Ulamae Chu – উলামায়ে ছু কাদের বলা হয়? তাদের স্বরূপ এবং প্রকৃতি।

প্রশ্নঃ উলামায়ে ছু কাদের বলা হয়?তাদের স্বরূপ এবং প্রকৃতি সম্পর্কে কিছু বলবেন কি? এ সম্পর্কে পবিত্র কোরআন ও হাদিসে কোনো আলোচনা রয়েছে কি?
উত্তরঃ যেসব আলেম লোভের বশবর্তী হয়ে, টাকার দাস হয়ে, অন্যের প্ররোচনায় রাজপক্ষ অবলম্বন করে শরিয়তে মোহাম্মদি সাঃ ত্যাগ করে—তাদের উলামায়ে ছু বলা হয়।
মনে রাখতে হবে, যারা সহিহ ইলম শিখে নিজের জীবনে তা বাস্তবায়ন করেছে এবং দেশ ও জাতিকে সিরাতে মুস্কাকিম (সঠিক পথ) দেখায়, তারা হলেন প্রকৃত আলেম। আর যারা জাহেরিভাবে ইলম শিখে বটে; কিন্তু নিজের জীবনে তার প্রতিফলন ঘটায় না এবং নিজের স্বার্থে রাজপক্ষ অবলম্বন করে শরিয়তকে বিকৃত করে দেশ ও জাতিকে বিভ্রান্তির দিকে ঠেলে দেয় তারা হলো উলামায়ে ছু, আলেম নামের কলঙ্ক, ভ্রষ্ট আলেম।পবিত্র কোরআনে সূরা আ’রাফের ১৭৫ ও ১৭৬ নং আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন অর্থলোভী, স্বার্থপর, সরকারের অনুগত আলেম ও পীরের নজির উল্লেখ করে সাড়ে তিন হাজার বছর আগের একটি ঘটনা অতি সংক্ষেপে বর্ণনা করেছেন।

হজরত মুসা আলাইহিস সালামের আমলে বালআম বাউরা নামে একজন বড় পণ্ডিত আলেম ও আবেদ ছিল। তার যে কোনো দোয়া আল্লাহর দরবারে কবুল হতো। একবার হজরত মুসা আলাইহিস সালামের শরিয়তের হুকুমের সঙ্গে তত্কালীন বাদশার মোকাবিলা হলো। বাদশার পক্ষের লোকেরা টাকার বিনিময়ে বালআম বাউরাকে রাজার পক্ষ হয়ে শরিয়তে মুসার বিরুদ্ধে দোয়া করাল। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন এই অপকর্মের শাস্তিস্বরূপ তার জিহ্বা কুকুরের মতো ঝুলিয়ে দিলেন। দুনিয়ার জিন্দেগিতেই তার জিল্লতি নেমে এলো। এই ঘটনাকে স্মরণ করিয়ে দিয়ে আল্লাহ তায়ালা পরবর্তী সবাইকে চিন্তা করে এ ধরনের জঘন্য পাপ থেকে বিরত থাকার উপদেশ দিয়েছেন।

আর রাসুলে কারিম (সা.) ইরশাদ করেছেন, যারা সৎ আলেম তাদের চেয়ে ভালো মানব সমাজের মধ্যে আর কেউই নেই। আর অসৎ আলেমের চেয়ে নিকৃষ্ট মানবজাতির মধ্যে আর কেউই নেই।

অপর এক হাদিসে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, উলামায়ে ছু দ্বারা আমার উম্মতের সর্বনাশা ক্ষতি হবে, যদি তারা এদের থেকে সতর্ক না থাকে। উলামায়ে ছু তারা, যারা তাদের এলেম দ্বারা তাদের যমানার সরকার থেকে অর্থ-সম্পদ উপার্জনের ব্যবস্থা করবে। —কানযুল উম্মাল

মন্দ আলেম “উলামায়ে ছু” হতে সাবধান !!!

আমাদের অনুসরনীয় যুগের মুসলিমরা কিন্তু কুরআন হাদীস জানা যে কোন মানুষকে “আলেম” হিসেবে গ্রহণ করতেন না। কারণ, আমরা যারা সাধারণ মানুষ, দ্বীন সম্পর্কে অভিজ্ঞ না, তাদের সামনে যদি একজন মূর্খ লোকও সামান্য কিছু পড়াশোনা করে আলেমের লেবাস ধরে, আমরা কিন্তু ধরতে পারবোনা – এই লোকটা আসলেই আলেম কিনা? নাকি আলেম না হয়েও সে আলেমদের অভিনয় করে মানুষকে ধোকা দিচ্ছে? যেমন একজন জহুরীই কেবলমাত্র চিনতে পারবে কোনটা রত্ন কোনটা সস্তা পাথর, একজন স্বর্ণকারই চিনতে পারবে কোনটা স্বর্ণ আর কোনটা সিটি গোল্ড (ইমিটেশান), ঠিক তেমনই একজন প্রকৃত আলেমই আসলে চিনতে পারবেন কে আলেম আর কে জাহেল।

এজন্য তাবেয়ীদের যুগ থেকেই, যখন থেকে মুসলমানদের মাঝে “উলামায়ে ছু” (মন্দ আলেম) ও আয়িম্মায়ে দ্বোয়াল্লিন (পথভ্রষ্ট ইমাম) ঢুকে গেছে, আমাদের স্বর্ণ যুগের আলেমরা উম্মতকে বার বার সতর্ক করে গেছেন- ইসলাম শেখার জন্য যাকে তাকে “উস্তাদ” বা শিক্ষক হিসেবে না নেওয়ার জন্য, যার তার কথা বা ওয়াজ শোনা বা বই না পড়ার। দ্বীনের ব্যপারে “প্রকৃত আলেম” ছাড়া অপরিচিত, অজ্ঞ লোকদেরকে আলেম মনে করে তাদের কথা বিশ্বাস করবেন না। যদি করেন তাহলে যেন আপনি আপনার দ্বীনকেই ধ্বংস করলেন!

অপরিচিত লোকদের কথা (ওয়াজ, লেকচার) শোনা খুবই মারাত্মক একটা বিষয়। কারণ ‘আহলুল বিদআহ’ (বিদআ’তী) ও ‘আহলুল হাওয়া’ (মনপূজারী) লোকদের কমন একটা স্ট্র্যাটেজি হচ্ছেঃ শুরুতে তাদের “আকীদাহ”লুকিয়ে রাখা। প্রথমেই মানুষের কাছে নিজের ‘আকীদাহ্ ও মানহাজ’ প্রকাশ না করে কিছুদিন মনগলানো ওয়াজ-নসিহত করা। এইভাবে মিষ্টি মিষ্টি ওয়াজ করে যখন শ্রোতাদের (আসলে অন্ধভক্তদের) মন জয় করে সংখ্যা বাড়তে থাকে, তখন নিজেদের ‘দ্বোলালাহ’ (ভ্রষ্টতা) ও ‘শুবুহাত’ (বিভ্রান্তি/doubt) মানুষের মাঝে প্রচার করা শুরু করে। আর এভাবেই তারা তাদের অন্ধভক্তদের ব্রেইন ওয়াশ করে থাকে। “উনার কথা শুনতে ভালো লাগে”, “সেতো কুরআন ও হাদীসের রেফারেন্স দিয়েই কথা বলছে” এই যুক্তিতে হয়তো অনেকই তার কথা শুনছে, কিন্তু দ্বীনি জ্ঞানের অভাবে তার ভুল অথবা শির্ক ও বিদআত ধরতে না পেরে অনেক নিষ্ঠাবান ধার্মিক মুসলিমও শেষ পর্যন্ত সেই সমস্ত শির্ক ও বিদআতগুলোর মাঝে নিজেকে পতিত করে দ্বীনকে ধ্বংস করেছে (নাউযুবিল্লাহ)!

এইজন্য আলেমরা অপরিচিত কেউ এবং কেউ প্রকৃত আহলে সুন্নাত নাকি ভেজাল আহলে সুন্নাত, আহলে বিদআতের লোক কিনা, আলেম নাকি কুচক্রী – এই বিষয়গুলো ভালোভাবে যাচাই না করে তার কাছ থেকে ইসলাম সম্পর্কে জ্ঞান নিতে কঠোরভাবে নিষেধ করেছেন।

একদিন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন,
“আমি আমার উম্মাতের জন্য একটি বিষয়কে দাজ্জাল এর থেকেও বেশী ভয় করি।”
(একজন সাহাবী বললেন), আমি ভয় পেয়ে জিজ্ঞেস করলাম, “হে আল্লাহর রাসুল, সেটি কি?”
তিনি বললেন, “বিপথগামী এবং পথভ্রষ্ট আলেম।”
[মুসনাদে ইমাম আহমাদঃ ২১৬২১, তাবরানীঃ ৭৬৫৩]

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেছেন-
“(ফিতনার যুগে) কিছু লোক এমন হবে, যারা জাহান্নামের দরজার দিকে মানুষকে দাওয়াত দিবে (অর্থাৎ তাদের দাওয়াত এমন ভ্রষ্টতাপূর্ণ হবে, যা জাহান্নামের দিকে নিয়ে যাবে); যারা তাদের ডাকে সাড়া দিবে তাদেরকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবে”।
[সহীহ বুখারীঃ হাদীস নং-৩৩৩৬, ৬৬৭৯]

ইসলামী ইতিহাসে অবিস্বরণীয় আলেম, শায়খুল ইসলাম, ইমাম ইবনে তাইমিয়া রাহিমাহুল্লাহ বলেন,
“দুনিয়াকে সবচেয়ে বেশি ধ্বংস করেছে আধা বক্তা, আধা ফকীহ,আধা ডাক্তার এবং আধা ভাষাবিদ। এদের একজন (আধা বক্তা) দ্বীনকে ধ্বংস করে, অপরজন (আধা ফকীহ) দেশ ও জাতিকে ধ্বংস করে। আধা ডাক্তার মানুষের শরীরকে নিঃশেষ করে। আর আধা ভাষাবিদ ভাষাকে বিনষ্ট করে।” [মাজমাউল ফাতাওয়া: খণ্ড-৫, পৃষ্ঠা-১১৮]

শায়খ সালেহ আল-ফাউজান হা’ফিজাহুল্লাহ বলেন,
“বর্তমান যুগে অন্য অনেক ফেতনার সাথে এই উম্মত সবচাইতে বড় যে ফেতনার সম্মুখীন সেটা হচ্ছে, এমন অনেক দ্বাইয়ী আছে যারা ইলম ছাড়াই অজ্ঞতাবশত মানুষকে গোমরাহী ও বাতিলের দিকে দিকে দাওয়াত দিচ্ছে।”

“ইলম” বা দ্বীনের জ্ঞান আকাশে বাতাসে ঘুরে বেড়ায় না যে, নিজে নিজে শুধু কুরআন আর হাদীস পড়েই আলেম হয়ে যেতে পারবেন। তাকে অবশ্যই তাওহীদের জ্ঞান রাখে এমন আলেমদের কাছে যেতে হবে, পর্যাপ্ত সময় তাদের সাথে থেকে, সময় দিয়ে কুরআন ও হাদীসের প্রকৃত জ্ঞান শিখতে হবে। এইভাবে আলেমদের সাথে ছাত্র-শিক্ষকের যে সম্পর্ক তৈরী হবে– এর মাধ্যমেই আসলে পরবর্তী প্রজন্মের আলেম তৈরী হয়।

সুতরাং উলামায়ে ‘ছূ’ দের জন্য আফসোস! তাদের জন্য জাহান্নাম। তারা ব্যবসার উদ্দেশ্যে ইলম হাছিল করবে। তারা তাদের ইলম দ্বারা তাদের সমসাময়িক রাজা-বাদশাহ, ক্ষমতাসীনদের সাথে ব্যবসা করবে। তাদের ব্যবসা হবে নিছক দুনিয়ায় লাভবান হওয়ার জন্য।

আল্লাহ্ পাক আমাদেরকে মন্দ আলেম “উলামায়ে ছু” থেকে বেঁচে থাকার তাওফিক দান করুন।

==========================================================================

 

    Islami Dawah Center Cover photo

আইডিসির সাথে যোগ দিয়ে উভয় জাহানের জন্য ভালো কিছু করুন!

 

আইডিসি এবং আইডিসি ফাউন্ডেশনের ব্যপারে  জানতে  লিংক০১ ও লিংক০২ ভিজিট করুন।

আইডিসি  মাদরাসার ব্যপারে বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন। 

আপনি আইডিসি  মাদরাসার একজন স্থায়ী সদস্য /পার্টনার হতে চাইলে এই লিংক দেখুন.

আইডিসি এতীমখানা ও গোরাবা ফান্ডে দান করে  দুনিয়া এবং আখিরাতে সফলতা অর্জন করুন।

কুরআন হাদিসের আলোকে বিভিন্ন কঠিন রোগের চিকিৎসা করাতেআইডিসি ‘র সাথে যোগাযোগ করুন।

ইসলামিক বিষয়ে জানতে এবং জানাতে এই গ্রুপে জয়েন করুন।