Need for Islamic training - ইসলামী তালিমের প্রয়োজনীয়তা

Need for Islamic training – ইসলামী তালিমের প্রয়োজনীয়তা

দ্বীনী দাওয়াতের মতো সবার জন্য দ্বীনী তালীমের ব্যবস্থা করাও অপরিহার্য

মাওলানা মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক

 

ব্যাপক দাওয়াতের প্রয়োজনীয়তা

দ্বীনের অনুসারীদের কাছে দ্বীনের অন্যতম প্রধান দাবি এই যে, তারা যেন সর্বস্তরের মানুষের মাঝে দ্বীনের অনুসরণ ব্যাপক করার চেষ্টা করেন এবং দ্বীনের দাওয়াতকে সমাজের কোনো বিশেষ শ্রেণী বা শুধু আগ্রহী ব্যক্তিদের মাঝে সীমাবদ্ধ না রাখেন। মুসলমানদের মনে মুসলমানিত্বের অনুভূতি জাগ্রত করার এবং দ্বীনের প্রতি আগ্রহ সৃষ্টির প্রচেষ্টা দ্বীনের গুরুত্বপূর্ণ দাবি। মুসলমানদেরকে এ বিষয়ে সচেতন করতে হবে যে, দ্বীন ও ঈমান হচ্ছে শিক্ষা করার বিষয়। শেখা ছাড়া এমনি এমনি তা অর্জিত হয় না আর তা জাগতিক বিভিন্ন বিদ্যা ও পেশা শিক্ষার চেয়ে অনেক বেশি জরুরি।

বর্তমানে মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ব্যাধি দ্বীনের বিষয়ে অনাগ্রহ ও উদাসীনতা। এটি কীভাবে দূর হয় এবং তাদের মাঝে দ্বীনকে জানার এবং দ্বীন ও ঈমান শেখার প্রেরণা জাগ্রত হয়-এই প্রচেষ্টাই হচ্ছে দাওয়াতের ব্যাপক বিস্তারের সর্বাধিক প্রয়োজনীয় ও ফলপ্রসূ পদ্ধতি।

বিগত শতাব্দীর অন্যতম মুজাদ্দিদ হযরত মাওলানা ইলিয়াস রাহ.-এর প্রচেষ্টায় দিল্লীর নিযামুদ্দীন থেকে দাওয়াত ও তাবলীগের যে কর্মপন্থা প্রচলিত হয়েছে তা এ পদ্ধতির একটি উত্তম দৃষ্টান্ত। আল্হাম্দুলিল্লাহ এর মাধ্যমে মুসলিম উম্মাহ কল্পনাতীত উপকার পেয়েছে এবং এখনও পাচ্ছে। ইনশাআল্লাহ কেয়ামত পর্যন্ত মানুষ এর মাধ্যমে উপকৃত হবে।

দ্বীনী ইলমের ব্যাপক বিস্তারের গুরুত্ব

যদিও দাওয়াত ও তাবলীগের এই পদ্ধতি লক্ষ্য-উদ্দেশ্যের দিক থেকে মানুষের ঈমানী জাগরণ ও দ্বীনী শিক্ষার ব্যাপক বিস্তারের একিট ফলপ্রসূ মেহনত এবং এর মূল কর্মপন্থাও সর্বসাধারণের দ্বীনী ইলম অর্জনের একটি উত্তম উপায়। কিন্তু সে সময়ই হযরত মাওলানা ইলিয়াস রহ. বলে গেছেন যে, “আলেমগণের নিকট আরজ, তাবলীগ-জামাআতের চলাফেরা এবং মেহনত ও কোশেশ দ্বারা সর্বসাধারণের মাঝে শুধু দ্বীনের আগ্রহ ও দ্বীনের মূল্য বোঝার যোগ্যতা সৃষ্টি করা যাবে এবং তাদেরকে দ্বীন শেখার জন্য প্রস্তুত করা যাবে। এরপর তাদেরকে দ্বীন শেখানো এবং দ্বীনী তরবিয়তের কাজ উলামায়ে কেরাম ও হক্কানী বুযুর্গানে দ্বীনের মনোযোগ ও প্রচেষ্টার মাধ্যমেই সম্পন্ন হতে পারে। তাই এদিকে আপনাদের সদয় দৃষ্টির বড় প্রয়োজন।” -মালফূযাত, হযরত মাওলানা মুহাম্মদ ইলিয়াস রহ., সংকলনে মাওলানা মুহাম্মদ মনযূর নুমানী রহ. ১৪২, মালফূয নং ২১২

তিনি আরো বলেছেন, “তাবলীগ-জামাআতের শিক্ষা-সিলেবাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ‘তাজবীদ’। কেননা কুরআন কারীম সহীহ-শুদ্ধভাবে তেলাওয়াত করতে শেখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু তাজবীদ শিক্ষা দেওয়ার জন্য যে পরিমাণ সময় প্রয়োজন জামাআতে তা পাওয়া যায় না। এজন্য এই সময় শুধু চেষ্টা করতে হবে, যেন মানুষের মনে এর প্রয়োজনীয়তার অনুভূতি সৃষ্টি হয় এবং এর সাথে প্রাথমিক পর্যায়ের কিছু সম্পর্ক তৈরি হয়। এরপর বিষয়টি শেখার জন্য যেন আলাদা সময় বের করতে প্রস্তুত হয়ে যায়।” -মালফূযাত ১৩৮, মালফূয নং ২০২

বাস্তব কথা এই যে, ফরযে কেফায়া তো অনেক উপরের বিষয়, ফরযে আইন ইলমের পরিমাণও কম নয়। কুরআন, হাদীস, সীরাতে রাসূল, আকায়েদ, ইবাদত, লেনদেন, ব্যক্তি-জীবন, পারিবারিক জীবন, সামাজিক জীবন, আত্মার জগৎ ইত্যাদি সকল বিষয়ের মৌলিক ও প্রাত্যহিক জীবনে প্রয়োজনীয় ইলম অর্জন করা প্রত্যেক মুসলিম নারী-পুরুষের উপর ফরয, তা তিনি যে শ্রেণীরই হোন না কেন।

তদ্রূপ বাস্তবতা এই যে, বর্তমান ফেতনার যুগে বৈষয়িক শিক্ষায় শিক্ষিত এবং সমাজ ও জগতের ব্যাপারে সচেতন ব্যক্তিদের জন্য দ্বীনিয়াতের প্রাথমিক কিছু জ্ঞান মোটেও যথেষ্ট নয়। হযরত থানভী রহ.এর ভাষায়, “তাদেরকে আকায়েদ ও আহ্কামের ইলম মোটামুটি বুঝে-শুনে অর্জন করতে হবে এবং ইসলামের সৌন্দর্য, নিগুঢ় তত্ত্ব ও রহস্য এবং ইসলামী শিক্ষা ও নির্দেশনার সর্বজনীনতা ও চিরন্তনতার মজবুত ইলম অর্জন করতে হবে। যাতে শরীয়তের মাহাত্ম্য অন্তরে বদ্ধমূল হয়ে যায় এবং ইসলামী আকীদা-বিশ্বাস মনমস্তিষ্কে এমনভাবে দৃঢ়মূল হয় যে, শত্রুদের নানামুখী অপপ্রচারের মুখেও তা বিপর্যস্ত হওয়ার আশংকা না থাকে।

এখন প্রশ্ন দাঁড়ায় যে, সাধারণ মানুষ ও সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষিত ভাইয়েরা দ্বীনিয়াতের উপরোক্ত জ্ঞান কীভাবে এবং কোথায় অর্জন করবেন এবং দ্বীনী দাওয়াতের মত দ্বীনী শিক্ষাকে ব্যাপক থেকে ব্যাপকতর করার উপায় কী? অনেকের ধারণা, দ্বীনী ইলম শুধু বিশেষ সিলেবাস ও বিশেষ শিক্ষকদের অধীনে আরবী মাদ্রাসার গণ্ডির ভেতরে অবস্থান করে সুদীর্ঘ সময়ের অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমেই হাসিল করা যায়। আর যেহেতু সকলের পক্ষে মাদ্রাসার তালিবে ইলম হওয়া বা মাদ্রাসার চারদেয়ালের ভিতর আট দশ বছর সময় দেওয়া সম্ভব নয়, তাই তারা স্থির সিদ্ধানে- উপনীত হয়েছেন যে, ইলমে দ্বীন তাদের কিসমতে নেই। আর বাকি জীবনটুকু জাহালতের মধ্যে কাটানোর ব্যাপারেও তারা সন্তুষ্ট হয়ে গেছেন।

এই ধারণা ও সিদ্ধান্ত দু’টোই ভুল। দ্বীনের প্রয়োজনীয় ইলম (যার প্রতি উপরে ইঙ্গিত করা হয়েছে) প্রত্যেক মুসলমান চাকরি-বাকরি, ব্যবসা-বাণিজ্য এবং দুনিয়াবী অন্যান্য ব্যস্ততার মধ্যেও অর্জন করতে পারে। ইসলামের প্রথম যুগের মুসলমানদের ইতিহাস এর জ্বলন্ত প্রমাণ।

আরবী মাদ্রাসার বিশেষ সিলেবাসভুক্ত পড়াশোনা তো দ্বীনী বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ ও চূড়ান্ত পর্যায়ের ইলম অর্জনের জন্য এবং ‘আলেম’, ‘ফকীহ’, ‘মুহাদ্দিস’, ‘মুফাস্সির’ এবং শরীয়তের বিভিন্ন বিষয়ে বিশেষজ্ঞ তৈরির উদ্দেশ্যে। সর্বসাধারণের জন্য প্রয়োজনীয় ইলমে দ্বীন শিক্ষা দেওয়ার পদ্ধতি অবশ্যই ভিন্ন হবে। আমাদের পূর্ববর্তী উলামায়ে কেরাম এবং বুযুর্গানে দ্বীন এ বিষয়ে উদাসীন ছিলেন না। প্রত্যেক মুসলিম কীভাবে দ্বীনের প্রয়োজনীয় ইলম অর্জন করতে পারে এবং কীভাবে দ্বীনী শিক্ষাকে ব্যাপকতর করা যায়- এ প্রসঙ্গে তাঁরা অনেক প্রস্তাব রেখে গেছেন। যেমন, হযরত হাকীমুল উম্মত মাওলানা আশরাফ আলী থানভী রাহ. ‘হায়াতুল মুসলিমীন’, ‘ইসলাহে ইনকিলাবে উম্মত’ গ্রন্থে’ এবং দাওয়াত-তাবলীগ-তালীম বিষয়ে তাঁর বিভিন্ন ওয়াজ-বক্তৃতায় বেশ কিছু পন্থা ও কর্মসূচি উল্লেখ করেছেন। হযরতের শেষ জীবনে প্রতিষ্ঠিত ‘মজলিসে দাওয়াতুল হক’ (সেই খসড়া অনুযায়ী যা তিনি তাঁর বিভিন্ন পুস্তিকায় এবং তাঁর খলীফা হযরত মুহিউস্ সুন্নাহ মাওলানা আবরারুল হক হারদূঈ রাহ. ‘আশরাফুন নিযাম লিল-ইসলাহিল ‘আমি ওয়াত-তাম’ পুস্তিকায় উল্লেখ করেছেন)

দ্বীনী শিক্ষা বিস্তারের তেমনি একটি গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচি।

এ প্রসঙ্গে অন্য বুযুর্গানে দ্বীনের প্রস্তাবাবলিও বিদ্যমান রয়েছে। তবে যে বিষয়টি এখন প্রয়োজন তা হল, বর্তমান সময়ের নেতৃস্থানীয় আলেমগণের এ বিষয়ে মনোযোগী হওয়া এবং এসব প্রস্তাব ও নির্দেশনা বাস্তবায়িত করা। কেননা, আজকাল এই রোগের বিস্তার লক্ষ করা যাচ্ছে যে, দ্বীনের বিষয়ে কিছু আগ্রহ সৃষ্টি হওয়া এবং উলামায়ে কেরাম বা বুযুর্গানে দ্বীনের সাহচর্যের মাধ্যমে বাহ্যিক কিছু আমল দুরুস্ত করা কিংবা নিজের মনমত বাজার থেকে কিছু দ্বীনী বই খরিদ করে তা পড়ে নেওয়াকেই অনেকে গোটা দ্বীনের ধারণা অর্জন ও অনুসরণের পক্ষে যথেষ্ট মনে করছেন অথচ তাদের নিজেদের এবং তাদের পরিবারভুক্ত অনেকের ফরযে আইন পরিমাণ ইলম সম্পর্কেও ধারণা নেই। দুঃখের ব্যাপার হল বিষয়টির অনুভূতিও তাদের নেই।

দুটি প্রস্তাব

এই আলোচনায় আমি শুধু দুটি প্রস্তাব পেশ করছি :

১. আরবী মাদ্রাসাগুলোতে ‘বয়স্কদের দ্বীন শিক্ষা’ বিভাগ খোলা এবং এক বা একাধিক সিলেবাস চালু করা। সম্ভব হলে এই বিভাগে ‘দিবা’ ও ‘নৈশ’ উভয় সিফটেরই ব্যবস্থা রাখা, যাতে আগ্রহী ব্যক্তিরা নিজেদের সুবিধা মত অংশগ্রহণ করতে পারেন।

২. প্রত্যেক মসজিদে পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের পরে কিংবা এক বা একাধিক নামাযের পরে সাধারণ দ্বীন শিক্ষার ব্যবস্থা করা। এই আয়োজনটি এক/দুই ঘণ্টার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে; কিন্তু নিয়মিত গুরুত্বের সাথে হবে। এখানে কুরআনে কারীম এবং নামায বিশুদ্ধ করা ছাড়াও দ্বীনিয়াতের একটি পূর্ণাঙ্গ সিলেবাস পড়ানো হবে। প্রতি নামাযের পর যে সময়টুকু বরাদ্দ থাকবে তাতে শুধু একটি দলকেই পড়ানো হবে এমন নয়; বরং আয়োজনটি থাকবে প্রতি নামাযের পরেই। যাতে প্রত্যেকে নিজ নিজ সুবিধা মত যেকোন এক হাল্কায় অন্তর্ভুক্ত হতে পারেন। এর সিলেবাস দ্বীনদার ও অভিজ্ঞ আলেমগণের পরামর্শের ভিত্তিতে তৈরি করতে হবে এবং নামায ও কুরআন বিশুদ্ধকারী ও শিক্ষাদানকারী শিক্ষিকও নির্বাচন করতে হবে তাঁদেরই পরামর্শক্রমে।

এই কাজটি জুমার খতীব সাহেবান, ইমাম ও মসজিদ কমিটির সদস্যদের সামান্য মনোযোগের মাধ্যমেই আরম্ভ হতে পারে। শুধু হিম্মত নিয়ে অগ্রসর হওয়া দরকার। ‘সম্পূর্ণ না হলে যতটুকু সম্ভব করি’ এই নীতি অনুসরণ করা হলে কোন্ কাজটি কঠিন থাকে?

একটি অনুসরণীয় দৃষ্টান্ত

কিছুদিন আগে বগুড়ার একটি মাদ্রাসায় গিয়েছিলাম। মাদ্রাসাটির নাম ‘দাওয়াতুল হক বহুমুখী আদর্শ মাদরাসা ও সমাজসেবা সেন্টার।’ উত্তরবঙ্গের সবচেয়ে বড় দ্বীনী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বগুড়া জামিল মাদ্রাসার শাইখুল হাদীস হযরত মাওলানা ইয়াকুব সাহেব এর প্রতিষ্ঠাতা। এই মাদ্রাসার একটি বিশেষ উদ্দেশ্য হল দ্বীনী শিক্ষা বিস্তার। এজন্য তিনি সেখানে ‘বয়স্ক শিক্ষা’কে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে গ্রহণ করেছেন। সেখানে গিয়ে এটাও জানতে পেরেছি যে, তিনি শহরের অনেক মসজিদে পালাক্রমে দ্বীনী শিক্ষার আয়োজন করে রেখেছেন। এর মাধ্যমে হাজারো মানুষ কুরআনে পাক বিশুদ্ধভাবে তেলাওয়াত করা এবং দ্বীনের প্রাথমিক বিষয়াদির জ্ঞান লাভ করতে সক্ষম হয়েছেন এবং এখনো হচ্ছেন।

শাইখুল হাদীস মাওলানা ইয়াকুব সাহেবের তালীমী হালকায় দীর্ঘদিন পর্যন্ত দরসে কুরআনের ব্যবস্থা ছিল। এরপর কাযী সানাউল্লাহ পানিপথী রাহ.-এর কিতাব ‘মালাবুদ্দা মিনহু’এর বাংলা অনুবাদের দরস দিয়েছেন। কিতাবটি বাস্তবিক পক্ষেই দ্বীনের অতি প্রয়োজনীয় বিষয়াদি শিক্ষা করার জন্য উপযুক্ত। এরপর সে হাল্কায় নূরুল ইজাহ-এর দরস হয়েছে। মাওলানা মনযূর নুমানী রাহ. সংকলিত ও ব্যাখ্যাকৃত ‘মাআরিফুল হাদীস’ তাঁর দরসাধীন রয়েছে। এ সম্পর্কে তাঁর প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা হল, এর মাধ্যমে মানুষ একদিকে যেমন দ্বীনের প্রয়োজনীয় বিষয়াদির জ্ঞান অর্জন করছে, অপরদিকে তাদের আকীদা-বিশ্বাসে দৃঢ়তা এবং আমলের মধ্যে অবিচলতা আসছে। ধীরে ধীরে তাদের মনে দ্বীনের পূর্ণাঙ্গ রূপটি পরিষ্কার হচ্ছে এবং দ্বীন বোঝার ব্যাপারে নির্ভরযোগ্য। মন-মেজাজ সৃষ্টি হচ্ছে। মাদ্রাসাটির এক দুইজন শিক্ষার্থীর কুরআন তেলাওয়াত শোনার সৌভাগ্যও আমার হয়েছে। আল্লাহ তাআলার শোকর আদায় করছি, তাদের তেলাওয়াত বেশ শুদ্ধ। তেলাওয়াত শুনে আন্দাজ করা যাচ্ছিল না যে, তা কোন সাধারণ মানুষের তেলাওয়াত। অথচ সাধারণত দেখা যায় রীতিমত মশ্ক করলেও সাধারণ মানুষের তেলাওয়াতে এমন এক ধরনের সূর বা ছাপ পাওয়া যায় যার দ্বারা বোঝা যায় যে, ইনি মাদ্রাসা পড়ুয়া আলেম নন।

ইলমে দ্বীন শিক্ষার সাধারণ ব্যবস্থা যেসব স্থানে আছে বা থাকা উচিত সেখানে অংশগ্রহণ এবং এই সুযোগ থেকে উপকৃত হওয়ার অধিক হকদার আমাদের ওই সব ভাই, যারা দাওয়াত ও তাবলীগের কাজের মাধ্যমে দ্বীনের গুরুত্ব অনুধাবনে সক্ষম হয়েছেন। বিশেষভাবে তাদেরকেই অনুরোধ করা হচ্ছে যে, আলেম-উলামার নিকট থেকে দ্বীনী মাসায়েলের ইলম অর্জন করুন। আশা করি তাঁরা নিজেরাও এ বিষয়ে মনোযোগী হবেন এবং অন্যকেও মনোযোগী করার চেষ্টা করবেন। আল্লাহ আমাদেরকে তাওফীক দান করুন।

মহিলাদের তাবলীগ/তালীম কতটুকু জায়েজ?দাওয়াতি কাজের উদ্দেশ্যে মহিলাদের নিজ বাড়ি ছেড়ে দুরে গমন করার বিধান কী?
#আমরা পবিত্র কুরআনের অায়াত গুলোর দিকে লক্ষ করি তাহলে দেখবো আল্লাহ্ তাঁর বান্দাদের পৃথিবীতে পথ-প্রদর্শণ করানোর জন্য অনেক নবী~রাসূল পাঠিয়েছেন। কিন্তু তাঁদের মধ্যে কোন নবী , রাসূল ই মহিলা ছিলনা। এবং নবী অর্থ যদি নবুওয়াত প্রাপ্তি হিসেবে নেন, তাহলে দেখবেন ইসলামে কোন মহিলা নবী ই নেই।
অথচ আল্লাহর দ্বীন প্রচারে নবী-রাসূলরাই বিশেষ ভূমিকা রাখেন, রেখেছেন। রাসূল (স:) এর যুগে যারা দ্বীন প্রচার করতেন তারা সবাই পুরুষ সাহাবী ছিলেন।
কখনো রাসূল (স:) নিজেও দ্বীন প্রচারের জন্য কোন স্ত্রীকে নিয়ে বেরিয়ে যাননি, কখনো তিনি আয়েশা (রা:)কে বলেননি যে, আয়েশা (রা:) তুমি আজ ওমুকের বাড়ীতে ইসলাম বুঝাতে যাবে, আর আমি অন্য পাড়াতে প্রচার করবো এবং রাসূল (স:) পূর্ণ জীবনে এমন কোন সহীহ হাদিস ও নেই যে, যেখানে বলা আছে মহিলাদের বাইরে বেরিয়ে গিয়ে দ্বীন প্রচার করতে হবে। এটা মহিলাদের জন্য ফরয নয়।
তবে বুখারী ও মুসলিমের হাদিসে
আসছে: কারোর (নারীর) যদি দ্বীনি বিষয়ে ভাল জানা থাকে তবে তাঁর কাছ থেকে আত্মীয়স্বজন ও প্রতিবেশিরা দ্বীন শিক্ষার জন্য যাবে।
তাহলে বুঝা যায় ,
কোন নারী দ্বীন প্রচারের জন্য বাইরে বেরিয়ে যাবেনা। বরং তার কাছ থেকে অন্যরা জেনে নিবে।
তবে কোন কোন আলেম বলেছেন, মহিলাদের যদি গভীর বিশুদ্ধ জ্ঞান থাকে দ্বীন বিষয়ে তাহলে তারা নিজেদের বাড়িতে দ্বীনি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে পারে নারীদের জন্য। তবে এতে ‘স্বামীর’ অনুমতি থাকতে হবে। মহিলা তালীমে কুরআন হাদিসের নামে মিথ্যা, জয়ীফ ও মনগড়া কিচ্ছা কাহিনী প্রচার করার ব্যাপারে: অধিকাংশ মহিলারাই কুরআন হাদিস সমন্ধে সহীহ জ্ঞান রাখে না। বর্তমানে যারা তালীম দিচ্ছে তার ৯৮% ওর বেশি মহিলারা মিথ্যা গল্প গুজুব দিয়ে উপদেশ দিচ্ছে। তারা যেসব বই পড়ে, তারমধ্যে রয়েছে,ফাযায়েলে নামায, ফাযায়েলে হজ্জ্ব, ফাযায়েলে যাকাত, ফাযায়েলে রোযা, উজীফা শরীফ ও নিয়ামুল কোরআনসহ অন্যান্য বই।
যাতে শির্ক আর কুফরি তে ভরপুর।
ফলে তারা সহীহ জ্ঞান রাখে ও না
প্রচার ও করতে পারে না। এতে করে
প্রায় সবাই অধিকাংশ আমল মিথ্যার উপর করে যাচ্ছে।
#দাওয়াতি কাজের উদ্দেশ্যে মহিলাদের নিজ বাড়ি ছেড়ে দুরে গমন করার বিধান?
▪▪▪▪▪▪▪▪▪
প্রশ্ন: মেয়েরা যে বিভিন্ন হালাকায় বসে তা কি জায়েয? একজন বললেন যে, আয়িশা (রা), খাদিজা (রা) ওনারা কখনও এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় গিয়ে দাওয়াত দিতেন না। অনেক সময় পাশের জেলা বা আশে-পাশে কোথাও মেয়েরা কি দাওয়াতি কাজের উদ্দেশ্যে যেতে পারে? এক্ষেত্রে কি মাহরাম সাথে থাকা আবশ্যক? দেখা যায়, যে এসব মেয়েলি প্রোগ্রামে ছেলে মানুষ থাকাতেও সমস্যা আর দূরত্বও তো একদিন একরাতের সমান নয়।
উত্তর:
পুরুষ-নারী প্রতিটি মানুষের জন্য দাওয়াতি কাজ করা ফরজ তার সাধ্য ও সামর্থ্য অনুযায়ী। একজন নারীর দাওয়াতি কাজের সর্ব শ্রেষ্ঠ ক্ষেত্রে হল তার পরিবার, সন্তান-সন্ততি। তাকে স্বামীর প্রতি দায়িত্ব পালন, তার ঘর গোছানো, সম্পদ হেফাজত, সন্তান-সন্ততিদের লালন-পালন ইত্যাদি নানা কাজে তাকে সময় দিতে হয়। এগুলো তার প্রধানতম দায়িত্ব।
সুতরাং এ সকল দায়িত্ব ফেলে দিয়ে দূর দূরান্তে তাকে দাওয়াতি কাজ করে বেড়াতে হবে- ইসলাম তাকে এ দায়িত্ব দেয় নি।
আনাস রা. বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
إِذَا صَلَّتْ الْمَرْأَةُ خَمْسَهَا، وَصَامَتْ شَهْرَهَا، وَحَفِظَتْ فَرْجَهَا، وَأَطَاعَتْ زَوْجَهَا, قِيلَ لَهَا: ادْخُلِي مِنْ أَيِّ أَبْوَابِ الْجَنَّةِ شِئْتِ))
“একজন নারী যখন
-পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করে।
– রামাযানের সিয়াম পালন করে।
– লজ্জা স্থানের হেফাজত করে ও
– এবং স্বামীর আনুগত্য করে। তখন সে জান্নাতের যে দরজা দিয়ে ইচ্ছা প্রবেশ করতে পারবে।” (মিশকাত, হা/৩২৫৪ সনদ হাসান)
শর্ত হল, শিরক-বিদআত মুক্ত আমল করতে হবে এবং মানুষের হক নষ্ট করা যাবে না।
এ কাজগুলো করলে আল্লাহ তায়ালা তার জন্য জান্নাতের ঘোষণা দিয়েছেন।
তবে কেউ যদি উপরোক্ত কাজগুলো যথাযথভাবে সম্পাদন করার পর স্বামী বা মাহরাম সহকারে দ্বীনের দাওয়াত দেয়ার জন্য দূরে কোথাও গমন করে তাহলে তাতে কোন অসুবিধা নেই ইনশাআল্লাহ।
সে ইচ্ছে করলে সে নিজ বাড়িতেই দীনী তালিমের হালাকা করতে পারে। সেখানে তার প্রতিবেশী মহিলারা অংশ গ্রহণ করবে। অথবা স্বামী বা অভিভাবকের অনুমতি সাপেক্ষে বাড়ির আশে পাশে অন্য কোথাও তালিমী বৈঠক করতে পারে যদি এতে নিজের বাড়ির দায়িত্বে ব্যাঘাত সৃষ্টি না হয় এবং ফেতনা থেকে নিরাপদ থাকে।
তবে বর্তমান যুগে দেখা যায়, কিছু মহিলা স্বামী বা মাহরাম পুরুষ ছাড়া একসাথে কয়েকজন মহিলা মিলে দাওয়াত, তালীম আর ইসলামী সংগঠনের নামে এক জেলা থেকে আরেক জেলা ছুটে বেড়াচ্ছেন!অনেক ক্ষেত্রে তারা স্বামীর অনুমতিরও প্রয়োজন অনুভব করে না। অথবা স্বামীকে একপ্রকার চাপে ফেলে অনুমতি দিতে বাধ্য করে!!
একাজগুলো অবশ্যই শরীয়ত অনুমোদন করে না।
তাই দাওয়াতি কাজে আগ্রহী মহিলাদের কর্তব্য হল, তারা নিজ স্বামী ও পরিবারের প্রতি আরও অধিক যত্নশীল হবেন। তারপর সাধ্যানুযায়ী দাওয়াতি কাজ করবেন। বর্তমান যুগে ঘরে বসেই নানা ধরণের দাওয়াতি কাজের সুযোগ আছে। সেগুলো কাজে লাগানোর চেষ্টা করবেন। আর দূরে কোথাও যেতে হলে (যদিও তা সফরের দূরত্ব নাও হয়) অবশ্যই স্বামী বা মাহরাম পুরুষ সহকারে যাবেন এবং সব ধরণের ফিতনা থেকে দুরে অবস্থান করবেন। কেননা, বর্তমান যুগে কারও অজানা নেই যে, একজন মহিলা তার বাড়ির বাইরে যাওয়টাই কতটা অনিরাপদ ও ফেতনার কারণ।
আল্লাহ তাআলা তাওফিক দান করুন। আমীন
আল্লাহু আলাম।
—————–
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব
IDC Partner

আইডিসির সাথে যোগ দিয়ে উভয় জাহানের জন্য ভালো কিছু করুন।

 

আইডিসি এবং আইডিসি ফাউন্ডেশনের ব্যপারে বিস্তারিত জানতে  লিংক০১ ও লিংক০২ ভিজিট করুন।

আইডিসি  মাদরাসার ব্যপারে বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন। 

আপনি আইডিসি  মাদরাসার একজন স্থায়ী সদস্য /পার্টনার হতে চাইলে এই লিংক দেখুন.

আইডিসি এতীমখানা ও গোরাবা ফান্ডে দান করে  দুনিয়া এবং আখিরাতে সফলতা অর্জন করুন।

কুরআন হাদিসের আলোকে বিভিন্ন কঠিন রোগের চিকিৎসা করাতেআইডিসি ‘র সাথে যোগাযোগ করুন।

ইসলামিক বিষয়ে জানতে এবং জানাতে এই গ্রুপে জয়েন করুন।

Islami Dawah Center Cover photo

ইসলামী দাওয়াহ সেন্টারকে সচল রাখতে সাহায্য করুন!

 

ইসলামী দাওয়াহ সেন্টার ১টি অলাভজনক দাওয়াহ প্রতিষ্ঠান, এই প্রতিষ্ঠানের ইসলামিক ব্লগটি বর্তমানে ২০,০০০+ মানুষ প্রতিমাসে পড়ে, দিন দিন আরো অনেক বেশি বেড়ে যাবে, ইংশাআল্লাহ।

বর্তমানে মাদরাসা এবং ব্লগ প্রজেক্টের বিভিন্ন খাতে (ওয়েবসাইট হোস্টিং, CDN,কনটেন্ট রাইটিং, প্রুফ রিডিং, ব্লগ পোস্টিং, ডিজাইন এবং মার্কেটিং) মাসে গড়ে ৫০,০০০+ টাকা খরচ হয়, যা আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জিং। সেকারনে, এই বিশাল ধর্মীয় কাজকে সামনে এগিয়ে নিতে সর্বপ্রথম আল্লাহর কাছে আপনাদের দোয়া এবং আপনাদের সহযোগিতা প্রয়োজন, এমন কিছু ভাই ও বোন ( ৩১৩ জন ) দরকার, যারা আইডিসিকে নির্দিষ্ট অংকের সাহায্য করবেন, তাহলে এই পথ চলা অনেক সহজ হয়ে যাবে, ইংশাআল্লাহ। যারা এককালিন, মাসিক অথবা বাৎসরিক সাহায্য করবেন, তারা আইডিসির মুল টিমের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবেন, ইংশাআল্লাহ।

আইডিসির ঠিকানাঃ খঃ ৬৫/৫, শাহজাদপুর, গুলশান, ঢাকা -১২১২, মোবাইলঃ +88 01609 820 094, +88 01716 988 953 (নগদ/বিকাশ পার্সোনাল) ইমেলঃ info@islamidawahcenter.com, info@idcmadrasah.com, ওয়েব: www.islamidawahcenter.com, www.idcmadrasah.com সার্বিক তত্ত্বাবধানেঃ হাঃ মুফতি মাহবুব ওসমানী ( এম. এ. ইন ইংলিশ )