আকৃতি বুঝিয়েছেন?একদমই না…। আল্লাহ এটা দিয়ে ভূ-ত্বকের ঐ স্তরের কথাই বুঝিয়েছেন  যা পরের আয়াতের অংশ থেকেই বুঝা যায়। পরের অংশে বলা আছে, ‘আর তাতে করেছেন চলার পথ’। এটাতো একদম পরিস্কার যে, এখানে পৃথিবীর  আকার নয় বরং ভূমির ব্যাপারে বলা হয়েছে এবং ভূমির সেই অংশ যেখানে আমরা  বসবাস করছি।

পৃথিবী যে সমতল নয় বরং গোলাকার এই ব্যাপারে কুরআনে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে-

পবিত্র কুরআনে সূরা আয্‌-যুমার এর ৫ নাম্বার আয়াতে আল্লাহ তা’আলা বলেন,

 

خَلَقَ السَّمٰوٰتِ وَالۡاَرۡضَ بِالۡحَقِّ ۚ یُکَوِّرُ الَّیۡلَ عَلَی النَّہَارِ وَیُکَوِّرُ النَّہَارَ عَلَی الَّیۡلِ وَسَخَّرَ الشَّمۡسَ وَالۡقَمَرَ ؕ کُلٌّ یَّجۡرِیۡ لِاَجَلٍ مُّسَمًّی ؕ اَلَا ہُوَ الۡعَزِیۡزُ الۡغَفَّارُ  

তিনি আসমান ও যমীন সৃষ্টি করেছেন যথাযথভাবে। তিনি রাত্রিকে দিবস দ্বারা আচ্ছাদিত করেন এবং দিবসকে রাত্রি দ্বারা আচ্ছাদিত করেন এবং তিনি সুর্য ও চন্দ্রকে কাজে নিযুক্ত করেছেন প্রত্যেকেই বিচরণ করে নির্দিষ্ট সময়কাল পর্যন্ত। জেনে রাখুন, তিনি পরাক্রমশালী, ক্ষমাশীল।

 

এই আয়াতে ‘রাত্রিকে কে দিবস দ্বারা এবং দিবসকে রাত্রি দ্বারা আচ্ছাদিত হওয়া’ বোঝাতে যে আরবি শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে তা হলো  ‘یُکَوِّرُ‘ যার অর্থ হলো কোন জিনিসকে প্যাঁচানো বা জড়ানো। যেমনটা আমরা মাথার পাগড়ীর ক্ষেত্রে দেখা যায়। আমরা ভালভাবেই জানি পাগড়ী কিভাবে প্যাঁচানো হয়-  প্যাঁচানোর সময় একটি কাপড় অন্য একটি কাপড়ের মধ্যে ঢুকে যায়।এখানে আল্লাহ বলেছেন, তিনি দিন দ্বারা রাতকে এবং রাত দ্বারা দিনকে আচ্ছাদিত করেন। এখন দিনকে রাত দ্বারা এবং রাতকে দিন দ্বারা আচ্ছাদিত করা তখনই সম্ভব যখন পৃথিবীর গোলাকার  হবে।

দিন-রাত্রি হওয়ার ক্ষেত্রে আমরা দেখি- প্রথমে ভোর হয়, তারপর দুপুর, তারপর বিকেল, তারপর গোধূলি, তারপর সন্ধ্যা, তারপর একসময় রাতের অন্ধকারের দিন মিলিয়ে যায়। যেভাবে পাগড়ীর একটা অংশ অন্য অংশের মধ্যে আস্তে আস্তে  ঢুকে পড়ে। পৃথিবী যদি একটা লম্বা কাঠ বা তক্তার মত সমতল হত তাহলে  দিন থেকে রাতে এবং রাত থেকে দিনে একটা আকস্মিক পরিবর্তন ঘটে যেত।

পবিত্র কুরআনে সূরা আর রহমান এর ১৭ নাম্বার আয়াতে আল্লাহ তা’আলা বলেন,

 

رَبُّ الۡمَشۡرِقَیۡنِ وَرَبُّ الۡمَغۡرِبَیۡنِ ۚ 

তিনি দুই উদয়াচল ও দুই অস্তাচলের মালিক।

 

এখানে ‘উদয়াচল’ এবং ‘অস্তাচল’ বলতে সূর্যের উদয় এবং অস্তের কথা বলা হয়েছে। আমরা জানি, একদিনে পৃথিবীতে দুইবার সূর্যোদয় হয় এবং দুইবার সূর্যাস্ত ঘটে। বাংলাদেশে যখন সূর্যোদয় হয় তখন আমেরিকাতে সূর্যাস্ত ঘটে আবার আমেরিকাতে যখন সূর্যোদয় হয় তখন বাংলাদেশে সূর্যাস্ত ঘটে।

অর্থাৎ পৃথিবীতে মোট ‘দুইবার সকাল’ এবং ‘দুইবার সন্ধ্যা’ পরিলক্ষিত হয়। এখন পৃথিবীতে দুইবার সূর্যোদয় এবং দুইবার সুর্যাস্ত তখনই সম্ভব যখন পৃথিবী গোলাকার হবে। পৃথিবীর আকার যদি সমতল হতো তাহলে পৃথিবীতে একবারই সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত ঘটতো। পৃথিবীর একপাশে সূর্য উঠে অন্যপাশে ডুবে যেতো। কিন্তু পৃথিবী গোলাকার হওয়ায়  এরকম হয় না।

কুরআনে মহান আল্লাহ তা’আলা একই কথা বলছেন। তিনি বলছেন, ‘তিনি দুই উদয়াচল ও অস্তাচলের মালিক’। তার মানে তিনি নিশ্চয়ই জানেন যে পৃথিবী গোলাকার। তাই তিনি দুই সূর্যোদয় ও দুই সূর্যাস্তের কথা বলেছেন। তিনি যদি বলতেন পৃথিবী সমতল তাহলে তিনি অবশ্যই এক উদয়াচল ও এক অস্তাচলের কথা বলতেন। কিন্তু তিনি তা বলেননি। কাজেই কুরআন ইঙ্গিত করছে, পৃথিবী গোলাকার।

Post Credit: https://shottanneshon.blogspot.com/

IDC Partner

আইডিসির সাথে যোগ দিয়ে উভয় জাহানের জন্য ভালো কিছু করুন।

 

আইডিসি এবং আইডিসি ফাউন্ডেশনের ব্যপারে বিস্তারিত জানতে  লিংক০১ ও লিংক০২ ভিজিট করুন।

আইডিসি  মাদরাসার ব্যপারে বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন। 

আপনি আইডিসি  মাদরাসার একজন স্থায়ী সদস্য /পার্টনার হতে চাইলে এই লিংক দেখুন.

আইডিসি এতীমখানা ও গোরাবা ফান্ডে দান করে  দুনিয়া এবং আখিরাতে সফলতা অর্জন করুন।

কুরআন হাদিসের আলোকে বিভিন্ন কঠিন রোগের চিকিৎসা করাতেআইডিসি ‘র সাথে যোগাযোগ করুন।

ইসলামিক বিষয়ে জানতে এবং জানাতে এই গ্রুপে জয়েন করুন।

Islami Dawah Center Cover photo

ইসলামী দাওয়াহ সেন্টারকে সচল রাখতে সাহায্য করুন!

 

ইসলামী দাওয়াহ সেন্টার ১টি অলাভজনক দাওয়াহ প্রতিষ্ঠান, এই প্রতিষ্ঠানের ইসলামিক ব্লগটি বর্তমানে ২০,০০০+ মানুষ প্রতিমাসে পড়ে, দিন দিন আরো অনেক বেশি বেড়ে যাবে, ইংশাআল্লাহ।

বর্তমানে মাদরাসা এবং ব্লগ প্রজেক্টের বিভিন্ন খাতে (ওয়েবসাইট হোস্টিং, CDN,কনটেন্ট রাইটিং, প্রুফ রিডিং, ব্লগ পোস্টিং, ডিজাইন এবং মার্কেটিং) মাসে গড়ে ৫০,০০০+ টাকা খরচ হয়, যা আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জিং। সেকারনে, এই বিশাল ধর্মীয় কাজকে সামনে এগিয়ে নিতে সর্বপ্রথম আল্লাহর কাছে আপনাদের দোয়া এবং আপনাদের সহযোগিতা প্রয়োজন, এমন কিছু ভাই ও বোন ( ৩১৩ জন ) দরকার, যারা আইডিসিকে নির্দিষ্ট অংকের সাহায্য করবেন, তাহলে এই পথ চলা অনেক সহজ হয়ে যাবে, ইংশাআল্লাহ। যারা এককালিন, মাসিক অথবা বাৎসরিক সাহায্য করবেন, তারা আইডিসির মুল টিমের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবেন, ইংশাআল্লাহ।

আইডিসির ঠিকানাঃ খঃ ৬৫/৫, শাহজাদপুর, গুলশান, ঢাকা -১২১২, মোবাইলঃ +88 01609 820 094, +88 01716 988 953 (নগদ/বিকাশ পার্সোনাল) ইমেলঃ info@islamidawahcenter.com, info@idcmadrasah.com, ওয়েব: www.islamidawahcenter.com, www.idcmadrasah.com সার্বিক তত্ত্বাবধানেঃ হাঃ মুফতি মাহবুব ওসমানী ( এম. এ. ইন ইংলিশ )