Reasons for Breaking Faith – ঈমান ভঙ্গের ১০টি কারণ
Reasons for Breaking Faith – ঈমান ভঙ্গের ১০টি কারণ
আমাদের দেশের অধিকাংশ মুসলিম অযু ভঙ্গের কারণ জানে কিন্তু ঈমান ভঙ্গের কারণ অধিকাংশ মুসলিম জানে না। অনেকে মনে করে, ঈমান আবার ভঙ্গ হয়ে কিভাবে? অজু-সালাত-সিয়ামসহ বিভিন্ন ইবাদত বিনষ্ট হওয়ার যেমন কিছু কারণ আছে, ঠিক তেমনই সকল ইবাদতের মূল ইমান বা তাওহিদ ভঙ্গেরও কিছু কারণ আছে। ওযু করার পর কিছু কাজ করলে যেমন ওযু নষ্ট হয়ে যায়, ঠিক তেমনি ঈমান আনার পর কিছু কথা, কাজ ও বিশ্বাস আছে, যা সম্পাদন করলে বা পোষণ করলে ঈমান নষ্ট হয়ে যায়। ঈমান ভঙ্গের কারণগুলো মূলত ৩ প্রকার। বিশ্বাসগত, কর্মগত এবং উক্তিগত। আলিমগণ এ ব্যাপারে অনেক বিশদ আলোচনা করেছেন। ইমামুদ দাওয়াহ শাইখ মুহাম্মাদ ইবনু আবদিল ওয়াহহাব (রহ.) সেগুলোকে দশটি পয়েন্টে সাজিয়েছেন।
ঈমান ভঙ্গের প্রধান ১০ টি কারণ –
১) আল্লাহর সাথে শিরক করা।
২) আল্লাহ ও বান্দার মধ্যে মধ্যস্তাকারী বানানো।
৩) নবী (সাঃ) এর তুলনায় অন্য কারও ফয়সালাকে উত্তম মনে করা।
৪) মুশরিক ও কাফিরকে কাফির মনে না করা।
৫) মুসলমানদের বিরুদ্ধে মুশরিক ও কাফিরকে সহযোগিতা করা।
৬) আল্লাহর দ্বীন থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়া।
৭) আল্লাহর দ্বীনের কোন কিছুকে অপছন্দ করা।
৮) আল্লাহর দ্বীনের কোন কিছুকে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করা।
৯) কোন ব্যক্তিকে সরিয়তের আওতা মুক্ত মনে করা।
১০) যাদু করা, শেখা ও শেখানো।
এক. আল্লাহর সঙ্গে শিরক করা
‘নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর সঙ্গে অংশীদার করা ক্ষমা করেন না। তা ব্যতীত অন্যান্য অপরাধ যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করেন; এবং যে কেউ আল্লাহর সঙ্গে শিরক করে সে এক মহাপাপ করে।’ [সুরা নিসা ৪ : ৪৮] ‘কেউ আল্লাহর সঙ্গে শিরক করলে অবশ্যই আল্লাহ তার জন্য জান্নাত হারাম করবেন এবং তার আবাস জাহান্নাম। আর জালিমদের জন্য কোনো সাহায্যকারী নেই।’ [সুরা মায়িদা, ৫ : ৭২]
দুই. আল্লাহ এবং বান্দার মধ্যে কাউকে মধ্যস্থতাকারী বানানো
‘তারা আল্লাহকে ব্যতীত যার ইবাদাত করে তা তাদের ক্ষতিও করতে পারে না, উপকারও করতে পারে না। তারা বলে, এরা আল্লাহর নিকট আমাদের সুপারিশকারী। বল, তোমরা কি আল্লাহকে আকাশমণ্ডলি ও পৃথিবীর এমন কিছুর সংবাদ দিচ্ছ, যা তিনি জানেন না? তিনি মহান, পবিত্র এবং তারা যাকে শরিক করে তা হতে তিনি ঊর্ধ্বে।’ [সুরা ইউনুস, ১০ : ১৮]
‘জেনে রাখ, অবিমিশ্র আনুগত্য আল্লাহরই প্রাপ্য। যারা আল্লাহর পরিবর্তে অন্যকে অভিভাবকরুপে গ্রহণ করে তারা বলে, ‘আমরা তো এদের পূজা এজন্যই করি যে, ইহারা আমাদের আল্লাহর সান্নিধ্যে নিয়ে যাবে।’ তারা যে বিষয়ে নিজেদের মধ্যে মতভেদ করছে আল্লাহ তার ফয়সালা করে দিবেন। যে মিথ্যাবাদী ও কাফির আল্লাহ তাকে সৎপথে পরিচালিত করেন না।’ [সুরা যুমার, ৩৯ : ৩]
তিন. মুশরিক-কাফিরদের কাফির মনে না করা
এমন কাফির, যার কুফরির ব্যাপারে আহলুস সুন্নাহ একমত। সেটা আসলি কাফির হতে পারে—যেমন ইহুদি, খৃস্টান ও হিন্দু সম্প্রদায়—আবার মুরতাদ, যিনদিকও হতে পারে, যেমন প্রকাশ্যে আল্লাহ, রাসুল বা দীনের কোনো অকাট্য ব্যাপার নিয়ে কটূক্তিকারী; যাদের কুফরির ব্যাপারে হকপন্থি আলিমগণ একমত।
চার. নবি (সা.)’র ফয়সালার তুলনায় অন্য কারও ফয়সালাকে উত্তম মনে করা
‘আপনি কি তাদের দেখেননি, যারা দাবি করে যে, যা আপনার প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে এবং আপনার পূর্বে যা অবর্তীণ হয়েছে, আমরা তার ওপর ঈমান এনেছি। তারা বিচার-ফয়সালা নিয়ে যেতে চায় তাগুতের কাছে, অথচ তাদের প্রতি নির্দেশ হয়েছে, যাতে তারা তাকে মান্য না করে। পক্ষান্তরে শয়তান তাদের প্রতারিত করে পথভ্রষ্ট করে ফেলতে চায়।’ [সুরা নিসা, ৪ : ৬০]
পাঁচ. মুহাম্মাদ (সা.) আনীত কোনো বিধানকে অপছন্দ করা
‘অতএব, তোমার পালনকর্তার কসম, সে লোক ঈমানদার হবে না, যতক্ষণ না তাদের মধ্যে সৃষ্ট বিবাদের ব্যাপারে তোমাকে বিচারক বলে মনে না করে। এরপর তোমার মীমাংসার ব্যাপারে নিজের মনে কোনো রকম সংকীর্ণতা পাবে না এবং তা সন্তুষ্টচিত্তে কবুল করে নেবে।’ [সুরা নিসা, ৪ : ৬৫]
ছয়. দীনের কোনো বিধান নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করা
“তুমি তাদের প্রশ্ন করলে তারা নিশ্চয়ই বলবে, ‘আমরা তো আলাপ-আলোচনা ও ক্রীড়া-কৌতুক করছিলাম।’ বলো, ‘তোমরা কি আল্লাহ, তাঁর আয়াত ও তাঁর রাসুলকে বিদ্রুপ করছিলে?’ তোমরা অযুহাত দেয়ার চেষ্টা করো না। তোমরা তো ঈমান আনার পর কুফরি করেছ।” [সুরা তাওবা, ৯ : ৬৫-৬৬]
সাত. জাদু করা
‘সুলাইমান কুফরি করেনি, কুফরি তো করেছিল শয়তানরাই। তারা মানুষকে জাদু শিক্ষা দিত…।’ [সুরা বাকারা, ২ : ১০২]
আট. মুসলিমদের বিরুদ্ধে মুশরিকদের সমর্থন ও সহযোগিতা করা
‘হে মুমিনগণ! তোমাদের পিতা ও ভাইও যদি ঈমানের বিপরীতে কুফরিকে বেছে নেয়, তবে তাদের অন্তরঙ্গরূপে গ্রহণ করো না। তোমাদের মধ্যে যারা তাদের অন্তরঙ্গরূপে গ্রহণ করে, তারাই সীমালঙ্ঘনকারী।’ [সুরা তাওবা, ৯ : ২৩]
‘হে মুমিনগণ! তোমরা ইহুদি ও খৃস্টানদের বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না। তারা পরস্পরের বন্ধু। তোমাদের মধ্যে কেউ তাদের বন্ধুরূপে গ্রহণ করলে সে তাদেরই একজন বলে গণ্য হবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ পাপাচারী সম্প্রদায়কে সৎপথে পরিচালিত করেন না।’ [সুরা মায়িদা, ৫ : ৫১]
নয়. কাউকে দীন-শরিয়তের ঊর্ধ্বে মনে করা
‘আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দীন পূর্ণাঙ্গ করলাম ও তোমাদের প্রতি আমার অনুগ্রহ সম্পূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের দীন হিসেবে মনোনীত করলাম।’ [সুরা মায়িদা, ৫ : ৩]
দশ: দীন থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়া
‘যে ব্যক্তি তার প্রতিপালকের নিদর্শনাবলি দ্বারা উপদিষ্ট হয়েও তা হতে মুখ ফিরিয়ে নেয় তার অপেক্ষা অধিক অপরাধী আর কে? আমি অবশ্যই অপরাধীদের শাস্তি দিয়ে থাকি।’ [সুরা সাজদা, ৩২ : ২২]
কুরআন ও হাদিসের আলোকে ঈমান ভঙ্গের কারণ:
ঈমান ভঙ্গের কারণসমূহ
সম্মানিত পাঠক, আমরা অনেক সাধারন মুসলমান আছি যারা কিনা অজু ভঙ্গের কারণ, নামাজ ভঙ্গের কারণ ও রোজা ভঙ্গের কারণ সমূহ কম বেশি জানি। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো আমরা অধিকাংশ মুসলমান আছি যারা কিনা ঈমান ভঙ্গের কারণ সম্পর্কে কিছুই জানি না। তাই সচেতন প্রতিটি ঈমানদার ব্যাক্তির জন্য আমরা ঈমান ভঙ্গের কারণ গুলো সংক্ষেপে তুলে ধরার চেষ্টা করবো।
ঈমান ভঙ্গ বলতে কি বুঝায়?
প্রথমত:
ঈমান ভঙ্গ বলতে বুঝায় ঈমান গ্রহণের পর বিশ্বাসগত দিক থেকে এমন কোন কিছুর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা বা বিশ্বাস উঠিয়ে নেওয়া যা একত্ববাদ কিংবা রিসালাতের বাণীর সাথে সাংঘর্ষিক অথবা আমলগত দিক থেকে এমন কোন কাজ করা এবং একে বৈধ মনে করা যা শরীয়তের মূলভিত্তিকেই নষ্ট করে দেয় অথবা এমন কোন কথা বলা যা কিনা ঈমানের মৌলিক বিশ্বাসগুলোর বিপরীত হয়।
দ্বিতীয়ত:
ঈমান ভঙ্গ বলতে বুঝায়, বিশ্বাসে, কথায় কিংবা কাজে এমন কোন বিষয় প্রকাশ করা যা কিনা ঈমানের বিপরীত এবং এই বিপরীত বিষয়কে মনে প্রাণে ধারণ করা।
ঈমান ভঙ্গের কারণসমূহ:
ঈমান ভঙ্গের কারণসমূহ তিন ভাগে ভাগ করা যায়। যথা:
১. বিশ্বাসগত, ২. ভাষাগত, ৩. আমলগত
১. বিশ্বাসগত দিক থেকে ঈমান ভঙ্গের কারণ:
বিশ্বাস গত দিক থেকে কয়েকভাবে ঈমান ভঙ্গ হয়ে যায়। যথা :
১নং কারণ:
শিরক। শিরক এমন এক পাপ যার মাধ্যমে ঈমান নষ্ট হয়ে যায়। মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন:
إِنَّ اللَّهَ لَا يَغْفِرُ أَنْ يُشْرَكَ بِهِ وَيَغْفِرُ مَا دُونَ ذَلِكَ لِمَنْ يَشَاءُ وَمَنْ يُشْرِكْ بِاللَّهِ فَقَدِ افْتَرَى إِثْمًا عَظِيمًا
অর্থ: নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা তাঁর সাথে করা শিরকের গুনাহ কখনো ক্ষমা করেন না, এ (শিরকের গুনাহ) ছাড়া তিনি অন্য সকল গুনাহ যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করে দিবেন। যে শিরক করলো সে আল্লাহর প্রতি মহা অপবাদ দিলো। (সূরা নিসা: ৪৮)
অন্য আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন:
إِنَّهُ مَن يُشْرِكْ بِاللّهِ فَقَدْ حَرَّمَ اللّهُ عَلَيهِ الْجَنَّةَ وَمَأْوَاهُ النَّارُ
নিশ্চয়ই যে আল্লাহর সাথে অন্য কাউকে শরীক করে আল্লাহ তার জন্য জান্নাত হারাম করে দেন। আর তার ঠিকানা হয় জাহান্নাম। ( সূরা মায়েদা: ৭২)
# শিরক হয় কয়েকভাবে:
ক. আল্লাহর সমকক্ষ কাউকে মনে করা।
খ. ইবাদতের ক্ষেত্রে তার সাথে অন্য কাউকে আহবান করা।
গ. পৃথিবীতে আল্লাহ তায়ালা তাঁর কার্য সাধন করার জন্য কারো সাহায্যের মুখাপেক্ষি মনে করা।
ঘ. আল্লাহ তায়ালা ব্যাতিত অন্য কেউ গায়েব জানে এ কথা বিশ্বাস করা।
ঙ. আল্লাহর দেওয়া বিধানের বিপরীত অন্য কারো বিধানকে উপযুক্ত মনে করা।
চ. আল্লাহ ব্যতিত কোন মৃত কারো কোন উপকার ক্ষতি করতে পারে এ বিশ্বাস করে।
২নং কারণ:
ইসলামের কোন ফরজ অথবা ওয়াজিব বিধানকে তিরস্কার বা অস্বীকার করা। যেমন কেউ বলল: যারা অভাবী তারাই রোজা রাখে। অথবা কেউ বলল যে, হজ্জ পালনের মাধ্যমে সম্পদের অপচয় ছাড়া আর কিছুই নয়।
৩নং কারণ:
ইসলামে শরীয়ত যে সকল বিষয়কে হারাম করেছে সেগুলোকে জেনে-শুনে হালাল মনে করা। ইবনে কুদামা বলেন: যে সকল বিষয় হারাম হওয়ার ব্যাপারে উম্মাহ দৃঢ়ভাবে একমত পোষণ করেছে এবং মানুষের মাঝে এর হুকম স্পষ্ট এবং শরীয়তের স্পষ্ট দলিল দ্বারা জাবতীয় সন্দেহ দূর হয়েছে। যেমন: যিনা, সুদ, শুকরের মাংশ, ধর্ম নিরপেক্ষ্য মতবাদ ইত্যাদি।
৪নং কারণ:
আল্লাাহর কোন হুকুম আহকামের প্রতি সন্দেহ পোষণ করা অথবা তার পাঠানো কোন রিসালাতের প্রতি সন্দেহ পোষণ করা।
যেমন: কেউ পবিত্র কুরআনের কোন আয়াতকে অস্বীকার অথবা এর ব্যাপারে সন্দেহ সংশয় করা। যেমন আল্লাহ বলেন: এটি এমন একটি কিতাব, যার মধ্যে কোন সন্দেহের অবকাশ নেই। এটি মুত্তাকিদের জন্য হেদায়েত। (সূরা আল বাকারা: ০২)
অথবা আল্লাহর রাসূল স: এর সত্য হওয়ার ব্যাপারে সন্দেহ করা কিংবা তাঁর বর্ণিত কোন নির্ভরযোগ্য সংবাদের প্রতি সন্দেহ পোষন করা। যেমন: মিরাজ
৫নং কারণ
কাফেরদের কুফুরীকে অস্বীকার না করা অথবা তাদের কুফুরীতে ভালো হওয়ার ব্যাপারে সন্দেহ করা কিংবা তাদের কুফুরী মতবাদকে সঠিক মনে না করা। যেমন: আল্লাহ তায়ালা বলেন:
وَمَنْ يَبْتَغِ غَيْرَ الْإِسْلَامِ دِينًا فَلَنْ يُقْبَلَ مِنْهُ وَهُوَ فِي الْآخِرَةِ مِنَ الْخَاسِرِينَ
“যে ব্যক্তি ইসলাম ছাড়া অন্য কোন বিধান তালাশ করবে তা তার থেকে কখনো গ্রহণ করা হবে না। আর সে হবে আখেরাতে ক্ষতিগ্রস্থদের একজন”। ( আলে ইমরান: ৮৫)
৬ নং কারণ
রাসূল (স:) এর আনুগত্য করা ওয়াজিব নয় এই ধারণা করা অথবা তার প্রদর্শিত শরীয়ত থেকে বের হয়ে যাওয়া কিংবা তাকে মানতে অস্বীকার করা বা না মানার ব্যাপারে অহংকার করা। যার কারনে ঈমান ভঙ্গ হয়ে যায়। যেমন আল্লাহ বলেন:
فَلاَ وَرَبِّكَ لاَ يُؤْمِنُونَ حَتَّىَ يُحَكِّمُوكَ فِيمَا شَجَرَ بَيْنَهُمْ ثُمَّ لاَ يَجِدُواْ فِي أَنفُسِهِمْ حَرَجًا مِّمَّا قَضَيْتَ وَيُسَلِّمُواْ تَسْلِيمًا
“ অতএব তোমার পালনকর্তার কসম! এরা ততক্ষণ পর্যন্ত ঈমানদার হবেন না, যতক্ষণ না তারা আপনাকে তাদের মধ্যে সৃষ্ট বিবাদের ফয়সালার বিচারক মনে না করবে এবং আপনার সিদ্ধান্তের ব্যাপারে তাদের মনে কোন অনিহা বা দু:খ না থাকে এবং যে পর্যন্ত তারা আপনার বিচারকে সম্পূর্ণরূপে মনে প্রাণে মেনে নেয় ”। (সূরা নিসা: ৬৫)
৭নং কারণ:
আল্লাহর দ্বীনের বিধানগুলোকে উপেক্ষা করা। যেমন: আল্লাহ তায়ালা বলেন:
وَمَنْ أَظْلَمُ مِمَّن ذُكِّرَ بِآيَاتِ رَبِّهِ ثُمَّ أَعْرَضَ عَنْهَا إِنَّا مِنَ الْمُجْرِمِينَ مُنتَقِمُونَ
“তার চেয়ে বড় জালেম আর কে, যার নিকট আল্লাহর আয়াতসমূহ দ্বারা উপদেশ প্রদান করা হলে সে তা উপেক্ষা করে। নিশ্চয়ই আমি (এমন) অপরাধীদের শাস্তি দিবো”। (সূরা সাজদা: ২২)
৮নং কারণ:
বিশ্বাসগত মুনাফেকী: এই মুনাফেকী দ্বারা ঐ মুনাফিককে বুঝানো হয়নি যা সম্পর্কে রাসূল স: বলেছেন: মুনাফিকের আলামত তিনটি : কথা বললে মিথ্যা বলে, ওয়াদা করলে ভঙ্গ করে এবং আমানত রাখলে খিয়ানত করে। অন্য হাদিসে বলেছেন: ঝগড়া করলে গালি দেয়। বরং এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো: ঈমানের কোন একটি বিষয় নিয়ে মুনাফেকী করা। এদের ব্যাাপারে আল্লাহ তায়ালা বলেন:
وَإِذَا لَقُواْ الَّذِينَ آمَنُواْ قَالُواْ آمَنَّا وَإِذَا خَلَوْاْ إِلَى شَيَاطِينِهِمْ قَالُواْ إِنَّا مَعَكْمْ إِنَّمَا نَحْنُ مُسْتَهْزِئُونَ
আর যখন তারা ঈমানদারদের সাথে মিশে তখন বলে আমরা ঈমান এনেছি। আর যখন তারা শয়তানের সাথে একান্তে মিলিত হয় তখন তারা বলে আমরাতো তোমাদের সাথেই রয়েছি। আমরাতো মুসলমানদের সাথে উপহাস করি মাত্র। (সূরা বাকারা: ১৫)
২. ভাষাগত দিক থেকে ঈমান ভঙ্গের কারণ
অর্থাৎ ভাষাগত দিক থেকে কয়েকভাবে ঈমান ভঙ্গ হয়ে যায়। যথা :
১নং কারণ:
কোন ব্যক্তির কাছে এমন কোন বিষয় প্রার্থনা করা যার প্রার্থনা আল্লাহর সাথে সম্পর্কিত। যেমন: সন্তান চাওয়া,
২নং কারণ:
বিপদে পড়ে অনুপস্থিত কোন ব্যক্তির নিকট সাহায্য প্রার্থনা করা । যেমন: কারো জ্বর হলে সে আল্লাহর পরিবের্তে তার পীর কে বলে, অমুক! আমাকে সুস্থতা দান করুন।
* উল্লেখ্য যে, ১ ও ২ নং কারণ শিরকের আওতায় পড়ে বিধায় ঈমান ভেঙ্গে যাবে।
৩নং কারণ
আল্লাহ তায়ালা, তাঁর রাসূলগণ, তাঁর কিতাব সমূহ অথবা তাঁর দ্বীনকে গালি দিলে ঈমান ভেঙ্গে যাবে।
৪নং কারণ:
আল্লাহ তায়ালা, তাঁর রাসূলগণ, তাঁর কিতাব সমূহ অথবা তাঁর দ্বীনকে নিয়ে উপহাস বা ঠাট্টা-বিদ্রুপ করলে ঈমান ভেঙ্গে যাবে।
আল্লাহ তায়ালা বলেন:
وَلَئِن سَأَلْتَهُمْ لَيَقُولُنَّ إِنَّمَا كُنَّا نَخُوضُ وَنَلْعَبُ قُلْ أَبِاللّهِ وَآيَاتِهِ وَرَسُولِهِ كُنتُمْ تَسْتَهْزِؤُونَ
আর যদি তুমি তাদের কাছে জিজ্ঞেস কর, তবে তারা বলবে, আমরাতো কথার কথা বলেছিলাম এবং কৌতুক করেছিলাম। আপনি বলুন! তোমরা কি আল্লাহর সাথে, তাঁর হুকুম আহকামের সাথে এবং তাঁর রাসূলের সাথে ঠাট্টা বিদ্রুপ করেছিলে। তোমরা বাহানা করো না। ঈমান গ্রহণের পর তোমরাতো কাফের হয়ে গেছ। তোমাদের মধ্যে কাউকে যদি আমি ক্ষমা করেও দিই, তবে অবশ্যই কিছু লোককে আযাব দিব। কারণ তারা গোনাহগার ছিল। (সূরা তাওবা: ৬৫-৬৬)
৫নং কারণ:
দ্বীনের স্পষ্ট কোন বিষয়কে প্রয়োজন অনুসারে অস্বীকার করা। যেমন: আল্লাহর কোন একটি কিতাব, ফেরেস্তা, জ্বিন, পুনরুত্থান, কিংবা আখেরাত।
৬নং কারণ:
নবুওয়াতের দাবী করা। রাসূলুল্লাহ (স:) বলেন: আমি শেষ নবী আমার পরে আর কোন নবী আসবে না।
আল্লাহ তায়ালা বলেন:
مَا كَانَ مُحَمَّدٌ أَبَا أَحَدٍ مِنْ رِجَالِكُمْ وَلَكِنْ رَسُولَ اللَّهِ وَخَاتَمَ النَّبِيِّينَ وَكَانَ اللَّهُ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيمًا
মুহাম্মাদ স: তোমাদের পুরুষদের কারো পিতা নন, বরং তিনি আল্লাহর রাসূল এবং শেষে নবী। আল্লাহ সবসময় জ্ঞাত। (আহযাব: ৪০)
হাদীসে রাসূল (স:) বলেন: ততক্ষণ পর্যন্ত কিয়ামত সংগঠিত হবে না যথক্ষণ পর্যন্ত প্রায় ত্রিশ জন মিথ্যাবাদী দাজ্জালের আগমন না ঘটবে। তাদের প্রত্যেকে দাবী করবে যে, সে আল্লাহর রাসূল। (বুখারী: ৩৪২৩, মুসলিম: ১৫৭)
৭নং কারণ
কেউ নিজে গায়েব জানে এই দাবী করলে।
রাসূল স: বলেন, যে ব্যক্তি কোন জ্যোতিষী বা গনেকের নিকট যায় এবং তার কথাকে সত্যায়ণ করে তাহলে সে মুহাম্মাদ (স) এর উপর যা নাযিল হয়েছে তা অস্বীকার করেছে। ( মুসনাদে আহমাদ:২/৪২৯) অন্য হাদিসে রাসূল (স) বলেন, যে ব্যক্তি কোন গনকের কাছে আসলো এবং তাকে কোন বিষয়ে জিজ্ঞেস করলো তাহলে তার চল্লিশ রাতের ইবাদত কবুল হবে না। (মুসলিম: ২২৩০)
যেমন: জ্যোতির্বিদ্যা, রাশি দেখা, ভাগ্য গনণাকারী, যাদু মন্ত্র শিখা
৩.আমলগত দিক থেকে ঈমান ভঙ্গের কারণ:
১. নং কারণ:
ইবাদতের ক্ষেত্রে আল্লাহর সাথে শিরক করা। সূরা যুমারে শিরককারীদের অজুহাত আল্লাহ তুলে ধরেন, তিনি বলেন:
أَلَا لِلَّهِ الدِّينُ الْخَالِصُ وَالَّذِينَ اتَّخَذُوا مِنْ دُونِهِ أَوْلِيَاءَ مَا نَعْبُدُهُمْ إِلَّا لِيُقَرِّبُونَا إِلَى اللَّهِ زُلْفَى
অর্থাৎ- জেনে রেখ, আল্লাহর জন্যই একনিষ্ঠ দ্বীন। আর যারা আল্লাহকে ছাড়া অন্যদেরকে অভিভাবক হিসেবে গ্রহণ করে তারা বলে, আমরা কেবল এজন্যই তাদের (দেবতা,পীর) ইবাদত করি যে, তারা আমাদের আল্লাহর নিকটবর্তী করে দিবে। (সূরা যুমার: ৩) অন্য আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন:
إِنَّهُ مَن يُشْرِكْ بِاللّهِ فَقَدْ حَرَّمَ اللّهُ عَلَيهِ الْجَنَّةَ وَمَأْوَاهُ النَّارُ
নিশ্চয়ই যে আল্লাহর সাথে অন্য কাউকে শরীক করে আল্লাহ তার জন্য জান্নাত হারাম করে দেন। আর তার ঠিকানা হয় জাহান্নাম। ( সূরা মায়েদা: ৭২)
২. নং কারণ:
যাদু করারাসূল (স) সাতটি ধ্বংসকারী কাজ থেকে দূরে থাকতে বলেছেন, তার ভিতরে অন্যতম হলো যাদু করা। (সহীহ মুসলিম: ১৬৩) অন্য হাদিসে রাসূল (স) বলেন, তোমরা ধ্বংসাত্মক কাজ থেকে বেঁচে থাকো,আর তা হলো আল্লাহর সাথে অংশীদারীত্ব স্থাপন করা এবং যাদু করা। (সহীহ বুখারী: ৫৭৬৪) রাসূল (স) আরো বলেন, যে ব্যক্তি গিরা দিয়ে তাতে ফুঁক দেয়, সে যাদু করলো, আর যে যাদু করলো, সে মুশরিক হলো। আর যে গলায় কিছু ঝুলায় তাকে সেই জিনিসের উপর ন্যস্ত করা হলো। (সুনানী নাসায়ী:৪০৭৯)
৩নং কারণ:
কোন মুশরিককে তার শিরকে কাজে সহায়তা করা অথবা কোন মুসলমানের বিরুদ্ধে কোন মুশরিককে সহায়তা করা। আল্লাহ তায়ালা বলেন:
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا لَا تَتَّخِذُوا الْيَهُودَ وَالنَّصَارَى أَوْلِيَاءَ بَعْضُهُمْ أَوْلِيَاءُ بَعْضٍ وَمَنْ يَتَوَلَّهُمْ مِنْكُمْ فَإِنَّهُ مِنْهُمْ إِنَّ اللَّهَ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الظَّالِمِينَ
হে মুমিনগন! তোমরা ইহুদী ও খ্রিষ্টানদেরকে তোমাদের বন্ধু ও অভিভাবক হিসেবে গ্রহণ করো না। তারা একে অপরের বন্ধু, (তোমাদের বন্ধু নয়)। তোমাদের মধ্যে যে তাদেরকে বন্ধ বা অভিভাবক বানাবে, সে তাদেরেই অন্তর্ভূক্ত। আল্লাহ জালেম সম্প্রদায়কে পথ দেখান না। (সূরা মায়েদা: ৫১)
সুতরাং প্রত্যেক সচেতন ঈমানদার ব্যক্তির উচিৎ, উল্লেখিত কারণগুলোর প্রতি লক্ষ রাখা এবং ঈমান ভঙ্গকারী জাবতীয় কাজ থেকে বিরত থাকা। আল্লাহ আমাদের তার দ্বীনের উপর অটল রাখুন।
লেখক, হাফেজ, মাও: নুরুল হুদা
আইডিসির সাথে যোগ দিয়ে উভয় জাহানের জন্য ভালো কিছু করুন।
আইডিসি এবং আইডিসি ফাউন্ডেশনের ব্যপারে বিস্তারিত জানতে লিংক০১ ও লিংক০২ ভিজিট করুন।
আইডিসি মাদরাসার ব্যপারে বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন।
আপনি আইডিসি মাদরাসার একজন স্থায়ী সদস্য /পার্টনার হতে চাইলে এই লিংক দেখুন.
আইডিসি এতীমখানা ও গোরাবা ফান্ডে দান করে দুনিয়া এবং আখিরাতে সফলতা অর্জন করুন।
কুরআন হাদিসের আলোকে বিভিন্ন কঠিন রোগের চিকিৎসা করাতেআইডিসি ‘র সাথে যোগাযোগ করুন।
ইসলামিক বিষয়ে জানতে এবং জানাতে এই গ্রুপে জয়েন করুন।
ইসলামী দাওয়াহ সেন্টারকে সচল রাখতে সাহায্য করুন!
ইসলামী দাওয়াহ সেন্টার ১টি অলাভজনক দাওয়াহ প্রতিষ্ঠান, এই প্রতিষ্ঠানের ইসলামিক ব্লগটি বর্তমানে ২০,০০০+ মানুষ প্রতিমাসে পড়ে, দিন দিন আরো অনেক বেশি বেড়ে যাবে, ইংশাআল্লাহ।
বর্তমানে মাদরাসা এবং ব্লগ প্রজেক্টের বিভিন্ন খাতে (ওয়েবসাইট হোস্টিং, CDN,কনটেন্ট রাইটিং, প্রুফ রিডিং, ব্লগ পোস্টিং, ডিজাইন এবং মার্কেটিং) মাসে গড়ে ৫০,০০০+ টাকা খরচ হয়, যা আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জিং। সেকারনে, এই বিশাল ধর্মীয় কাজকে সামনে এগিয়ে নিতে সর্বপ্রথম আল্লাহর কাছে আপনাদের দোয়া এবং আপনাদের সহযোগিতা প্রয়োজন, এমন কিছু ভাই ও বোন ( ৩১৩ জন ) দরকার, যারা আইডিসিকে নির্দিষ্ট অংকের সাহায্য করবেন, তাহলে এই পথ চলা অনেক সহজ হয়ে যাবে, ইংশাআল্লাহ। যারা এককালিন, মাসিক অথবা বাৎসরিক সাহায্য করবেন, তারা আইডিসির মুল টিমের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবেন, ইংশাআল্লাহ।
আইডিসির ঠিকানাঃ খঃ ৬৫/৫, শাহজাদপুর, গুলশান, ঢাকা -১২১২, মোবাইলঃ +88 01609 820 094, +88 01716 988 953 (নগদ/বিকাশ পার্সোনাল) ইমেলঃ info@islamidawahcenter.com, info@idcmadrasah.com, ওয়েব: www.islamidawahcenter.com, www.idcmadrasah.com সার্বিক তত্ত্বাবধানেঃ হাঃ মুফতি মাহবুব ওসমানী ( এম. এ. ইন ইংলিশ )
Related Posts
Leave a Reply Cancel reply
Categories
- advices
- Ahle Hadis
- Allah
- Amal
- Arabic Communication
- Arabic Grammar
- Arif Azad
- Bangladesh
- Biography
- Child care
- Country
- Death
- Dowry
- Dua
- Education
- Eid
- Family
- Fasting
- Fatwa
- Gazwatul Hind
- Hadith
- Hajj
- Halal or Haram
- Humble
- Husband & Wife
- IDCM
- Iman
- Interest
- Islamic Books
- Islamic Days
- Islamic Economi
- Islamic Education
- Islamic FAQ
- Islamic Future
- Islamic History
- Islamic Lectures
- Islamic Life
- Islamic Politics
- Islamic Rules
- islamic song
- islamic story
- Jihad
- Jinn
- let's learn arabic
- Magic
- Marriage
- Mosque
- Motivation
- Muhammad SM
- Muslims
- News
- Parenting
- Patriotism
- Pending
- Personal Development
- Poet
- Pornography
- Press Release
- Prophets
- Quran
- Quran and Science
- Quran Interpretation
- Qurbani
- Relations
- Rizq
- Ruqyah
- Sacrifice
- Sadaqah
- Safety
- Sahaba
- Salah
- Salat
- Sex
- Sin
- Tajweed
- Taqwa
- Tasawwuf
- Tawba
- Tawhid
- Veil
- Weed
- Zakat
Recent Posts
- বৃষ্টির সময় ৬ টি কাজ করা সুন্নাত – Sunnah During the Rain May 2, 2023
- ব্যাংকে রাখা ফিক্সড ডিপোজিটের উপর কি প্রতি বছর যাকাত আবশ্যক? – Zakat on Fixed Deposit – সমিতির টাকার ওপর জাকাত আসবে কি? March 25, 2023
- Symptoms of Bad and Good Death – খারাপ এবং ভালো মৃত্যুর আলামত সমূহ March 20, 2023
- Taweez in Islam – ইসলামে তাবিজ জায়েজ হলেও কেন তাবিজ থেকে দূরে থাকা উত্তম? March 20, 2023
- Dua to be rich – ধনী হওয়ার দোয়া/আমল- আজ থেকেই শুরু হোক ধনী হওয়ার পথচলা March 7, 2023