তাবিজ জায়েজ কিনা
Taweez in Islam – ইসলামে তাবিজ জায়েজ হলেও কেন তাবিজ থেকে দূরে থাকা উত্তম?
প্রশ্নঃ ৩৫৫০. আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, মুহ্তারাম, সন্দেহর বশিভূত হয়ে বিবাহের ব্যপারে কোনো কালো জাদু করা আছে কি না এই ব্যপারে একজন হুজুর এর সরনাপন্ন হয়েছিলাম যিনি বলছেন সমস্যা মনে হচ্ছে তাই দোয়া লিখে ,আরবি সংখ্যা লিখে তাবিজ দিয়েছেন। উনি এই রকম আরও অন্যান্য ব্যপারে দোয়া লিখে তাবিজ দেন। এখন এই তাবিজ নেওয়া কি জায়েজ হবে?
উত্তরঃ  و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته – بسم الله الرحمن الرحيم

ইসলামে কয়েক প্রকার তাবিজ জায়েজ নয়। যথা-

১-কুরআন হাদীস দ্বারা ঝাড়ফুক দেয়া ছাড়া শুধু তামা, পিতল বা লোহা দ্বারা তাবিজ বানিয়ে লটকিয়ে রাখা। অর্থাৎ শুধু এগুলো লটকানো দ্বারাই রোগমুক্ত হওয়া যাবে বিশ্বাস করে তা লটকানো নাজায়িজ।

২-এমন তাবিজ যাতে আল্লাহর নাম, কুরআনের আয়াত, দুআয়ে মাসূরা ব্যতিত শিরকী কথা লিপিবদ্ধ থাকে।

৩-তাবীজকে মুয়াসসার বিজজাত তথা তাবীজ নিজেই আরোগ্য করার ক্ষমতার অধিকারী মনে করে তাবিজ লটকানো। এ বিশ্বাস জাহেলী যুগে ছিল, বর্তমানেও ইসলাম সম্পর্কে কিছু অজ্ঞ ব্যক্তিরা তা মনে করে থাকে।

৪-যে কালামের অর্থ জানা যায় না এমন শব্দ দ্বারা তাবিজ লেখা।

৫-আরবী ছাড়া অন্য কোন ভাষায় তাবিজ লেখা।

এ সকল সুরতে সর্বসম্মত মতানুসারে নাজায়িজ ও হারাম এবং শিরক। এতে কোন সন্দেহ নেই।

কিন্তু তাবিজে কুরআনের আয়াত, আল্লাহর নাম, দুআয়ে মাসুরা বা শিরকমুক্ত অর্থবোধক থাকলে তা অবশ্যই জায়িজ। একে নাজায়িজ ও শিরক বলা মুর্খতা বৈ কিছু নয়। কেননা এসব তাবিজের ক্ষেত্রে মুয়াসসার বিজজাত তথা আরোগ্যের ক্ষমতা আল্লাহ তাআলাকেই মনে করা হয়। যেমন ডাক্তার প্রদত্ত ঔষদের ক্ষেত্রে মুয়াসসার বিজজাত আল্লাহকে মনে করার কারণে তা নাজায়িজ নয়। যদি মুয়াসসার বিজজাত ঐ ঔষধকে মনে করলে ঔষধ সেবনও শিরক ও হারাম হবে।

আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের দলিল

عَنْ عَمْرِو بْنِ شُعَيْبٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ جَدِّهِ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يُعَلِّمُهُمْ مِنَ الْفَزَعِ كَلِمَاتٍ: «أَعُوذُ بِكَلِمَاتِ اللَّهِ التَّامَّةِ، مِنْ غَضَبِهِ وَشَرِّ عِبَادِهِ، وَمِنْ هَمَزَاتِ الشَّيَاطِينِ وَأَنْ يَحْضُرُونِ» وَكَانَ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ عُمَرَ يُعَلِّمُهُنَّ مَنْ عَقَلَ مِنْ بَنِيهِ، وَمَنْ لَمْ يَعْقِلْ كَتَبَهُ فَأَعْلَقَهُ عَلَيْهِ

আমর ইবনে শুআইব তাঁর পিতা ও তিনি তাঁর দাদা থেকে বর্ণনা করেন যে,রাসূল (সঃ) ইরশাদ করেন,তোমাদের কেউ যখন ঘুম অবস্থায় ঘাবড়িয়ে উঠে,সে যেন أَعُوذُ بِكَلِمَاتِ اللَّهِ التَّامَّةِ، مِنْ غَضَبِهِ وَشَرِّ عِبَادِهِ، وَمِنْ هَمَزَاتِ الشَّيَاطِينِ وَأَنْ يَحْضُرُونِ দো’আটি পাঠ করে। আব্দুল্লাহ ইবনে আমর তাঁর উপযুক্ত সন্তানদের তা শিক্ষা দিতেন এবং ছোটদের গলায় তা লিখে লটকিয়ে দিতেন।{সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৩৮৯৫}

এ হাদীস স্পষ্টভাষায় উল্লেখ করা হয়েছে যে, আব্দুল্লাহ বিন আমর বিন আস রাঃ তাঁর অবুঝ সন্তানদের জন্য তাবীজ লিখে তা লটকিয়ে দিতেন।

যারা বলেন যে, সকল তাবিজই শিরক, তাহলে আব্দুল্লাহ বিন আমর বিন আস রাঃ কি শিরক করেছেন? নাউজুবিল্লাহ!

যে সব হাদীসে তাবীজকে হারাম শিরক বলা হয়েছে এর জবাব কি?

হাদীস দেখেই ফাতওয়া দেয়া যায় না। হাদীস সম্পর্কে প্রাজ্ঞতা থাকতে হয়। তাবীজ কবচ সম্পর্কে নিষেধাজ্ঞা সম্বলিত হাদীসে সেসব তাবীজকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে যেসব তাবীজের কথা ইতোপূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে। উল্লেখিত ৫ ধরণের নিষিদ্ধ তাতো আমরা আগেই উল্লেখ করেছি। নিষিদ্ধতার হাদীসে কেবল সেসবই উদ্দেশ্য। এ কারণেই আব্দুল্লাহ বিন আমর বিন আস রাঃ তার সন্তানদের তাবিজ দিতেন। যাতে উল্লেখিত শর্তের কোনটি বিদ্যমান নয়।

দেখুন বিজ্ঞ ওলামা ও ফক্বীহরা কী বলেন?

আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানী রহঃ বুখারী শরীফের ব্যাখ্যগ্রন্থ ফাতহুল বারীতে লিখেন-

وَالتَّمَائِمُ جَمْعُ تَمِيمَةٍ وَهِيَ خَرَزٌ أَوْ قِلَادَةٌ تُعَلَّقُ فِي الرَّأْسِ كَانُوا فِي الْجَاهِلِيَّةِ يَعْتَقِدُونَ أَنَّ ذَلِكَ يَدْفَعُ الْآفَاتِ وَالتِّوَلَةُ بِكَسْرِ الْمُثَنَّاةِ وَفَتْحِ الْوَاوِ وَاللَّامِ مُخَفَّفًا شَيْءٌ كَانَتِ الْمَرْأَةُ تَجْلِبُ بِهِ مَحَبَّةَ زَوْجِهَا وَهُوَ ضَرْبٌ مِنَ السِّحْرِ وَإِنَّمَا كَانَ ذَلِكَ مِنَ الشِّرْكِ لِأَنَّهُمُ أَرَادُوا دَفْعَ الْمَضَارِّ وَجَلْبَ الْمَنَافِعِ مِنْ عِنْدِ غَيْرِ اللَّهِ وَلَا يَدْخُلُ فِي ذَلِكَ مَا كَانَ بِأَسْمَاءِ اللَّهِ وَكَلَامِهِ فَقَدْ ثَبَتَ فِي الْأَحَادِيثِ اسْتِعْمَالُ ذَلِكَ قَبْلَ وُقُوعِهِ

তামায়েম শব্দটি তামীমা শব্দের বহুবচন। যা পুঁতি বা মালা সাদৃশ্য। মাথায় লটকানো হয়। জাহেলী যুগে বিশ্বাস করা হতো যে, এর দ্বারা বিপদমুক্ত হওয়া যায়, মহিলারা এসব ব্যবহার করতো স্বামীর মোহাব্বত অর্জন করতে। এটি জাদুরই একটি প্রকার। এটি শিরকের অন্তুর্ভূক্ত। কেননা এর দ্বারা আল্লাহ ছাড়া অন্যের থেকে বিপদমুক্ত হওয়া ও উপকার অর্জন করা উদ্দেশ্য হয়ে থাকে। কিন্তু এ শিরকের অন্তুর্ভূক্ত হবে না যেসব তাবীজ কবচে আল্লাহর নাম বা কালাম থাকে। {ফাতহুল বারী-১০/২৯০-২৯১, ঝারফুক অধ্যায়}

মোল্লা আলী কারী রহঃ বলেন-

إِذَا كَتَبَ لَهُ النُّشْرَةَ، وَهِيَ كَالتَّعْوِيذِ. وَالرُّقْيَةِ، وَالْمُرَادُ بِالضَّمِيرِ الْبَارِزِ فِي قَوْلِهِ: (فَقَالَ) : أَيِ: النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: (هُوَ مِنْ عَمَلِ الشَّيْطَانِ) : النَّوْعُ الَّذِي كَانَ أَهْلُ الْجَاهِلِيَّةِ يُعَالِجُونَ بِهِ وَيَعْتَقِدُونَ فِيهِ، وَأَمَّا مَا كَانَ مِنَ الْآيَاتِ الْقُرْآنِيَّةِ، وَالْأَسْمَاءِ وَالصِّفَاتِ الرَّبَّانِيَّةِ، وَالدَّعَوَاتِ الْمَأْثُورَةِ النَّبَوِيَّةِ، فَلَا بَأْسَ، بَلْ يُسْتَحَبُّ سَوَاءٌ كَانَ تَعْوِيذًا أَوْ رُقْيَةً أَوْ نَشْرَةً، وَأَمَّا عَلَى لُغَةِ الْعِبْرَانِيَّةِ وَنَحْوِهَا، فَيَمْتَنِعُ لِاحْتِمَالِ الشِّرْكِ فِيهَا.

যদি তাবীজের মত কাগজ লিখা হয়। রাসূল সাঃ এর বানী “এটি শয়তানী কর্ম” এর দ্বারা উদ্দেশ্য হল জাহেলী যুগে যদ্বারা চিকিৎসা করা হতো ও যার উপর নির্ভর করা হতো। আর যা কুরআনের আয়াত, আল্লাহর নাম, আল্লাহর সিফাত সম্বলিত, দুআয়ে মাসুরা হয়, তাহলে কোন সমস্যা নেই। বরং এটি মুস্তাহাব। চাই সেটি তাবীজ হোক, বা ঝারফুক হোক বা কাগজে লিখা হোক। আর যেসব ইবরানী ও অন্যান্য ভাষায় লিখা হয় তা নিষিদ্ধ। কারণ তাতে শিরকের সম্ভাবনা আছে। {মিরকাতুল মাফাতীহ-৮/৩৭৩, বর্ণনা নং-৪৫৫৩}

আল্লামা ইবনে আবেদীন শামী রহঃ উল্লেখ করেন-

إنَّمَا تُكْرَهُ الْعُوذَةُ إذَا كَانَتْ بِغَيْرِ لِسَانِ الْعَرَبِ، وَلَا يُدْرَى مَا هُوَ وَلَعَلَّهُ يَدْخُلُهُ سِحْرٌ أَوْ كُفْرٌ أَوْ غَيْرُ ذَلِكَ، وَأَمَّا مَا كَانَ مِنْ الْقُرْآنِ أَوْ شَيْءٍ مِنْ الدَّعَوَاتِ فَلَا بَأْسَ بِهِ

নিশ্চয় নিষিদ্ধ তাবীজ হল যা আরবী ছাড়া অন্য ভাষায় লিখা হয়, বুঝা যায় না তাতে কি আছে? অথবা যাতে জাদু, কুফরী ইত্যাদি কথা থাকে। আর যেসব তাবীজে কুরআন বা দুআ সম্বলিত হয় তা ব্যবহারে কোন সমস্যা নেই। {ফাতওয়ায়ে শামী-৬/৩৬৩}

কথিত আহলে হাদীস ভাইদের কাছে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের মতামত

কথিত আহলে হাদীস নামধারী ভাইদের কাছেও গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিত্ব শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহঃ বলেন-

يَجُوزُ أَنْ يَكْتُبَ لِلْمُصَابِ وَغَيْرِهِ مِنْ الْمَرْضَى شَيْئًا مِنْ كِتَابِ اللَّهِ وَذِكْرُهُ بِالْمِدَادِ الْمُبَاحِ وَيُغْسَلُ وَيُسْقَى كَمَا نَصَّ عَلَى ذَلِكَ أَحْمَد وَغَيْرُهُ

বিপদগ্রস্ত বা অসুস্থ লোকদের জন্য কারি দ্বারা আল্লাহর কিতাব,আল্লাহর জিকর লিখে দেয়া এবং ধুয়ে পান করা জায়েজ।

তারপর এ আলোচনার শেষদিকে তিনি তাবিজাত বৈধ হওয়ার পক্ষে হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) এর একটি আছার পেশ করেন। ইবনে আব্বাস (রাঃ) কাগজের টুকরায় তাবিজ লিখে দিতেন,তা সন্তানসম্ভবা নারীদের বাহুতে বেঁধে দেয়া হত। {ফাতাওয়া ইবনে তাইমিয়া-১০/৩৭}

ফাতাওয়া ইবনে তাইমিয়া এর আরবী পাঠ!

عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: إذَا عَسِرَ عَلَى الْمَرْأَةِ وِلَادُهَا فَلْيَكْتُبْ: بِسْمِ اللَّهِ لَا إلَهَ إلَّا اللَّهُ الْعَلِيُّ الْعَظِيمُ لَا إلَهَ إلَّا اللَّهُ الْحَلِيمُ الْكَرِيمُ؛ سُبْحَانَ اللَّهِ وَتَعَالَى رَبُّ الْعَرْشِ الْعَظِيمِ؛ وَالْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ {كَأَنَّهُمْ يَوْمَ يَرَوْنَهَا لَمْ يَلْبَثُوا إلَّا عَشِيَّةً أَوْ ضُحَاهَا} {كَأَنَّهُمْ يَوْمَ يَرَوْنَ مَا يُوعَدُونَ لَمْ يَلْبَثُوا إلَّا سَاعَةً مِنْ نَهَارٍ بَلَاغٌ فَهَلْ يُهْلَكُ إلَّا الْقَوْمُ الْفَاسِقُونَ} . قَالَ عَلِيٌّ: يُكْتَبُ فِي كاغدة فَيُعَلَّقُ عَلَى عَضُدِ الْمَرْأَةِ قَالَ عَلِيٌّ: وَقَدْ جَرَّبْنَاهُ فَلَمْ نَرَ شَيْئًا أَعْجَبَ مِنْهُ فَإِذَا وَضَعَتْ تُحِلُّهُ سَرِيعًا ثُمَّ تَجْعَلُهُ فِي خِرْقَةٍ أَوْ تُحْرِقُهُ.

আল্লামা শাওকানী রহঃ নাইলুল আওতারে ঝারফুক ও তাবীজের অধ্যায়ে স্পষ্ট ভাষায় উপরোক্ত শর্ত সাপেক্ষের তাবীজকে জায়েজ লিখেছেন। দেখুন-নাইলুল আওতার-৮/২৪২।

সকল প্রকার তাবীজ নাজায়িজ হলে ঝাড়ফুঁকও না জায়েজ হয়

কথিত আহলে হাদীস ভাইয়েরা তাবীজ কবচকে আমভাবে না জায়িজ বলার জন্য যেসব হাদীস দলিল হিসেবে উপস্থাপন করে থাকে সেসব হাদীসের মাঝে একটি হাদীস হল-

إِنَّ الرُّقَى، وَالتَّمَائِمَ، وَالتِّوَلَةَ شِرْكٌ

অবশ্যই ঝাড়ফুঁক, তাবীজ ও জাদু শিরক। {সুনানে আবু দাউদ,হাদীস নং-৩৮৮৩, ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-৩৫৩০}

এ হাদীসে ঝাড়ফুঁককেও শিরক বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। তাহলে কি সকল প্রকার ঝাড়ফুঁক শিরক ও হারাম? আমাদের কথিত আহলে হাদীস ভাইয়েরাও তা স্বীকার করেন যে, কুরআন ও দুআয়ে মাসুরা দ্বারা ঝাড়ফুঁক জায়েজ। এছাড়া হলে নাজায়িজ। তাহলে এ হাদীস দিয়ে তাবীজ নিষিদ্ধের দলিল দেয়া কি ঠিক হবে? ঝাড়ফুঁক জায়েজের যেমন ব্যখ্যা দেয়া হয় যে, এখানে সর্বপ্রকার ঝাড়ফুঁক উদ্দেশ্য নয়, তেমনি আমরা বলে তাবীজ নিষিদ্ধতার হাদীসে সব ধরণের তাবীজ নিষিদ্ধের কথা উদ্দেশ্য নয়। যেমনটি বিজ্ঞ আলেমগণের মতমত উল্লেখ পূর্বক ইতোপূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে।

একটি হাস্যকর দলিলের জবাবঃ

আমাদের কথিত আহলে হাদীস ভাইয়েরা সকল প্রকার তাবীজ হারাম সাব্যস্ত করার জন্য কিছু হাস্যকর দলিলের অবতারণা করে থাকেন। তার মাঝে একটি তারা কুরআন ও হাদীসের সেসব আয়াত ও হাদীস উপস্থাপন করে থাকেন, যাতে তাওয়াক্কুল তথা ভরসা একমাত্র আল্লাহর উপর করতে বলা হয়েছে। সেই সাথে সব কিছু করার ক্ষমতা আল্লাহর উপরই ন্যস্ত মর্মে বক্তব্য এসেছে।

এসব আয়াত ও হাদীস উপস্থাপন করে তারা বলতে চান যে, তাবীজের উপর ভরসা করা মানে আল্লাহর সাথে শিরক করা তাই তা হারাম।

কিন্তু আমাদের কথিত আহলে হাদীস ভাইয়েরা ভরসা করা ও ওসীলা গ্রহণের অর্থ না জানার কারণে এমন বিভ্রান্তিতে নিপতিত হয়েছেন মূলত।

আল্লাহ ছাড়া অন্য কিছুর ভরসা করে মুক্তি বা আরোগ্য কামনা শিরক এর মাঝে কোন দ্বিমত নেই। কিন্তু মূল ভরসা আল্লাহর উপর রেখে ওসীলা গ্রহণ করা জায়েজ এটা সর্বজন স্বীকৃত কথা। যদি বলা হয় যে, ওসীলা গ্রহণ জায়েজ নয়। তাহলে অসুখ হলে অষুধ খাওয়া কি করে জায়েজ হয়? এ্ক্ষেত্রেতো একই বিষয় আসছে যেমনটি তাবীজের ক্ষেত্রে বলা হচ্ছে।

এখানে যদি বলেন যে, ভরসা আল্লাহর উপর, আর বড়ি বা চিকিৎসা কেবল ওসীলা মাত্র, তাই তা নাজায়েজ নয়। তাহলে তাবীজের ক্ষেত্রে কেন এ অহেতুক প্রশ্ন তোলা?

সুতরাং বুঝা গেল যে, ডাক্তারী বড়িকে আরোগ্যের মূল কারণ সাব্যস্ত না করে আল্লাহর উপর ভরসা করে ওসীলা হিসেবে যেমন তা ব্যবহার করা বৈধ, তেমনি প্রথমে উল্লেখিত শর্তসাপেক্ষে তাবীজ কবচও জায়েজ। না জায়েজের কোন কারণ নেই।

والله اعلم بالصواب

উত্তর দিয়েছেনঃ ইসহাক মাহমুদ, মুফতী ও মুহাদ্দিস, জামিআ মুহাম্মাদিয়া আরাবিয়া, মোহাম্মদপুর।

 

ইসলামে তাবিজ জায়েজ হলেও কেন তাবিজ থেকে দূরে থাকা উত্তম?

হানাফি ফিকহের ফতোয়া অনুযায়ী তাবিজ জায়েজ। তবে কিছু শর্ত আছে। কি শর্ত? ইসলামে কয়েক প্রকার তাবিজ জায়েজ নয়। যথা-

  1. কুরআন হাদীস দ্বারা ঝাড়ফুক দেয়া ছাড়া শুধু তামা, পিতল বা লোহা দ্বারা তাবিজ বানিয়ে লটকিয়ে রাখা। অর্থাৎ শুধু এগুলো লটকানো দ্বারাই রোগমুক্ত হওয়া যাবে বিশ্বাস করে তা লটকানো নাজায়িজ।
  2. এমন তাবিজ যাতে আল্লাহর নাম, কুরআনের আয়াত, দুআয়ে মাসূরা ব্যতিত শিরকী কথা লিপিবদ্ধ থাকে।
  3. তাবীজকে মুয়াসসার বিজজাত তথা তাবীজ নিজেই আরোগ্য করার ক্ষমতার অধিকারী মনে করে তাবিজ লটকানো। এ বিশ্বাস জাহেলী যুগে ছিল, বর্তমানেও ইসলাম সম্পর্কে কিছু অজ্ঞ ব্যক্তিরা তা মনে করে থাকে।
  4. যে কালামের অর্থ জানা যায় না এমন শব্দ দ্বারা তাবিজ লেখা।
  5. আরবী ছাড়া অন্য কোন ভাষায় তাবিজ লেখা।

(সোর্সঃ আহলেহক মিডিয়ার ফতোয়া)

জায়েজ শুনেই আমরা লাফ দিয়ে উঠি। জায়েজ হলেই কি আমল করা শুরু করব? তালাকও তো জায়েজ। এখন কি গনহারে তালাক দেয়া শুরু করব?

কুরআন আল্লাহর বানী। এর তেলাওয়াত করা আল্লাহর সাথে কথোপথনেরই নামান্তর। অনেক উত্তম ইবাদত। কুরআন কি তাবিজ বানিয়ে ঝুলানোর জন্য নাযিল হয়েছে? এটা কি কুরআনুল কারীমের অবমাননা নয়? নিজের অবস্থান এক পাশে রেখে একটু চিন্তা করি ঠিকমত।

১। অনেক তাবিজ সরাসরি যাদু। এতে কুরআন হাদিসের কোন চিহ্নই নেই। যার কোন রোগ নেই সে যখন এই তাবিজ নিজের গায়ে লাগায় এর মানে হল সে নিজেকে যাদুগ্রস্থ করল। আর যদি রোগ থেকেও থাকে সে নতুন যাদুতে আক্রান্ত হল।
২। অনেক তাবিজ কুরআনের আয়াত আছে। কিন্তু আয়াতের আগে কোন সংখ্যা লেখা, কোন কোড লেখা। সেই কোডের অর্থ করলে হয়ত এমন দাঁড়াবে, “আমি নিচের কথাগুলো বিশ্বাস করি না।” মানে তাবিজ যদি আয়াতুল কুরসী লেখা থাকে তাহলে মানে দাঁড়ায় আমি আয়াতুল কুরসিতে বিশ্বাস করি না। (নাউযুবিল্লাহ) জেনে বুঝে যদি কেউ আয়াতুল কুরসী বিশ্বাস না করে তাহলে সে কি মুসলমান থাকবে? (বিজ্ঞ মুফতীর থেকে জেনে নিবেন)
৩। আরবী সংখ্যাগুলো চিনে নিবেন। অনেক তাবিজে দেখবেন শুধু সংখ্যা লেখা ঘর করে। পুরনো আমলের কুরআন শরীফের পিছনেও দেখবেন এমন সংখ্যা লিখে অমুক সুরার নকশা। এসব অর্থহীন সংখ্যা নিঃসন্দেহে জায়েজ নাই। বরং জ্যোতিশীরা এসব সংখ্যাতত্ত্ব নিয়ে মাথা ঘামায়। ইসলাম জ্যোতিশীদের সম্পর্কে কি বলে তা একটু খুজে দেখেন।
৪। মুখ দেখেই অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যত বলে দিতে পারে আর পাথরের আংটি / তাবিজ বিক্রি করে। বসুন্ধরায় অফিস। সিনেমার স্টাররা তার বিজ্ঞাপনে অভিনয় করে। কোথায় আছে এইগুলো ইসলামে?
৫। এমন তাবিজ পাবেন যা লেখা হয়েছে মহিলাদের নাপাক রক্তে। শয়তানের নামে বলি দেয়া কোন প্রানীর রক্তে। এমন রক্তে কুরআনুল কারীমের আয়াত লেখা কত বড় কুফরি হতে পারে?
৬। তাবিজ পাবেন সবই ঠিক আছে। কুরআনের আয়াত লেখা হয়েছে, কালিও পবিত্র। নাকের কাছে ধরলে প্রস্রাবের গন্ধ। মানে কুরআনের আয়াত লিখে এরপর এর উপর কবিরাজ প্রস্রাব করেছে। (নাউজুবিল্লাহ)
৭। তাবিজে আয়াতুল কুরসী বা কোন কুরআনের আয়াত লেখা কিন্তু ফাকে ফাকে জিবরাইল, মিকাঈল বা কোন শয়তানের নাম লেখা। এটা কি আল্লাহর সাথে শিরক নয়?
৮। নামায, রোযা, কুরআন তেলাওয়াতের খবর নেই। তাবিজ ঝুলিয়ে দিলেন বাহুতে/গলায়/কোমরে দিলেন। কি ভাবছেন, হয়ে গেল? এতই সহজ?
৯। আপনার সামনেই তাবিজে কিছু পড়ে ফু দিয়েছে, সুতায় গিট দিয়েছে। কুরআনের আয়াত পড়েছে নাকি অন্য কিছু পড়েছে আপনি জানলেন কিভাবে? আপনি কিভাবে শিউর হলেন উনি কুরআনের আয়াত পড়েছেন?
১০। কি বলেন ভাই এত পরহেজগার লোক, ধোকা দিবে? না, পরহেজগার লোক হলে ধোকা দিবে না। কিন্তু পরহেজগার কিনা বুঝবেন কি করে? লম্বা দাড়ি, টুপি, লম্বা জুব্বা কি পরহেজগারীর মাপকাঠি? অনেক যাদুকর আছে নিজের স্বার্থসিদ্ধির জন্য বেশ ধরে। নামায পড়ে কিন্তু অযু করে না। ইনসেস্টসহ হেন কোন কুকর্ম নেই যা করে না। যে যত বেশি কুকর্ম করতে পারবে সে যাদুর জগতে তত উপরে চলে যাবে। তার যাদু তত কার্যকর হবে। যে যাদু করে সে কি ইসলামের গন্ডি থেকে বের হয়ে যায় নি?
১১। তাবিজ খুলতে নিষেধ করে, ভয় দেখায় তাবিজ খুললেই নাকি চোখ অন্ধ হয়ে যাবে। আসলে যে জাড়িজুড়ি ফাস হয়ে যাবে এই কারনে খুলতে না করে।
১২। কিছুদিন ব্যবহারের পর তাবিজ হারিয়ে যায়। আবার নতুন তাবিজ নেয়া লাগে। ব্যবসা কিভাবে টিকবে না হারালে?
১৩। পূর্নিমার সময় যেতে হবে, অমাবস্যার সময় যেতে হবে, সন্ধ্যার পর যেয়ে তাবিজ আনতে হবে, অমুক দিন যেতে হবে ইত্যাদি ইত্যাদি। ইসলামে এমন কিছু আছে? কোনোদিন নিজেকে প্রশ্ন করেছেন?
ফিতনার আশংকায় সহশিক্ষা পছন্দ করেন না। মানুষ শিরক করছে, কুফরীতে লিপ্ত হছে তবুও এমন তাবিজের বিরুদ্ধে, সকল তাবিজের বিরুদ্ধে কথা বলেন না। কিভাবে পারেন আপনারা? সহশিক্ষার ফিতনার চেয়ে তাবিজের ফিতনা ছোট হয়ে গেল?

 

✅ তাবিজের পরিবর্তে কি করবেন?

১। যে যতটুকু কুরআন পারেন, যতটুকু দুআ পারেন প্রতিদিন তেলাওয়াত করবেন সুস্থতার নিয়তে, আল্লাহ তায়ালা যেন শয়তান থেকে বাচিয়ে দেন এই নিয়তে। আর বেশি বেশি দুআ’ করবেন। আর নির্ধারিত দুআ’গুলো পারলেতো খুবই ভাল।
২। মা-বাবার গাফলতের কারনে সন্তান আক্রান্ত হয়। কাজেই নিজের সন্তানকে যদি সুরক্ষিত রাখতে চান তাহলে পরিবারে দ্বিনি পরিবেশ কায়েম করুন। নামায, পর্দা, হালাল রুজিতে মনোযোগি হোন। সন্তানকে নামায শিক্ষা দিন।
৩। ছোট থেকে বাচ্চাদের দুআ’-দরুদ মুখস্থ করাতে ট্রাই করুন। যতদিন মুখস্থ না করতে পারবে ততদিন দুআ’ পড়ে সকাল, সন্ধ্যা ও ঘুমের আগে সারা গায়ে ফু দিন। আল্লাহর কাছে দুআ’ করবেন। মনে রাখবেন, সন্তানের জন্য পিতার দুআ’ কবুল। আল্লাহই কি যথেষ্ঠ নন?
৪। নিজের পানি পড়া নিজেই তৈরি করুন। সুরা ফাতিহা, আয়াতুল কুরসী, চার কুল সহ অন্য যেসব সুরা পারেন সেগুলো পরে নিজেই পানিতে ফু দিয়ে নিজেই খান, নিজের বাচ্চাকে খাওয়ান। আর হুজুরের কাছে গেলে হুজুর কি পড়ে সেটা যেন আপনাকে শুনিয়ে পড়ে এই অনুরোধ করবেন। বা হুজুর থেকে জেনে নিবেন কি কি আয়াত পড়ে। সেগুলো পড়ে নিজেই পানি তৈরি করে ব্যবহার করতে পারেন।
৫। মনে রাখবেন, ইসলামে সবকিছু স্বচ্ছ, পরিষ্কার। লুকোচুরি বা চুপিচুপি কিছু নেই। কেউ লুকোছাপা করতে চাইলে বুঝে নিবেন ঘাপলা আছে। দূর থাকবেন।
৬। মোদ্দা কথা, তাবিজ জায়েজ হলেও তাবিজ ব্যবহার করব না। কুরআন, সুন্নাহ অনুযায়ি বিভিন্ন আমল করব, দুআ’ করব। জায়জের ফাঁদে পড়ে অজ্ঞতাবশত শিরক/কুফরিতে লিপ্ত হয়ে নিজের ঈমান-আমলকে হুমকির মুখে ফেলব না, এরচেয়ে সমস্যা নিয়ে মরে যাওয়া ভাল, আল্লাহর কাছে প্রতিদান পাওয়া যাবে। ভুল-ত্রুটি ক্ষমা করে আল্লাহ তায়ালা আমাকে প্রথমে আমল করার তৌফিক দিন, এরপর অন্যদের, আমীন।

==========================================================================

 

    Islami Dawah Center Cover photo

আইডিসির সাথে যোগ দিয়ে উভয় জাহানের জন্য ভালো কিছু করুন!

 

আইডিসি এবং আইডিসি ফাউন্ডেশনের ব্যপারে  জানতে  লিংক০১ ও লিংক০২ ভিজিট করুন।

আইডিসি  মাদরাসার ব্যপারে বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন। 

আপনি আইডিসি  মাদরাসার একজন স্থায়ী সদস্য /পার্টনার হতে চাইলে এই লিংক দেখুন.

আইডিসি এতীমখানা ও গোরাবা ফান্ডে দান করে  দুনিয়া এবং আখিরাতে সফলতা অর্জন করুন।

কুরআন হাদিসের আলোকে বিভিন্ন কঠিন রোগের চিকিৎসা করাতেআইডিসি ‘র সাথে যোগাযোগ করুন।

ইসলামিক বিষয়ে জানতে এবং জানাতে এই গ্রুপে জয়েন করুন।