Water Cycle in Quran – কুরআনের বর্ণনায় পানিচক্র
Water Cycle in Quran – কুরআনের বর্ণনায় পানিচক্র
পবিত্র কুরআনের সূরা আর রুম এর ৪৮ নাম্বার আয়াতে আল্লাহ তা’য়ালা বলেন,
اَللّٰہُ الَّذِیۡ یُرۡسِلُ الرِّیٰحَ فَتُثِیۡرُ سَحَابًا فَیَبۡسُطُہٗ فِی السَّمَآءِ کَیۡفَ یَشَآءُ وَیَجۡعَلُہٗ کِسَفًا فَتَرَی الۡوَدۡقَ یَخۡرُجُ مِنۡ خِلٰلِہٖ ۚ فَاِذَاۤ اَصَابَ بِہٖ مَنۡ یَّشَآءُ مِنۡ عِبَادِہٖۤ اِذَا ہُمۡ یَسۡتَبۡشِرُوۡنَ ۚ
তিনি আল্লাহ, যিনি বায়ু প্রেরণ করেন, অতঃপর তা মেঘমালাকে সঞ্চারিত করে। অতঃপর তিনি মেঘমালাকে যেভাবে ইচ্ছা আকাশে ছড়িয়ে দেন এবং তাকে স্তরে স্তরে রাখেন। এরপর তুমি দেখতে পাও তার মধ্য থেকে নির্গত হয় বৃষ্টিধারা। তিনি তাঁর বান্দাদের মধ্যে যাদেরকে ইচ্ছা পৌঁছান; তখন তারা আনন্দিত হয়।
মহান আল্লাহ তা’য়ালার অনেক বড় নিয়ামত হচ্ছে ‘পানিচক্র’। সাগরের পানি সূর্যের তাপে বাষ্প হয়, এরপর তা ঠান্ডা হয়ে মেঘে পরিণত হয় এবং এরপর তা বৃষ্টি আকারে পৃথিবীতে নেমে আসে।এই বৃষ্টির পানি নদী-নালার মাধ্যমে আবার সাগরে ফিরে যায়। এই প্রক্রিয়ার পুনরাবৃত্তি পৃথিবীতে বার বার ঘটতে থাকে আর এই পুরো প্রক্রিয়াকে বলা হয় পানিচক্রে।
১৫০০ খ্রিস্টাব্দে ‘বার্নার্ড পলিসি’ সর্বপ্রথম পানিচক্রের আধুনিক ধারণা দেন। সাগর থেকে পানি বাষ্পাকারে উড়ে যাওয়া, পরে তা ঠাণ্ডা হয়ে মেঘে পরিণত হওয়ার প্রক্রিয়া সম্পর্কে তিনি ধারণা দেন যা এখনও নির্ভুল বলে প্রমাণিত।
পানি চক্রের ধাপ গুলো হচ্ছে-
বাষ্পীভবন→ উৎপন্ন হওয়া→ বৃষ্টিপাত হওয়া→ বৃষ্টির পানি ভূমিতে আসা এবং ভূমি কর্তৃক এই পানি ধারণ করা।
চিত্রঃ পানিচক্র |
এরপর এই প্রক্রিয়াটির আবার প্রথম থেকে পুনরাবৃত্তি ঘটে। এখন দেখা যাবে এই ধাপ গুলো সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে কি বলা আছে—
প্রথম ধাপ (বাষ্পীভবন)
খাল-বিল, নদী-নালা, পুকুর ও সমুদ্রের পানি সূর্যের তাপে বাষ্পে পরিণত হয়। এটি হচ্ছে পানিচক্রের প্রথম ধাপ।
পবিত্র কুরআনের সূরা আল হিজর এর ২২ নাম্বার আয়াতে আল্লাহ তা’য়ালা বলেন,
وَاَرۡسَلۡنَا الرِّیٰحَ لَوَاقِحَ فَاَنۡزَلۡنَا مِنَ السَّمَآءِ مَآءً فَاَسۡقَیۡنٰکُمُوۡہُ ۚ وَمَاۤ اَنۡتُمۡ لَہٗ بِخٰزِنِیۡنَ
আমি বৃষ্টিগর্ভ বায়ু পরিচালনা করি অতঃপর আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করি, এরপর তোমাদেরকে তা পান করাই। বস্তুত, তোমাদের কাছে এর ভান্ডার নেই।
এই আয়াতে বৃষ্টির পূর্বে ‘বৃষ্টিগর্ভ বায়ু’ পরিচালনার কথা বলা হয়েছে অর্থাৎ এমন বায়ু যা বৃষ্টিকে ধারণ করে। নিঃসন্দেহে এটি ‘বাষ্পীভবন’ প্রক্রিয়াকে নির্দেশ করে।
দ্বিতীয় ধাপ (মেঘ উৎপন্ন হওয়া)
খাল-বিল, নদী-নালা, পুকুর ও সমুদ্রের পানি সূর্যের তাপে বাষ্পে পরিণত হয়ে বায়ুমণ্ডলের উপরের দিকে উঠে ঠান্ডা হয় এবং ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পানিকণায় পরিণত হয়। এই পানিকণা যখন নানারকম ধুলাবালি ও গ্যাসের সংমিশ্রণে আসে তখন মেঘের সৃষ্টি হয়। মেঘ সৃষ্টির এই প্রক্রিয়াকে ‘ঘনীভবন’ বলে। যখন এই মেঘ পরিমাণে অনেক ভারী হয়ে যায় তখন মেঘে মেঘে ঘর্ষণে সৃষ্টি হয় বজ্রপাতের এবং মেঘের পানিকনা একত্র হয়ে বড় আকার ধারণ করে বৃষ্টিরূপে মাটিতে পড়ে।
পবিত্র কুরআনের সূরা আল আরাফ এর ৫৭ নাম্বার আয়াতে আল্লাহ তা’য়ালা বলেন,
وَہُوَ الَّذِیۡ یُرۡسِلُ الرِّیٰحَ بُشۡرًۢا بَیۡنَ یَدَیۡ رَحۡمَتِہٖ ؕ حَتّٰۤی اِذَاۤ اَقَلَّتۡ سَحَابًا ثِقَالًا سُقۡنٰہُ لِبَلَدٍ مَّیِّتٍ فَاَنۡزَلۡنَا بِہِ الۡمَآءَ فَاَخۡرَجۡنَا بِہٖ مِنۡ کُلِّ الثَّمَرٰتِ ؕ کَذٰلِکَ نُخۡرِجُ الۡمَوۡتٰی لَعَلَّکُمۡ تَذَکَّرُوۡنَ
তিনিই বৃষ্টির পূর্বে সুসংবাদবাহী বায়ু পাঠিয়ে দেন। এমনকি যখন বায়ুরাশি পানিপূর্ন মেঘমালা বয়ে আনে, তখন আমি এ মেঘমালাকে একটি মৃত শহরের দিকে হ্যাঁকিয়ে দেই। অতঃপর এ মেঘ থেকে বৃষ্টি ধারা বর্ষণ করি। অতঃপর পানি দ্বারা সব রকমের ফল উৎপন্ন করি। এমনি ভাবে মৃতদেরকে বের করব-যাতে তোমরা চিন্তা কর।
তৃতীয় ধাপ (বৃষ্টিপাত হওয়া)
এই কণাগুলো যখন খুব বেশি ঠান্ডা হয়ে যায় তখন তা বরফে পরিণত হয় এবং শিলা বৃষ্টি হয়ে পৃথিবীতে নেমে আসে। এভাবে মেঘ থেকে পানি আবার বৃষ্টি, তুষার বৃষ্টি, শিলা বৃষ্টি এরূপ বিভিন্নভাবে পৃথিবীতে ফিরে আসার প্রক্রিয়াকে ‘অধঃক্ষেপণ’ বলে। পানি চক্রের তৃতীয় ধাপ হচ্ছে এটি।
পবিত্র কুরআনের সূরা আন নূর এর ৪৩ নাম্বার আয়াতে আল্লাহ তা’য়ালা বলেন,
اَلَمۡ تَرَ اَنَّ اللّٰہَ یُزۡجِیۡ سَحَابًا ثُمَّ یُؤَلِّفُ بَیۡنَہٗ ثُمَّ یَجۡعَلُہٗ رُکَامًا فَتَرَی الۡوَدۡقَ یَخۡرُجُ مِنۡ خِلٰلِہٖ ۚ وَیُنَزِّلُ مِنَ السَّمَآءِ مِنۡ جِبَالٍ فِیۡہَا مِنۡۢ بَرَدٍ فَیُصِیۡبُ بِہٖ مَنۡ یَّشَآءُ وَیَصۡرِفُہٗ عَنۡ مَّنۡ یَّشَآءُ ؕ یَکَادُ سَنَا بَرۡقِہٖ یَذۡہَبُ بِالۡاَبۡصَارِ ؕ
তুমি কি দেখ না যে, আল্লাহ মেঘমালাকে সঞ্চালিত করেন, অতঃপর তাকে পুঞ্জীভূত করেন, অতঃপর তাকে স্তরে স্তরে রাখেন; অতঃপর তুমি দেখ যে, তার মধ্য থেকে বারিধারা নির্গত হয়। তিনি আকাশস্থিত শিলাস্তুপ থেকে শিলাবর্ষণ করেন এবং তা দ্বারা যাকে ইচ্ছা আঘাত করেন এবং যার কাছ থেকে ইচ্ছা, তা অন্যদিকে ফিরিয়ে দেন। তার বিদ্যুৎঝলক দৃষ্টিশক্তি যেন বিলীন করে দিতে চায়।
আধুনিক বিজ্ঞান আবিষ্কার করেছে যে, বাতাস যখন ছোট মেঘখন্ডকে ধাক্কা দেয় তখন Cumulonimbus বা ‘বৃষ্টিবাহী মেঘপুঞ্জ’ একটি নির্দিষ্ট স্থানে গিয়ে তৈরি হতে থাকে। ছোট ছোট এই মেঘখন্ড একসাথে মিলিত হয় এবং বড় মেঘমালায় পরিণত হয়। ছোট ছোট মেঘখন্ড যখন একসাথে মিলিত হয় তখন তা উঁচু হয়ে যায়। উড্ডয়মান বাতাসের গতি মেঘের আকার বৃদ্ধি করে মেঘকে স্তূপীকৃত করতে সাহায্য করে। মেঘের এই ক্রমাগত বৃদ্ধির ফলে মেঘটি বায়ুমণ্ডলের অধিক ঠাণ্ডা স্থানের দিকে বিস্তৃতি লাভ করে এবং সেখানে পানির ফোটা ও বরফের সৃষ্টি করে। আস্তে আস্তে তা বড় হতে থাকে আর যখনই এগুলো অধিক ওজনবিশিষ্ট হয়ে যায় তখন তাকে আর বাতাস নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। যার ফলে মেঘমালা থেকে তা বৃষ্টি ও শীলা হিসেবে বর্ষিত হয়।
চতুর্থ ধাপ (বৃষ্টির পানি ভূমিতে আসা এবং ভূমি কর্তৃক এই পানি ধারণ করা)
বৃষ্টির পানি গড়িয়ে গড়িয়ে নদীর পানির সঙ্গে মিশে যায় এবং নদীর পানি প্রবাহিত হয়ে সাগরের পানির সঙ্গে মিশে যায়। আর যে পানির কণাগুলো মাটিতে পড়ে, সেগুলো চুয়ে চুয়ে মাটির অনেক গভীরে গিয়ে জমা হয় যেখানে পানি থাকে । এভাবে পৃথিবীতে পানি তার এক উৎস থেকে অন্য উৎসে চক্রাকারে ঘুরতে থাকে আর এভাবেই পানি চক্র বিষয়টি সম্পন্ন হয়।
পবিত্র কুরআনের সূরা আয্-যুমার এর ২১ নাম্বার আয়াতে আল্লাহ তা’য়ালা বলেন,
اَلَمۡ تَرَ اَنَّ اللّٰہَ اَنۡزَلَ مِنَ السَّمَآءِ مَآءً فَسَلَکَہٗ یَنَابِیۡعَ فِی الۡاَرۡضِ ثُمَّ یُخۡرِجُ بِہٖ زَرۡعًا مُّخۡتَلِفًا اَلۡوَانُہٗ ثُمَّ یَہِیۡجُ فَتَرٰىہُ مُصۡفَرًّا ثُمَّ یَجۡعَلُہٗ حُطَامًا ؕ اِنَّ فِیۡ ذٰلِکَ لَذِکۡرٰی لِاُولِی الۡاَلۡبَابِ
তুমি কি দেখনি যে, আল্লাহ আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেছেন, অতঃপর সে পানি যমীনের ঝর্ণাসমূহে প্রবাহিত করেছেন, এরপর তদ্দ্বারা বিভিন্ন রঙের ফসল উৎপন্ন করেন, অতঃপর তা শুকিয়ে যায়, ফলে তোমরা তা পীতবর্ণ দেখতে পাও। এরপর আল্লাহ তাকে খড়-কুটায় পরিণত করে দেন। নিশ্চয় এতে বুদ্ধিমানদের জন্যে উপদেশ রয়েছে।
আলোচ্য আয়াতে আল্লাহ তা’য়ালা কিভাবে পানিকে আকাশ থেকে বৃষ্টিরূপে বর্ষণ করেন এবং কিভাবে তা শোষিত হয়ে ভূগর্ভে নেমে গিয়ে ঝর্ণার আকারে নির্গত হয় অথবা খাল-বিল, নদী-নালা, পুকুর ইত্যাদিতে সংরক্ষিত হয়, তার মাধ্যমে কিভাবে ফসল উৎপন্ন হয় সে ব্যাপারে ধারণা দিয়েছেন। মহান আল্লাহ তা’য়ালা এভাবেই আমাদের জন্য পানিচক্র ঠিক রেখেছেন।এর শুকরিয়া আজীবন সিজদা করলেও আদায় হবে না।
Post Credit: https://shottanneshon.blogspot.com/
আইডিসির সাথে যোগ দিয়ে উভয় জাহানের জন্য ভালো কিছু করুন।
আইডিসি এবং আইডিসি ফাউন্ডেশনের ব্যপারে বিস্তারিত জানতে লিংক০১ ও লিংক০২ ভিজিট করুন।
আইডিসি মাদরাসার ব্যপারে বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন।
আপনি আইডিসি মাদরাসার একজন স্থায়ী সদস্য /পার্টনার হতে চাইলে এই লিংক দেখুন.
আইডিসি এতীমখানা ও গোরাবা ফান্ডে দান করে দুনিয়া এবং আখিরাতে সফলতা অর্জন করুন।
কুরআন হাদিসের আলোকে বিভিন্ন কঠিন রোগের চিকিৎসা করাতেআইডিসি ‘র সাথে যোগাযোগ করুন।
ইসলামিক বিষয়ে জানতে এবং জানাতে এই গ্রুপে জয়েন করুন।
ইসলামী দাওয়াহ সেন্টারকে সচল রাখতে সাহায্য করুন!
ইসলামী দাওয়াহ সেন্টার ১টি অলাভজনক দাওয়াহ প্রতিষ্ঠান, এই প্রতিষ্ঠানের ইসলামিক ব্লগটি বর্তমানে ২০,০০০+ মানুষ প্রতিমাসে পড়ে, দিন দিন আরো অনেক বেশি বেড়ে যাবে, ইংশাআল্লাহ।
বর্তমানে মাদরাসা এবং ব্লগ প্রজেক্টের বিভিন্ন খাতে (ওয়েবসাইট হোস্টিং, CDN,কনটেন্ট রাইটিং, প্রুফ রিডিং, ব্লগ পোস্টিং, ডিজাইন এবং মার্কেটিং) মাসে গড়ে ৫০,০০০+ টাকা খরচ হয়, যা আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জিং। সেকারনে, এই বিশাল ধর্মীয় কাজকে সামনে এগিয়ে নিতে সর্বপ্রথম আল্লাহর কাছে আপনাদের দোয়া এবং আপনাদের সহযোগিতা প্রয়োজন, এমন কিছু ভাই ও বোন ( ৩১৩ জন ) দরকার, যারা আইডিসিকে নির্দিষ্ট অংকের সাহায্য করবেন, তাহলে এই পথ চলা অনেক সহজ হয়ে যাবে, ইংশাআল্লাহ। যারা এককালিন, মাসিক অথবা বাৎসরিক সাহায্য করবেন, তারা আইডিসির মুল টিমের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবেন, ইংশাআল্লাহ।
আইডিসির ঠিকানাঃ খঃ ৬৫/৫, শাহজাদপুর, গুলশান, ঢাকা -১২১২, মোবাইলঃ +88 01609 820 094, +88 01716 988 953 (নগদ/বিকাশ পার্সোনাল) ইমেলঃ info@islamidawahcenter.com, info@idcmadrasah.com, ওয়েব: www.islamidawahcenter.com, www.idcmadrasah.com সার্বিক তত্ত্বাবধানেঃ হাঃ মুফতি মাহবুব ওসমানী ( এম. এ. ইন ইংলিশ )